জীবন্ত গল্প, কথাও বলে মানুষের মত

Slider বিচিত্র সাহিত্য ও সাংস্কৃতি

গল্প কথা বলে এটা সবাই জানে। কিন্তু গল্প মানুষের মত কথা বলে এটা অবিশ্বাস্য। আজকে বলব একটি জীবন্ত গল্প, যে গল্প, কথা বলে মানুষের মত।

কোন কাহিনীকে গল্প আকারে লিখা হয় এটাই প্রচলিত রীতি। বড় সাহিত্য রচনার মূল ধারার একটি সম্ভবত গল্প। আমি সাহিত্য রচনা করতে পারি না, তাই সঠিকভাবে বলতেও পারব না। তবে এই টুকু বলতে পারব, গল্প থেকে বড় বড় ইভেন্ট তৈরী হয়। গল্প থেকে সিনেমা হয়, গল্প থেকে বড় আকারের সাহিত্য রচনা হওয়ার সংস্কৃতি চিরায়ত। এটা নতুন কোন বিষয় নয়। তাই সাহিত্য রচনার মূল মন্ত্র হতে পারে গল্প। বলতে বাঁধা নেই যে, একটি গল্প থেকে হতে পারে কাব্য, মাহকাব্যও বটে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাহিত্য সৃষ্টির মূলমন্ত্র কোন না কোন গল্প। গল্প থেকেই জন্ম নিয়েছে বড় বড় কালজয়ী সাহিত্যিক ইভেন্ট যা মানুষ মনে রাখবে অনন্তকাল।

এমন সময় ছিল যখন মানুষ স্বজনের সাথে কথা বলত চিঠি বা পোষ্ট কার্ডের মাধ্যমে। ইচ্ছা করলেই সরাসরি কথা বলার স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন ছিল সৃষ্টির আদিকাল থেকেই। বিশ্বায়নের যুগে মানুষ যা পাচ্ছে, তা কোন দিন কল্পনাও করতে পারেনি। স্বপ্ন বাস্তব হচ্ছে এটাই সত্য।

আজকের এই সময়ে দাঁড়িয়ে বলা যায়, মানুষ যা কল্পনা করেনি কখনো, তা এখন সামনে এসে দাঁড়ায়। বিশ্বের যে কেউ যে কোন স্থান থেকে যে কারো সাথে কথা বলতে পারে, চোখ দেখা-দেখি করতে পারে। এমনকি জীবন যাত্রার প্রতিটি মূহূর্তও পরস্পর-পরস্পরের সাথে শেয়ার করতে পারে প্রত্যক্ষভাবে। এটা প্রযুক্তির উন্নতি। সারা বিশ্বের মানুষ এখন সবাই সবার সামনে। স্বজন বলতে এখন আর আপন বলয়েই শুধু নেই, সকল বলয়েই স্বজন বিদ্যমান। ফলে পরিচিতজন ছাড়াও অপরিচিত কেউও হতে পারে আপন জনের চেয়ে বেশী বা ঘনিষ্ঠজন।

গাজীপুর জেলার স্থায়ী বাসিন্দা সাংবাদিক, লেখক ও কবি শাহান সাহাবুদ্দিন। তিনি বই লিখেন। গল্প লিখেন, গণমাধ্যমে রিপোর্টও করেন। সব সৃষ্টিতেই তার একটি নতুন আমেজ লেগে থাকে, যাকে বলে অন্য রকম একটি সৃষ্টি। সৃষ্টির নতুন স্বাদ শাহানের লেখায় সব সময়ই থাকে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সমাজের সকল শ্রেনীর সাথে তার একটি উন্নত যোগযোগ গড়ে উঠেছে। এই যোগাযোগের সূত্রে পরিচয় হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মৌসুমীর সাথে। রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই মেয়ে ইতোমধ্যে আইন পাশ করে এখন শিক্ষানবীশ আইনজীবী হিসেবে রাজশাহী আদালতে কাজ করছেন। শাহান-মৌসুমী দম্পতির একটি মাত্র সন্তান। নাম গল্প। বয়স তিন বছর।

