বঙ্গোপসাগরে নিশ্চল মার্কিন নৌবহর, ঢাকায় হত্যা মিশন

Slider জাতীয়

mk-1418321204১২ ডিসেম্বর। একাত্তরের এইদিনে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলই কার্যত স্বাধীন। এ দিন বঙ্গোপসাগর থেকে ২৪ ঘণ্টার দূরত্বে মার্কিন সপ্তম নৌবহর নিশ্চল দাঁড়িয়েছিল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ততদিনে পাকিস্তানী বাহিনী পালিয়েছে। অধিকাংশ অঞ্চলই তখন কার্যত স্বাধীন হয়ে পড়ে। আর ঢাকার বিজয় নিশ্চিত করা তখন শুধু সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।

চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে পাক-হানাদারদের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন প্রায় নগ্ন হয়েই মাঠে নামে। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে এ দুটি দেশের শেষ চেষ্টা আবার ব্যর্থ হয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের দীর্ঘ বক্তব্যের পর অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। স্বাধীনতার পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় আরও এক ধাপ।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান টেলিফোন করে জেনারেল নিয়াজীকে আশ্বস্ত করেন, ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিক থেকে বন্ধুরা এসে পড়বেন। গুল হাসানের কাছ থেকে এ আশ্বাস শুনে ঢাকায় পাকিস্তানী সামরিক কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রতিরক্ষার আয়োজন নিরঙ্কুশ করতে ২৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালায়। এ সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এ দেশিয় দোসর আলবদর বাহিনী পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের আটক ও হত্যা শুরু করে।

অন্যদিকে চারদিকে তখন শুধুই মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়, আর পাক-হানাদারদের পরাজয়ের খবর। একাত্তরের এ দিনে গাইবান্ধা, নরসিংদী, সরিষাবাড়ী, ভেড়ামারা, শ্রীপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। ঢাকাবাসী এ সময় অভীষ্ট আনন্দ আর অজানা আশঙ্কার এক অদ্ভুত দোলাচলে সময় পার করছেন। স্বাধীনতার ওই মাহেন্দ্রক্ষণটি কখন আসবে সেই মুহুর্তটি দেখতে অধীর অপেক্ষায় ঢাকাবাসী।

এদিকে ঢাকা বিজয় করতে চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী ঘেরাও করে ফেলে। এ দিন বিকেলেই ভারতের চার গার্ডস ইউনিট ঢাকার ডেমরা ঘাটের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছে যায়। সূর্যাস্তের আগেই জামালপুর ও ময়মনসিংহের দিক থেকে জেনারেল নাগরার বাহিনী টাঙ্গাইলে প্যারাস্যুট ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়। এর ফলে ঢাকা অভিযানের সর্বাপেক্ষা সম্ভাবনাপূর্ণ পথের ব্যবহার সম্ভব হয়ে ওঠে।

দেশের বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলা ও যৌথবাহিনীর ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানী বাহিনী বিভিন্ন এলাকার ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে থাকে। নিজভূমির সার্বভৌমত্ব ও পৃথক পতাকার দুর্বার আন্দোলনের শেষ অধ্যায়ে পৌঁছে গেছে বীর বাঙালী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *