ট্রাম্প-উন সিঙ্গাপুরে

Slider সারাবিশ্ব

th5D0KG3B4

ঐতিহাসিক বৈঠকে অংশ নিতে সিঙ্গাপুর পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। গতকাল রবিবার স্থানীয় সময় রাত সোয়া ৮টার দিকে সিঙ্গাপুরের ‘পায়া লিবার’ বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেন ট্রাম্প। এর ঘণ্টাপাঁচেক আগে সিঙ্গাপুরে পা ফেলেন উন।

আগামীকাল মঙ্গলবারের বৈঠকটি হবে সিঙ্গাপুরের সেন্টোসা দ্বীপের পাঁচতারাবিশিষ্ট ‘ক্যাপেলা’ হোটেলে। আর বৈঠকটি হলে তা হবে গত সাত দশকের মধ্যে ক্ষমতাসীন কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতার প্রথম সাক্ষাৎ। বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে পিয়ংইয়ংয়ের (উত্তর কোরিয়ার রাজধানী) পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি।

গতকাল স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার দিকে ‘এয়ার চায়না ৭৪৭’ বিমানে করে সিঙ্গাপুরে অবতরণ করেন উন। তবে পিয়ংইয়ং থেকে সকালে উড্ডয়নের সময় বিমানটির গতিপথ ছিল চীনের দিকে। কিন্তু মাঝপথে ফ্লাইট নম্বর পরিবর্তন করে বিমানটি সিঙ্গাপুরের দিকে যাত্রা শুরু করে। সেখানে একটি বাণিজ্যিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর গাড়িবহর সঙ্গে নিয়ে উন সিটি সেন্টারের দিকে রওনা হন। সেখানে তাঁকে স্বাগত জানান সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং। এ সময় উন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীকে বৈঠকটি আয়োজনে সহযোগিতা করায় ধন্যবাদ জানান। উন বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ‘বৈঠকটি সফল হলে সিঙ্গাপুরের অবদান ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম চাওয়া হলো, উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি থেকে পুরোপুরি সরে আসতে হবে। অন্যদিকে পরমাণু কর্মসূচি পরিত্যাগের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নিজের ক্ষমতার নিশ্চয়তা চান উন।

সমালোচকদের অনেকেই বলছেন, ট্রাম্প-উনের বৈঠকে সফলতা আসার সম্ভাবনা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী রিচার্ড আরমিটেজ বলেন, ‘ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার ঘটনাই শুধু সাফল্য হতে পারে। কারণ দুই দেশ আসলে যা চায়, এরই মধ্যে তা তারা পেয়ে গেছে।’

ট্রাম্প গত সপ্তাহে জোর দিয়ে বলেন, উনের সঙ্গে বৈঠক ‘শুধু ফটোশ্যুট হবে না। এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে এমন একটি পথ তৈরি হবে, যার সূত্র ধরে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যাবে।’ কিন্তু গত শুক্রবার ট্রাম্পের সুর বদলে যায়। তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ‘চুক্তি হবে কি না, তা এক মিনিটেই বোঝা যাবে। যদি আমার কাছে মনে হয় যে চুক্তি হবে না, তাহলে আমি সময় নষ্ট করতে যাব না।’

অনেকের কাছেই ট্রাম্প-উনের বৈঠকের তাৎপর্য প্রশ্নবিদ্ধ। এমন কথাও শোনা যায় যে উনের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পাওয়ার পর তাতে সম্মতি জানাতে ট্রাম্প নিজের উপদেষ্টাদের কোনো মতামত নেননি।

ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যকার পরমাণুবিষয়ক আলোচনার সাবেক মার্কিন মধ্যস্থতাকারী ক্রিস্টোফার হিল বলেন, ‘মানুষজন এ সম্মেলনকে ঐতিহাসিক বলছে। কিন্তু এটা বোঝা জরুরি যে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো প্রেসিডেন্ট চাইলেই এ ধরনের বৈঠকে বসতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা যৌক্তিক কয়েকটি কারণেই এ ধরনের বৈঠকে বসেননি।’

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার বিরোধ প্রায় সাত দশকের। বিরোধের মূলে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি। এই বিরোধের বরফ গলা শুরু হয় দক্ষিণ কোরিয়ায় সদ্যসমাপ্ত শীতকালীন অলিম্পিক আসরকে কেন্দ্র করে। ওই আসরে খেলোয়াড়সহ বড় একটি প্রতিনিধিদল পাঠায় উত্তর কোরিয়া। এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিনিধিদল পিয়ংইয়ং গিয়ে কিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। ওই প্রতিনিধিদলের মাধ্যমেই ট্রাম্পকে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ জানান কিম। ট্রাম্পও সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং সেই আমন্ত্রণের সূত্র ধরে দুজন এখন একই দেশে অবস্থান করছেন। সূত্র : সিএনএন, বিবিসি, এএফপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *