রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জাপানের হার

Slider খেলা

124049_japan-belgium-liveblog
ঢাকা: তীরে এসে তরী ডুবলো জাপানের। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে এশিয়ান জায়ান্টরা। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে ইউরোপিয়ান পরাশক্তি বেলজিয়ামের বিপক্ষে দুই গোলে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি জাপান। গতরাতে রোস্তভ অ্যারেনায় দ্বিতীয় রাউন্ডের রোমাঞ্চকর ম্যাচে ৩-২ গোলে হার দেখে নীল সামুরাইরা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে চার মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে জাপান। ম্যাচে ফিরতে মরিয়া বেলজিয়াম পাঁচ মিনিটের দুই গোলে সমতায় ফেরে।

ইনজুরি সময়ে কাউন্টার অ্যাটাকে জাপানিজদের হৃদয় ভাঙেন নাসের চাদলি। আগামী ৬ই জুলাই কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হবে বেলজিয়াম। সামারা অ্যারেনায় রাতের প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোকে ২-০ গোলে হারিয়ে শেষ আটের টিকিট কাটে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। রাশিয়া বিশ্বকাপে এশিয়ার একমাত্র দল হিসেবে গ্রুপ পর্বের বাধা পার করে জাপান।

অঘটনের বিশ্বকাপে আরেকটি বড় অঘটন থেকে বাঁচলো বেলজিয়াম। গ্রুপ পর্বে শিরোপাধারী জার্মানিকে দিয়ে শুরু। দ্বিতীয় রাউন্ডে স্বাগতিক রাশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয় স্পেন। শেষ ষোলোতেই লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কান্নার রাত দেখে রাশিয়া বিশ্বকাপ।

খেলা শুরুর প্রথম মিনিটেই বেলজিয়ামের গোলমুখে শট নেয় জাপান। শিনজি কাগাওয়ার বাম পায়ের প্রচেষ্টা বারের ডান পাশ দিয়ে চলে যায়। ২৬ মিনিটের মাথায় গোলের হাত থেকে বেঁচে যায় জাপান। ড্রায়াস মার্টেন্সের ক্রস থেকে গোলপোস্টের ঠিক সামনে বল পেয়ে যান রোমেলু লুকাকু। পেছনে থাকা জাপানিজ ডিফেন্ডারের বাধায় শেষ পর্যন্ত ফিনিশিং টানতে পারেননি দুই ম্যাচে চার গোল করা এই তারকা স্ট্রাইকার। এর কিছুক্ষণ পরেই ইডেন হ্যাজার্ডের বুলেট গতির শট প্রতিহত করেন জাপানিজ গোলরক্ষক ইজি কাওয়াশিমা। ৩১ মিনিটে বেলজিয়ামের ডি-বক্সে তাকাশি ইনুয়ির হেড সহজেই গ্লাভসবন্দি করেন থিবো কোর্তোয়া। এর পাঁচ মিনিট পর অরক্ষিত হ্যাজার্ডের শট ব্লক করেন জাপানিজ ডিফেন্ডার মায়া ইউশিদা। প্রথমার্ধের এক মিনিট আগে গোলরক্ষক কোর্তোয়ার ভুলে গোল খেতে বসেছিল বেলজিয়াম। গোলুমখে ইয়োতো নাগাতোমোর মাটি কামরানো পাস সতীর্থের পায়ে লেগে চলে যায় কোর্তোয়ার কাছে। গ্লাভস ফসকে বল গোলের লাইন ক্রস করার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেভ করেন কোর্তোয়া। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য থেকে বিরতিতে যায় দুইদল। প্রথমার্ধে ৪৪ শতাংশ বল দখলে রাখে জাপান। আক্রমণে এগিয়ে ছিল বেলজিয়াম। গোলমুখ তাক করে তাদের ১০টি শটের মাত্র দুইটি ছিল পোস্টে। কাউন্টার অ্যাটাকে জাপানও বেলজিয়ামের ডিফেন্স তটস্থ রাখে। তাদের চারটি গোলের প্রচেষ্টার একটি থাকে সরাসরি গোলমুখে।

দ্বিতীয়ার্ধের তিন মিনিট না যেতেই বেলজিয়ামের জালে বল পাঠায় জাপান। মাঝমাঠ থেকে মিডফিল্ডার জাকু শিবাসাকির পাস ঠেকাতে ব্যর্থ হন বেলজিয়ান ডিফেন্ডার ইয়ান ভার্টংগেন। দারুণ ফিনিশিংয়ে বল জালে পাঠান অরক্ষিত থাকা উইঙ্গার জেনকি হারাগুচি। পরের মিনিটেই সমতায় ফিরতে পারতো বেলজিয়াম। হ্যাজার্ডের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৫২ মিনিটে বেলজিয়ামের বুকে রীতিমতো ছুরি চালায় জাপান। ডি-বক্সের বাইরে থেকে দর্শনীয় শটে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করেন জাপানের আরেক তারকা উইঙ্গার তাকাশি ইনুয়ি। চার মিনিটের মধ্যে দুই গোলে বেলজিয়ামকে ম্যাচ থেকেই ছিটকে দেয় জাপান। ৬২ মিনিটে ম্যাচে ফেরার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন লুকাকু। তার হেড চলে যায় পোস্টের বাইরে দিয়ে। ৬৯ মিনিটে বেলজিয়ামকে ম্যাচে ফিরিয়ে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন ভার্টংগেন। ডি-বক্সের বাম কোন থেকে হেড করেন তিনি। সামনে চলে আসায় লাগাম পাননি কাওয়াশিমা। মাথার ওপর দিয়ে জালে আশ্রয় নেয় বল। ৭৪ মিনিটে সমতায় ফেরে বেলজিয়াম। হ্যাজার্ডের ক্রস থেকে হেডে বল জালে পাঠান মারুয়ান ফেলাইনি। ৮৬ মিনিটে পরপর দুইটি হেড প্রতিহত করে জাপানকে রক্ষা করেন কাওয়াশিমা। ইনজুরি সময়ের কেইসুকে হোন্ডার দারুণ ফ্রি-কিক প্রতিহত করেন কোর্তোয়া। কাউন্টার অ্যাটাকে জাপানের স্বপ্নভঙ্গ করেন নাসের চাদলি।

জাপান কোচ আকিরা নিশিনো ছয়টি পরিবর্তন আনেন। একাদশে ফেরাদের মধ্যে অন্যতম অধিনায়ক মাকোতো হাসেবে, কাগাওয়া ও ইনুয়ি। অন্যদিকে কোর্তোয়া ছাড়া বাকি ১০টি পজিশনেই পরিবর্তন এনে আগের ম্যাচকে ছাড়িয়ে যান বেলজিয়ামের স্প্যানিয়ার্ড কোচ রবার্তো মার্টিনেজ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বিশ্রামের পর ফেরেন হ্যাজার্ড, লুকাকু, কেভিন ডি ব্রুইনারা। ওই ম্যাচে ৯টি পরিবর্তন এনেছিলেন মার্টিনেজ। ইংল্যান্ড-বেলজিয়াম ম্যাচের একাদশে মোট ১৭টি পরিবর্তন দেখেন দর্শকরা। যেকোনো ধরনের ফুটবলে ম্যাচে এটি রেকর্ড। আরেকটু হলেই সেই রেকর্ড ভেঙে দিত জাপান-বেলজিয়াম ম্যাচ।

বিশ্বকাপে এর আগে একবারই মুখোমুখি হয় জাপান ও বেলজিয়াম। ঘরের মাটিতে ২০০২ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের খেলায় বেলজিয়ামের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে জাপান। সব মিলিয়ে আগের পাঁচবারের দেখায় এগিয়ে জাপান। জাপানের দুই জয়ের বিপরীতে এক ম্যাচে জয় পায় বেলজিয়াম। দুই ম্যাচ ড্র হয়। সবশেষ গত বছরের নভেম্বরে বেলজিয়ামের মাটিতে প্রীতি ম্যাচে ১-০ গোলে হার দেখে জাপান।
এবারের আসরে প্রথম ম্যাচেই কলম্বিয়াকে (২-১) হারিয়ে ইতিহাস গড়ে সূর্যোদ্বয়ের দেশ জাপান। বিশ্বকাপ মঞ্চে দক্ষিণ আমেরিকান দলের বিপক্ষে এশিয়ার কোনো দলের এটাই প্রথম জয়ের রেকর্ড। দ্বিতীয় ম্যাচে সেনেগালের বিপক্ষে দুই দফায় পিছিয়ে থেকে ২-২ গোলের রোমাঞ্চকর ড্র করে নীল সামুরাইরা। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে ভাগ্যের ছোঁয়ায় শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেয় তারা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এবারই প্রথম ‘ফেয়ার প্লে’তে নকআউট পর্বে ওঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জাপান। পয়েন্ট, গোল ব্যবধান, গোল স্কোর, হেড-টু-হেড এ পার্থক্য না হলেই ফেয়ার প্লে পয়েন্টে গ্রুপের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। জাপানের চেয়ে বেশি হলুদ দেখায় টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় সেনেগাল।

গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই জয় পাওয়া তিন দলের একটি বেলজিয়াম। ভিন্ন গ্রুপে শতভাগ জয় পায় উরুগুয়ে ও ক্রোয়েশিয়া। শীর্ষস্থানের লড়াইয়ে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারায় বেলজিয়াম। ম্যাচটিতে দুই দলের কোচই একাদশের বেশিরভাগ খেলোয়াড়কে বিশ্রামে রাখেন। প্রথম ম্যাচে পানামাকে ৩-০ গোলে হারানোর পর তিউনিশিয়াকে ৫-২ গোলে উড়িয়ে দেয় বেলজিয়াম। দুই ম্যাচে চার গোল করে ‘গোল্ডেন বুট’ জয়ের দৌড়ে নিজের নাম জানান দেন বেলজিয়ান স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু।

১৯৯৮ বিশ্বকাপে অভিষেকের পর নিয়মিত খেলছে জাপান। ২০০২ ও ২০১০ আসরে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার কৃতিত্ব দেখায় এশিয়ান জায়ান্টরা। অন্যদিকে এর আগে দুইবার শেষ ষোলো অতিক্রম করে বেলজিয়াম। টানা দুই আসরে বাছাইপর্বে বাদ পড়ার পর ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে তারা। আর ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দিয়েগো ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার কাছে হার মানে বেলজিয়াম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *