বিএনপির গলার কাঁটা জামায়াত

Slider জাতীয়

095022_bangladesh_pratidin_bdp_bnp

২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী এখন বিএনপির গলার কাঁটা। দেশের ভিতরে ও বাইরে এ দলটিকে নিয়ে ব্যাপক চাপে রয়েছে বিএনপি।

তাদের দ্বন্দ্ব নতুন করে প্রকাশ্যে এসেছে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার আগে গত ২৭ জুন ২০-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে জামায়াতের প্রতিনিধিও ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জোটগতভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীকে সবাই সমর্থন দেবে। জামায়াতের প্রার্থী প্রত্যাহারের অনুরোধও জানানো হয় বৈঠকে।
জানা যায়, ওই বৈঠকে কিছু না বললেও পরবর্তীতে বেঁকে বসে জামায়াত। দলীয় প্রার্থী সিলেট জেলা আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি দলটি। এ নিয়ে সিলেট সিটি ভোটে অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপি।

এ ছাড়া বিএনপির আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিমও মাঠে। এই দুই প্রার্থীর জাঁতাকলে রয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র আরিফুল হক। তারা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ে তেমন কোনো বেগ পেতে হবে না বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জোটের শরিক দল ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, জাতীয় স্বার্থে জামায়াতের দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করা উচিত ছিল। এটা তারা ভুল করেছে। যেখানে বিএনপিই বিশাল ভোটব্যাংক নিয়ে এই সরকারের আমলে প্রার্থী দিয়ে টিকে থাকতে পারছে না, সেখানে জামায়াতের তো প্রশ্নই আসে না। সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০-দলীয় জোটের বৈঠকের এক পর্যায়ে জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুল হালিম জানান, সিলেটে মেয়র প্রার্থী দেওয়ার দাবি বিএনপি মহাসচিবকে জানিয়েছি। দেখি তারা কী করেন। এ সময় তার বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জোটের অন্য শরিক দলগুলো। এলডিপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, তিন সিটি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীই জোটের প্রার্থী। এর বাইরে প্রার্থী করা হলে জোটের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হবে। যার কারণে ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এ সময় তিনি জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের প্রতি জোটের স্বার্থে নিজেদের প্রার্থী না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। কিছুক্ষণ পরই দলের জরুরি বৈঠকের কথা বলে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান জামায়াত নেতা মাওলানা আবদুল হালিম। এরপর তারা দলীয় প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেন। এদিকে সিলেটে জামায়াতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবেন। তার প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো সুযোগ নেই। এতে জোটেরও ক্ষতি হবে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও ৫টি আসন দুই জোটের জন্য উন্মুক্ত ছিল। তখনো সমস্যা হয়নি। এটি পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়। আর মূলত জোট হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের জন্য, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য নয়। জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনেও পাশে নেই জামায়াত। জোটের অন্য শরিকদের সব কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা গেলেও জামায়াতের প্রতিনিধিরা ছিলেন দায়সারা গোছের। শুধু তাই নয়, এই সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে জোট বা বিএনপির যে কোনো কর্মসূচিতেই জামায়াতকে গা-ছাড়া ভাব দেখা গেছে। বিএনপি নেতারা অবশ্য বলছেন, বিগত চার বছর ধরে জামায়াত সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় দলের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অনায়াসে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন। এটাকে ভালো চোখে দেখছে না জোটের অন্য শরিক দলগুলো। বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানান, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক থাকুক—এটা ভারতসহ পশ্চিমা দেশগুলোও চায় না। কারণ, ভারতের ধারণা; এটা পাকিস্তানপন্থি দল। সম্প্রতি ভারত সফরকালে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ে কর্তাব্যক্তিদের সফরেও জামায়াতের প্রসঙ্গটি উঠে আসে। দিল্লি থেকে জানানো হয়, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চাইলে জামায়াতকে ছাড়তে হবে। তবে বিএনপি দিল্লিকে জানিয়েছে, জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কৌশলগত, আদর্শিক নয়। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের প্রতিক্রিয়াশীল অংশের মতামতে জামায়াতকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। ওই সময়েই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া নেতারা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ওই নির্বাচনে জয়লাভ করে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদকে মন্ত্রী বানানো হয়। এ নিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিএনপিতে এখন বলাবলি হচ্ছে, দেশে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জামায়াত-ই বড় বাধা। তারা যুদ্ধাপরাধীদের দল। তাই তাদের সঙ্গে থেকে কেউ ঐক্য করতে চাইছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *