পাটুরিয়া ফেরি ঘাটে ভয়াবহ যানজট, যাত্রী দুর্ভোগ চরমে

Slider জাতীয়

121768_1
মানিকগঞ্জ: ভোগান্তি আর ভোগান্তি। ভোগান্তির যেনো শেষ নেই। আর এই ভোগান্তির অন্যতম ঠিকানা হচ্ছে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ঘাট। যেখানে সারা বছরই দুর্ভোগ ও ভোগান্তি নিয়েই পথ চলতে হয় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষজনকে। বিশেষ করে ঘাট এলাকায় ভোগান্তির ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠে ঈদের এক দিন আগে। শুক্রবার সে রকমই এক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ঈদে ঘরমুখো হাজার হাজার মানুষজন।
মধ্যরাত থেকে নাড়ীর টানে ছুটে চলা যাত্রীবাহী বাসের দীর্ঘ সারি পাটুরিয়া ঘাট ছাড়িয়ে কয়েক কিলোমিটার অতিক্রম করেছে প্রায় ৫ কিলোমিটার। পাশাপাশি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের চালক ও যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল অবর্ননীয়। পাটুরিয়া ৫নং ফেরি ঘাট ছাড়িয়ে ছোট গাড়ীর লাইন চলে যায় গ্রামীন জনপদের রাস্তায়। এছাড়া লঞ্চ যাত্রীরা ৬ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে এসে লঞ্চে উঠছেন।
সরজমিন পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ভায়াবহ যানজট। শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘাট ছাড়িয়ে যানবাহনের লম্বা লাইন চলে গেছে প্রায় ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। বেলা বাড়ার সাথে সাথে চিত্র আরো পাল্টাতে থাকে। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে নাকাল হয়ে উঠে পাটুরিয়া ঘাট এলাকা। বাসের ভেতর ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা এবং তীব্র গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়েন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঘরমুখো হাজার হাজার মানুষ।

গোল্ডেন লাইন পরিহনের যাত্রী কুলসুম বেগম। বৃহস্পতিবার রাত ১টার সময় এসেছেন পাটুরিয়া ঘাটে। প্রায় ৮ ঘণ্টা ধরে পরিবারর ৫ সদস্য নিয়ে গাড়ীর ভেতর বসে আছেন। দেখা গেলো ছোট ছোট দুই বাচ্চাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে। সাংবাদিকদের পেয়ে ঝাড়লের ক্ষোভের কথা। বলেন, আর কত এভাবে ভোগান্তির শিকার হবো। কাকে বলবো আমাদের এই দুর্ভোগের কথা। প্রচন্ড গরমে ছেলে পলে নিয়ে জীবনটা অস্থির হয়ে উঠেছে। মনে হয় কেয়ামত পর্যন্ত এই দুর্ভোগ থাকবেই।

বাসের চালক জানালেন,২৬ বছর ধরে এই রুটে গাড়ি চালাই। প্রতিদিনই ফেরি পার হতে হয়। দুঃখ, কখনো একটু শান্তিতে যাত্রী আনা নেয়া করতে পারলাম না। ঘাটে এসেই বসে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। ঈদের সময় মানুষজনকে নিয়ে একটু স্বস্তিতে ফিরবে সেটাও পারছি না।
ঈগল পরিবহনের যাত্রী শহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদে এই ঘাট দিয়ে আসার কথা মনে হলে দম বন্ধ হয়ে আসে। কিন্ত করার কিছু নেই সবই নিয়তি। বড় বাসে এরকম দুর্ভোগের শিকার হাজারো যাত্রী।
সকাল ৯টার টার দিকে পাটুরিয়া ৫ নম্বার ঘাটে গিয়ে দেখা গেলো ছোট গাড়ি অর্থাৎ প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের লম্বা সারি। ঘাট ছাড়িয়ে ছোট গাড়ীর লাইন চলে গেছে গ্রামীর জনপদ হয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার। ৫-৬ ঘন্টা অপেক্ষার পরও ছোট গাড়ী গুলো ফেরি পার হতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়েছে যাত্রীরা। ছোট ছোট শিশু বাচ্চা,বয়স্ক এবং নারী যাত্রীদের দুর্ভোগের সীমা ছিলনা।

কথা হয় ফরিদপুরের আকরাম হোসেনের সাথে। জানালেন, ভোর ৫টা থেকে প্রাইভেটকারের ভেতরে বসে রয়েছেন ছোট ছোট দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে। সকাল ১০টা বেজে গেলেও ফেরি ঘাটের কাছে পৌছাতে পারেনি। তার গাড়ি প্রায় ২ কিলোমিটার পেছনে। বলেন,এমন দুর্ভোগের শেষ কোথায়। ডিজিটাল জামানায় এখনো এনালগ পদ্ধতিতে সব কিছু চলছে। কারো কিছু বলার নেই।

একই ঘাটে ফেরি না পেয়ে ৪ ঘন্টা প্রাইভেটকারে বসেছিলেন সৌদি প্রসাসী নুরুল ইসলাম। যাবেন খুলনা। বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগী করতে সৌদিআরব থেকে ছুটে এসেছি। কিন্ত ঘাটে এতো গাড়ীর চাপ সেই যে বসে আছি। এদের মত ছোট গাড়ীর হাজারো যাত্রী পাটুরিয়া ৫নং ফেরি ঘাটে দুর্বিসহ যন্ত্রনার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন।

এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে মোট ২০টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপারের কথা থাকলেও বাস্তবে সচল রয়েছে ১৭টি ফেরি। বৃহস্পতিবার রাতে খান জাহান আলী ও হামিদুর রহমানসহ তিনটি বিকল হয়ে পড়ে। এর মধ্যে বড় রো ফেরি রয়েছে ৭টি। বাকি ফেরি গুলো ছোট। রো রো ফেরি কম থাকায় বড় বাস পারাপারে হচ্ছে ধীর গতিতে। এতে করে সময় গড়াচ্ছে আর যানবাহনের চাপ বেড়েই চলেছে।

বিআইডাব্লিউটিসি আরিচা অঞ্চলের এজিএম জিল্লুর রহমান দাবি করেছেন,বর্তমানে ২০টি ফেরি দিয়ে ঈদে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। গাড়ির চাপ থাকলেও ঘাটে সুষ্ঠ পরিবেশ থকায় যানজট নেই। ছোট গাড়ি গুলো জন্য ৫ নম্বর ঘাট এবং বাস কোচের জন্য বাকি আরো তিনটি ঘাট ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে মধ্যরাত থেকে যানবাহনের চাপ বেশী পড়ায় পাটুরিয়া ঘাটে দীর্ঘ পড়ে গেছে। এতে কিছুটা যাত্রী ভোগান্তি হচ্ছে।

এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া গামী লঞ্চ যাত্রীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই। ঢাকা থেকে লোকাল বাস যোগে পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হলেও তারা ঘাটের কাছে যেতে পারছে না। পাটুরিয়া ঘাট থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটা দুরে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। ফলে শিশু,বৃদ্ধ,নারীসহ নানা বয়সী যাত্রীরা ৬ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে লঞ্চে উঠছেন। দীর্ঘ পথ পায়ে হাটা ও প্রচন্ড গরমে তারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামিম বলেন, পাটুুরিয়া ঘাটে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘাট থেকে ঢাকা-পাটুরিয়া ও আরিচা মহাসড়ক জুড়ে ৫শ পুলিশ কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া যাত্রী নিরাপত্তা ও বিভিন্ন অনিয়ম,দুর্নিতী ঠেকাতে সিসি টিভির আওতায় আনা হয়েছে পাটুরিয়া ফেরি ঘাট এলাকা। গুরুত্বপুর্ন ১৫টি পয়েন্টে পুলিশের পক্ষ থেকে এই ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *