বাস্তবায়িত হচ্ছে না ‘তিন বিঘা করিডোর এক্সপ্রেস’

Slider রংপুর

হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট: বুড়িমারী স্থলবন্দর-ঢাকা রুটে চলাচলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ‘তিন বিঘা করিডোর’ নামের একটি আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর কথা ছিল।

কিন্তু ৮ বছরেও ট্রেনটি চালু করতে পারেনি রেলপথ মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেল মন্ত্রণালয় থেকে কার্যকর সিদ্ধান্ত না আসাতেই ট্রেনটি চালু করা যাচ্ছে না। আর এ সরকারের মেয়াদে তা বাস্তবায়নের সম্ভাবনাও নেই।

২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই ট্রেনটি চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত কালেক্টরেট মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ট্রেনটি চালুর বিষয়ে তিনি তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। কিন্তু তিন বিঘা করিডোর এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি সেই সরকারের মেয়াদে চালু করা হয়নি।

এই মেয়াদেও ট্রেনটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ট্রেন চালু না হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ‘তিন বিঘা করিডোর’ এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু করা হচ্ছে না। নতুন কোচ ও লোকোমোটিভ ক্রয়ের পর তা দেশে আনা হলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করে দেখা যেতে পারে।

দশম জাতীয় সংসদের রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লালমনিরহাট সফর আয়োজন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত ‘তিন বিঘা করিডোর’ এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেনটি চালুর অনুরোধ করেন লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় চার সংসদ সদস্য।

রেলমন্ত্রী সেসময় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা আমার জন্য ফরজ।’

ঢাকায় ফিরে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করার ঘোষণা করেন তিনি। দশম সংসদের মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে, অথচ এখন পর্যন্ত তিনি কোনও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেননি।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় সদর দপ্তরের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজ্জাত হোসেন বলেছেন, ‘শুনেছি নতুন কোচ ও লেকোমোটিভ কেনা হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত তিন বিঘা করিডোর এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু করা হবে। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তা সম্ভব নয়।’

দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন ও লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি শেখ আব্দুল হামিদ বাবুর ভাষ্য, ‘একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর সবার আগে সেই কাজটি বাস্তবায়ন হওয়া জরুরি। অথচ আমরা জাতি হিসেবে সেই সংস্কৃতি চালু করতে পারিনি। গত ৮ বছরে হয়নি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন করি তিনি খুব শীঘ্রই ট্রেনটি চালুর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন।’

লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজার রহমানের জানান, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত তিন বিঘা করিডোর আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি বুড়িমারী স্থলবন্দর-ঢাকা রুটে চালানোর জন্য অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে।

আমরাও ট্রেনটি পরিচালনা করতে প্রস্তুত। সেটি পুরাতন রেক ও লোকোমোটিভ দিয়ে পরিচালনা করা হবে কি না, সে ব্যাপারেও রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে কোন নির্দেশনা পাইনি।’লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট (অবঃ) মোতাহার হোসেন এমপি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে রেলপথ মন্ত্রণালয় কালক্ষেপণ করছে।

এই বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রীকেসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লালমনিরহাট নিয়ে আসা হয়েছিল। একটি নির্দেশনা দিলেই পুরাতন রেক দিয়ে হলেও তিন বিঘা করিডোর এক্সপ্রেস ট্রেনটির পরিচালনা শুরু করা যেত। কিন্তু তিনি কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *