নৌকাকে সমর্থন, মানতে ‘নারাজ’ বরিশাল জাতীয় পার্টি

Slider বরিশাল


বরিশাল: বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজ দলের মেয়র প্রার্থীকে নৌকার মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য বলেছেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

তবে বরিশালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন বলেছেন, তিনি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানেন না। আর তিনি সরেও দাঁড়াবেন না।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় আজ বুধবার গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বরিশাল মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, একটি আধুনিক বরিশাল সিটি করপোরেশন বিনির্মাণ এবং দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে পল্লিবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এ সিদ্ধান্তে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে বিজয়ী করতে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

দলীয় প্রধানের এই নির্দেশ হাতে না পেলেও মৌখিকভাবে শোনার পরও আজ বুধবার বিকেলে ইকবাল হোসেন ও দলীয় নেতা-কর্মীরা নগরের কলাপট্টি, মরিচপট্টি বাজার রোড এলাকায় গণসংযোগ করেছেন।

দলীয় এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ইকবাল হোসেন বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত এখনো জানি না। সরে দাঁড়ানোর প্রশ্নেই ওঠে না। নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি।’

আর কেন্দ্রের এই নির্দেশের বিষয়ে বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও দলের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মহসিন উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনো পথ নেই। দলীয় চেয়ারম্যানের এমন একটি আদেশের কথা তাঁরা শুনেছেন। কিন্তু কোনো লিখিত চিঠি পাননি। তা ছাড়া চেয়ারম্যান এখন দিল্লি সফরে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরলে তাঁকে বাস্তব অবস্থা বোঝানো হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মহসিন উল ইসলাম বলছেন, মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সংগ্রহ, জমা ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার—সব কটি বিষয় দলের নির্দেশনা অনুযায়ী করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দল থেকে কোনো নির্দেশনা তাঁরা পাননি। তাঁরা দলের সিদ্ধান্ত বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে কথা শুনতে পেরেছেন, কিন্তু আনুষ্ঠানিক কিছু জানতে পারেননি।

মহসিন উল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের মাঠে শুরু থেকেই ছিলাম এবং ৩০ জুলাই পর্যন্ত মাঠে থাকব। আমাদের সব কেন্দ্রে এজেন্ট নিয়োগ করেছি। সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। এই মুহূর্তে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’

আজই ভারত সফর শেষ করে দলীয় চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ দেশে ফিরেছেন। এ সফরে এরশাদের সঙ্গে ছিলেন সুনীল শুভ রায়। তিনি আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত হলো জাতীয় পার্টির প্রার্থী সরে দাঁড়াবেন। এ সিদ্ধান্ত দ্রুতই প্রার্থীর কাছে পৌঁছাবে। মহাজোটের স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত।’

দলের প্রার্থী সরে না দাঁড়ালে দল থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান সুনীল শুভ রায়।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি জানার পর বরিশালে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ভোট গ্রহণের চার দিন আগে দলের চেয়ারম্যানের এই ঘোষণার পর নেতা-কর্মীরা হতবাক হয়েছেন

দলের নেতা-কর্মীদের কেন্দ্রের আদেশ না’মানার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমি হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেটিই চূড়ান্ত। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এরপরও যদি কেউ সিদ্ধান্ত না মানার ‘দুঃসাহস’ দেখান, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে না থাকা ইকবাল হোসেন এবারই প্রথম কোনো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নতুন ও তরুণ মুখ হিসেবে তিনি নির্বাচনী প্রচারে মাঠে বেশ সাড়াও তুলেছেন। পেশায় ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেনকে নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তাঁর আলোচনাও ভালো। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর ঋণসংক্রান্ত জটিলতায় প্রথমে তাঁর মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে তিনি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে জোরালোভাবে মাঠে নামেন।

বরিশালে জাতীয় পার্টি ততটা জনপ্রিয় নয়। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের তুলনায় জাতীয় পার্টি কম জনপ্রিয় বলে মনে করেন নির্বাচনী বিশ্লেষকেরা। এসব বিষয় মাথায় রেখে জাতীয় পার্টি নিজ দলের প্রার্থীকে নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিল কি না, সেটিও এখন বরিশালে আলোচনায় আছে।

এদিকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেনের প্রার্থিতা নিয়ে দলের একটি পক্ষে প্রবল বিরোধিতা রয়েছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকে বরিশালে দলটির সদর উপজেলার সভাপতি বশির আহমেদ সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু ইকবাল হোসেনের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি এখনো মাঠে রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *