মি-টু আন্দোলনের মুখে এম জে আকবরের পদত্যাগ

Slider সারাবিশ্ব

ঢাকা: যৌন হয়রানির অভিযোগের মুখে পদত্যাগ করলেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। তিনি সম্পাদক থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকজন নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে প্রথম এ অভিযোগ উত্থাপন করেন সাংবাদিক প্রিয়া রামানি। আকবর নাইজেরিয়া সফর থেকে দেশে ফেরেন সোমবার। প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মানহানি মামলা করেন।

এর পরই আকবরের বিরুদ্ধে অন্য ২০ জন নারী সাংবাদিক আদালতে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত বলে একটি যৌথ বিবৃতি দেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও দ্য হিন্দু।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতজুড়ে যখন তোলপাড় চলছে তখনই গতকাল দিনশেষে ভারতীয় মিডিয়ায় প্রধান খবর হয়ে আসে এম জে আকবর পদত্যাগ করেছেন। তিনি পদত্যাগপত্রে বলেছেন, যেহেতু আমার ব্যক্তিগত সক্ষমতা অনুযায়ী আদালতে আইনের কাছে ন্যায়বিচার চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাই আমি দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করাকে যথাযথ বলে মনে করেছি এবং আমার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এবং তা করবো আমার ব্যক্তিগত সক্ষমতা দিয়ে। তাই আমি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করার জন্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আমাকে দেশের সেবা করার জন্য যে সুযোগ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দিয়েছিলেন তার জন্য তাদের প্রতি আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।

অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত প্রথম ভারতে মি-টু আন্দোলন শুরু করেন। তিনি অভিযোগ করেন ১০ বছর আগে একটি ছবির শুটিংয়ের সময় তাকে যৌন হয়রানি করেন সহ-অভিনেতা নানা পাটেকর। এরপর থেকেই ভারতে শুরু হয় মি-টু আন্দোলন। এ আন্দোলনে এখন পর্যন্ত এম জে আকবরের পদত্যাগই সবচেয়ে বড় ঘটনা। এ আন্দোলন রাজনীতি থেকে শুরু করে ব্যবসা, চলচ্চিত্র সহ সর্বমহলে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন অভিযোগের কথা ছাপা হচ্ছে ভারতের মিডিয়ায়।

এম জে আকবরের বয়স এখন ৬৭ বছর। তিনি এক সময় দ্য টেলিগ্রাফ ও দ্য এশিয়ান এইজ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ওই সময়ে তিনি প্রিয়া রামানি নামে একজন নারী সাংবাদিককে যৌন নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করেন প্রিয়া নিজে। এম জে আকবর তখন ছিলেন নাইজেরিয়া সফরে। গত সোমবার তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করেন। এমন অভিযোগে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেন। পরে প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে মানহানির ফৌজদারি মামলা করেন। নিয়োগ করেন ৯৭ আইনজীবী। প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে মামলায় এম জে আকবর দাবি করেন তার সুনাম নষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে বানোয়াট অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। আকবর হুমকি দেন অন্য যেসব নারী তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনেছেন তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করবেন তিনি।

মামলার খবরে প্রিয়া রামানি বলেন, তিনি প্রস্তুত। তার প্রধান হাতিয়ার হলো সত্য ও চরম সত্য। সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়া রামানির পাশে দাঁড়িয়ে যান ২০ নারী সাংবাদিক। তারা আকবরের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার ঘোষণা দিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি দেন। এর মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক মীনাল বাঘেল, মনিশা পাণ্ডে, তুশিতা প্যাটেল, কনিকা গাহলুট, সুপর্ণা শর্মা, রমোলা তালওয়ার বাদাম, হোইহনু হাউজেল, আয়েশা খান, রেশমু চক্রবর্তী, কুশালরানি গুলাব প্রমুখ। আরো একজন সাংবাদিক যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি হলেন- ডেকান ক্রনিক্যালের ক্রিস্টিনা ফ্রাঁসিস। এর আগে যৌন হয়রানির অভিযোগ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর এম জে আকবরের পদত্যাগ দাবি করে বিরোধী রাজনীতিকরা। সংবাদ সম্মেলন করেন কংগ্রেস মুখপাত্র এস জয়পাল রেড্ডি। তাতে তিনি বলেন, আমি মনে করি এম জে আকবরের উচিত সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা দেয়া অথবা পদত্যাগ করা। তার সঙ্গে কাজ করেছেন এমন দায়িত্ববান সাংবাদিকরা যখন তার বিরুদ্ধে এত গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তখন তিনি কি করে মন্ত্রী থাকতে পারেন? এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। আকবরের এ ঘটনায় আমরা তদন্ত দাবি করি।

কমপক্ষে ১০ জন নারী সাংবাদিক এম জে আকবরের হাতে যৌন নির্যাতিত হয়েছেন বলে বিশদ বর্ণনা দেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক গজলা ওয়াহাব। তিনি দ্য ওয়্যার নিউজ পোর্টালে লিখেছেন, তার অফিসিয়াল ই-মেইলে রগরগে মেসেজ পাঠিয়েছেন এম জে আকবর। ১৯৯৭ সালে আকবর তাকে নিজের অফিসে ডেকে নেন। ডিকশনারি থেকে তাকে একটি শব্দের অর্থ খুঁজতে বলেন। ওই ডিকশনারিটি রাখা ছিল একটি ত্রিপায়ার ওপর। গজলা ওয়াহাব যখন তা থেকে ওই শব্দটির অর্থ খুঁজতে থাকেন তখন তার শরীরে হাত দেন আকবর।

একই রকম অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন সাংবাদিক সুতপা পাল। এম জে আকবরের অধীনে তিনি ইন্ডিয়া টুডে’তে কাজ করতেন। তখনকার ঘটনা তিনি শেয়ার করেছেন। সুতপা বলেছেন- তার দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন এম জে আকবর। এতে সম্মত হন নি তিনি। তাই তাকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *