ঢাকা: উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচার শুরু হলেও নির্বাচনের মাঠ ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। গ্রেপ্তার ও হয়রানির অভিযোগ উঠছে। আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়গুলোও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলছে। এসব আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো কার্যকর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। ফলে নির্বাচন কমিশনের প্রতি ভোটারদের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে এমন মত দিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন করে সুজন।
লিখিত বক্তব্যে সুজন জানায়, প্রথম থেকেই মামলা শুরু হয়েছে রাজশাহীতে। এখন সিলেটেও মামলা, গ্রেপ্তার ও হয়রানি শুরু হয়েছে। সিলেটে নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বরিশালে নাশকতার আশঙ্কা করেছে গোয়েন্দা বাহিনী। এসব ঘটনা ভোটারদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, তাঁরা অনেক ধরনের সন্দেহের দোলাচলেও রয়েছে।
লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সুজনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার। এতে বলা হয়, একজন সিটি মেয়র ও কয়েকজন সাংসদকে আচরণবিধি ভঙ্গ করে প্রচারে নামতে দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, সিভিল সার্জন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আচরণবিধি অমান্য করে প্রচার করছেন। মিছিল নিষিদ্ধ হলেও তিন সিটিতেই মিছিল করছেন প্রার্থী ও সমর্থকেরা। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করে সুজন। তাই সরকারের ইতিবাচক সাড়া না পেলে নির্বাচন আয়োজনে কমিশনকে অপারগতা প্রকাশের পরামর্শও দিয়েছে সুজন।
সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি কোথাও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দেখছি না। আচরণবিধি ভঙ্গ করে অনেকে প্রচারণায় নামছে। খুলনা-গাজীপুরে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হয়েছে, এতে নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা কমেছে।’
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, মাগুরা মডেলের পরে খুলনা মডেল। নতুন যে মডেলের দিকে যাচ্ছে, তা কি ভয়ের মডেল নাকি উদাসীনতার মডেল, তা ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে—এটা ব্যাখ্যার অযোগ্য, একধরনের বিশেষ প্রবণতা। জাতীয় নির্বাচনে এ ধারাবাহিকতা থাকলে তা খুব ভয়ের ব্যাপার। এ ছাড়া প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
প্রার্থীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে সুজন জানায়, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রাজশাহীর পাঁচজনের দুজন স্নাতকোত্তর ও তিনজন স্নাতক, বরিশালে সাতজনের একজন স্নাতকোত্তর, চারজন স্নাতক, একজনের এসএসসি ও একজন স্বশিক্ষিত, সিলেটে সাতজনের মধ্যে একজন স্নাতকোত্তর, দুজন স্নাতক, একজন এইচএসসি, একজন এসএসসি ও দুজন স্বশিক্ষিত।
রাজশাহীতে ২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত মেয়র ছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ওই সময়ে তাঁর আয় বেড়েছে ২৩০৮.১০ শতাংশ। কিন্তু পরের পাঁচ বছরে তাঁর আয় বেড়েছে ৩৩.২৯ শতাংশ। ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত মেয়র ছিলেন বিএনপির বর্তমান মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন। ওই সময়ে তাঁর আয় বেড়েছে ১৫১৮.৩৬ শতাংশ। ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সময়ে সিলেটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমেদ কামরানের আয় বেড়েছে ৬০.৭৩ শতাংশ। ওই সময়ের মেয়র ও বর্তমান বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর আয় বেড়েছে ৪৮ শতাংশ।