সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলায় কোন প্রতিবেদন দাখিল হয়নি। তবে এ মামলায় সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার আসামি তানভীর আহমেদের জামিননামা দাখিল করা হয়েছে। সাগর-রুনীর ‘কথিত’ পারিবারিক বন্ধু তানভীর রহমান স্কলাসটিকা স্কুলের ডেপুটি ম্যানেজার ছিলেন। তাঁর কারাগার থেকে মুক্তি পেতে আর কোনো বাধা নেই।
আজ মঙ্গলবার এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের সহকারী পরিচালক পুলিশ সুপার ওয়ারেছ আলী সময় চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, তদন্ত এখনো চলছে। তদন্ত শেষে যথা সম্ভব দ্রুত আদালতে দাখিল করা হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে অপর মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৩০ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। প্রায় ১০ মাস ধরে তিনি মামলাটির তদন্ত করছেন। এর আগে গত ২ নভেম্বর, ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৩ আগস্ট এবং ২০ মার্চ এই চার দফায় মামলায় অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন। মামলাটিতে তিনি চতুর্থ কর্মকর্তা হিসেবে তদন্ত করছেন।
এদিকে এ মামলায় সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার আসামি তানভীর আহমেদের জামিননামা দাখিল করা হয়েছে। সাগর-রুনির ‘কথিত’ পারিবারিক বন্ধু তানভীর রহমান স্কলাসটিকা স্কুলের ডেপুটি ম্যানেজার ছিলেন। কারাগার থেকে মুক্তি পেতে আর কোনো বাধা নেই। গ্রেপ্তারের পর আদালতে হাজির করলে ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর বিচারক তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে পাঠায়। রিমান্ড শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।
একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি নিজামুল হক ও বিচারপতি নুরুল হুদা জায়গিরদার এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তানভীরের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন।
বিনা-বিচারে ছেলে কারাগারে আটক থাকার বিরুদ্ধে সহায়তা চেয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি তানভীরের বাবা মাহবুবুর রহমান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে আবেদন করেন। ওই আবেদন বিবেচনায় নিয়ে কমিশন ও কমিশনের চেয়ারম্যান বাদী হয়ে একটি রিট করেন।
ঢাকার মহানগর হাকিম এস এম আশিকুর রহমানের আদালতে তানভীরের জামিননামা দাখিল করা হলে ১০ হাজার টাকার মুচলেকায় তা দাখিলের অনুমতি দেন বিচারক।
সিএমএম আদালতের শেরে বাংলা নগর থানার সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউশন শাখার জিআরও উপপরিদর্শক হুমায়ুন কবির এ বিষয়টি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেন।
প্রসঙ্গত, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ৩৪ মাস পেরিয়ে গেলেও মামলায় প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ পর্যন্ত ২৯ টি তারিখ ধার্য হয়েছে। সবশেষে মামলার তদন্তের স্বার্থে গত ১১ নভেম্বর এ মামলায় গ্রপ্তোর হয়ে দুইবার রিমান্ডে নেয়া কারাগারে থাকা নিহত দম্পতির বাসার দুই নৈশপ্রহরী এনাম আহম্মেদ ওরফে হুমায়ুন কবির ও পলাশ রুদ্র পালকে তৃতীয় দফায় ফের দুই দিন করে রিমান্ডে নেন বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা।
ওই আবেদনে বলা হয়, পলাশ ঘটনার সময় অর্থাৎ রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ওই বাসায় প্রহরী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। আনুমানিক সকাল ৫টা থেকে সোয়া ৫টার দিকে অ্যাপার্টমেন্ট মালিক নূরুন্নবী কান্নার আওয়াজ পেয়ে এই প্রহরীকে ফোন করেছিলেন। পলাশ তখন নূরুন্নবীকে বলেছিলেন, কান্নার আওয়াজ অন্য অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শোনা গেছে। ‘প্রকৃতপক্ষে পলাশ সত্য গোপন করে এ তথ্য পরিবেশন করেন বলে তদন্তে জানা যায়। তা ছাড়া অন্য সাক্ষীদেরকে জিজ্ঞাসা করেও বেশ কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগকারী, তাদের নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহযোগী আসামিদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।’ এর আগেও বিভিন্ন সময় এদের পৃথকভাবে আটদিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
রিমান্ড শেষে ২০ নভেম্বর আসামিদের আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেলেও তদনে্তর স্বার্থে তা গোপন রেখে যাচাই বাছাই চলছে। আসামিদের কারাগারে আটক রাখা হোক।
২০১২ সালের ১০ অক্টোবর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের এক চিকিৎসককে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচ আসামি মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান অরুণ, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার দেখানো হয় রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির দারোয়ান পলাশ ও এনামকে। এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে সাতজন কারাগারে আছেন। আসামিদের প্রত্যেককে একাধিবার রিমান্ডে নেওয়া হলেও তাদের মধ্যে কেউই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।
২০১২ সালের বছর ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২ নম্বর হোল্ডিং এ ভাড়া বাসায় সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি নিজ ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরের দিন ভোরে তাঁদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনার পরের দিন নিহত রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরে বাংলানগর থানায় দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় এটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরের বার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর দায়িত্ব নেওয়ার পর শিগগিরই হত্যারহস্য উদ্ঘাটনের ঘোষণা দেন।
মূলত হত্যাকাণ্ডের ৩৪ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনটি তদন্ত সংস্থা এবং চারজন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়ে মামলায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।