এ বছর গরু কেনা থেকে শুরু করে হাসিল পরিশোধ এবং কসাইয়ের মজুরি দেয়ার পর কোরবানির গোশতের মূল্য দাঁড়িয়েছে কেজি প্রতি প্রায় আটশ থেকে নয়শ টাকা। অথচ সেই গোশতই এখন হাত ঘুরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকা দরে।
ঈদুল আজহার কোরবানি শেষে রাজধানী জুড়ে চোখে পড়ছে মাংসের হাট। শহরের অলিতে-গলিতে অস্থায়ী এ বাজারে খুব কম দামে গোশত বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর লিংক রোড, সূত্রাপুর, ধোলাই খাল, খিলগাঁও, রামপুরা, মিরপুরের মূল সড়ক ও অলিগলিতে এ দৃশ্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। মূলত সকাল থেকে ভিক্ষুক এবং গরীব-দুস্থ মানুষেরা বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে যে গোশত সংগ্রহ করেছেন সেটাই তারা এসব স্থানে বিক্রি করছেন। নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের এ মাংস ক্রয় করতে দেখা গেছে। এছাড়া যারা কোরবানি দিতে পারেননি তারা সামর্থ্যমতো কমদামে বিক্রি হওয়া এসব গোশত কিনে ঘরে ফিরছেন।
এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন কিছু অসাধু মৌসুমী ব্যবসায়ীও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠাঁটারিবাজারের এক হালিম ব্যবসায়ী বলেন, দোকান থেকে গোশত কিনতে গেলে কেজি প্রতি কমপক্ষে ৪৮০-৫০০ টাকা লাগে। তাই এ সময় কমদামে কিছু গোশত সংগ্রহ করে রাখছি।
ঠিক একই কথা বললেন গেন্ডারিয়ার এক কাবাব ব্যবসায়ী। তিনি কাবাবের গোশত হিসেবে এগুলো সংগ্রহ করে রাখছেন।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব গোশতের দাম উঠানামা করছে। অর্থাৎ হাড়ের পরিমাণের ওপর নির্ভর করছে এসব গোশতের মূল্য। তাই কোথাও দুইশ’ টাকা কোথাও আড়াইশ’ টাকা। শিশুদেরও কোরবানির গোশত বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সূত্রাপুর লোহারপুলের সামনে এরকম এক গোশত বিক্রেতা বলেন, এসব গোশত রান্না করে খাওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। তার চেয়ে বরং ৩/৪ কেজি মাংস বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায় সেটা দিয়ে চার দিন সংসার চালানো যায়।
এদিকে, এসব গোশত মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছে চলে যাওয়ায় গোশতের মান প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে বিভিন্ন রকমের গোশত একত্রিত করে বিক্রি করা হচ্ছে কেজি দরে। অথচ ঠিকমতো সংরক্ষণ করা হয়নি এসব গোশত।
খুব সকাল থেকে ঘুরে ঘুরে গরীব-দুস্থ ও শিশুরা এসব গোশত বিভিন্ন বাসা থেকে সংগ্রহ করে একত্র করেন। দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও এগুলো সংরক্ষণে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। তাই এসব গোশত খাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। পুষ্টিবিদদের বক্তব্য, এসব গোশতে বিভিন্ন ধরনের জীবানু ও ব্যকটেরিয়া আক্রমণ করে। তাই এটা এড়িয়ে চলা উচিত।