সম্প্রতি ব্যাক্তিগত কারণে রাজশাহী গিয়েছিলাম। কাজ শেষে ঢাকায় ফেরার কয়েক ঘন্টা আগে গল্পকে দেখতে গেলাম। জন্মের পর পর গল্পকে দেখা হয়নি। আমার ব্যস্ততা আমাকে বিচ্ছিন্ন করেছিল গল্প থেকে। তাই দেখা হওয়ার সাথে সাথে গল্পের কাছে ক্ষমা চেয়েছি যদিও, কিন্তু ক্ষমা করার মত সময় গল্পের নেই। কারণ, কোনটা ভুল আর কোনটা ক্ষমা, তা আঁচ করার সময় হয়নি তার এখনো। বলতে পারি, গল্পের সময় নেই আপাতত, আমাকে ক্ষমা করার। তাই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য গল্পের কাছে ক্ষমার আবেদন করে আসলাম। সৃষ্টিকর্তা যখন বলবেন তখন গল্প ভেবে দেখবে, আমার ক্ষমার আবেদন।

প্রায় এক যুগ ধরে শাহান সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আমার পরিচয়। পরিচয়ের প্রথম থেকেই তিনি আমাকে বড় ভাইয়ের মত সম্মান করেন। তার স্ত্রী মৌসুমীও আমাকে বড় ভাইয়ের মত সম্মান করেন। সম্মানের প্রতিযোগিতায় শাহান সাহাবুদ্দিন পাশ করতে পারেনি। পাশ করে গেছেন মৌসুমী। তাই এই দম্পতির একমাত্র সন্তান গল্পের চাচা না হয়ে মামা হয়ে গেছি আমি। জীবনে প্রথম গল্পের নানু বাড়ি গিয়ে দেখলাম গল্পের মা, নানা, নানু, খালা ও মামা সহ পরিবারের সকলেই সম্ভ্রান্ত বংশীয়। রাজশাহীর খাঁটি নাগরিক হিসেবে অত্যন্ত আদুরে পরিবার গড়ে তুলেছেন তারা। এই পরিবার অল্প সময়েই মানুষকে কাছে টেনে নিতে পারে, এটাও প্রমান হয়ে গেলো।

রাজশাহীর সাংস্কৃতিক আবহে গড়ে উঠা এই পরিবার মানুষকে ভালবাসতে জানে, মনের মত করে। হয়ত ভালবাসা দিতে গিয়ে আমি পিছিয়ে পড়েছি এই কারণে যে, ভালবাসা শুধু নিয়েছি স্বার্থপরের মত কিন্তু দিতে পারিনি। আর এই জন্যই, ছোট শিশু গল্পের কাছেই ক্ষমা চাইতে হয়েছে। ক্ষমাও পাই নি, কারণ গল্পের আদালত বসতে অনেক বাকী। তাই ভালবাসায় আমি হেরে গেছি।

দেখতে খুব দুষ্ট ছেলে গল্প। ফুটফুটে চেহারার এই শিশুটির গল্প আর বলতে হবে না, কারণ তার নামই গল্প। তার কর্মব্যস্ততা বলে দেয়, গল্প একেবারেই একটি মহাকাব্যের সূত্রপাত করতে যাচ্ছে। ছোট সময় যে শিশুরা দুষ্ট হয়, বড় হলে তারা মেধাবী হয়, এটা প্রবাদই শুধু নয় প্রচলিত বাস্তবতাও বটে।

আশির্বাদ রইল, এই গল্প যেন একদিন বড় মহাকাব্যের জন্ম দিতে পারে। সেই দিন হয়ত আমি নাও থাকতে পারি। তাই আজকেই আগাম দোয়া দিয়ে গেলাম। অপরিচিত দুই জন নারী পুরুষকে একটি শান্তির নীড় তৈরীতে সেতুবন্ধন হিসেবে এই গল্প যেন জীবনে অনেক বড় ও ভাল মানুষ হয়, প্রার্থনা রইল। এই গল্প যেন একদিন মহাকাব্যের জন্ম দিতে পারে, সৃষ্টিকর্তা সেই তৌফিক দান করুন, আমিন।

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *