মা-বাবার প্রতি কেমন ব্যবহার করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন

Slider লাইফস্টাইল

aaat

সন্তানের জন্য পিতা-মাতা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পরম দয়া ও অনুগ্রহগুলোর অন্যতম। বলা চলে খোদার দেয়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহার মা-বাবা। দুজন বিশ্বস্ত মানুষ বহুবিধ পরিশ্রমের মাধ্যমে অন্য একজন মানুষকে তিলে-তিলে বড় করে তোলে। দুজন বিশ্বস্ত ও নিঃস্বার্থ মানুষের পরিচয় ‘পিতা ও মাতা’। যার জন্যে এতো ত্যাগ, কষ্ট ও ভালোবাসা, সে হলো সন্তান।

গর্ভ থেকে শুরু করে মা যেমন আপন সন্তানকে বহু কষ্ট-তিতীক্ষার মাধ্যমে ধীরে-ধীরে বড় করে তুলতে সাহায্য করে, তেমনি আপন পিতাও সর্বোচ্চ শ্রম ঢেলে সন্তানের যাবতীয় ভরণ-পোষণ পরিচালনার কঠিন দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়। তাই সন্তানের এ নিরলস কল্যাণকামী ও কল্যাণকামিণী উভয়ের প্রতি আপন সন্তানের রয়েছে নানাবিধ দায়-দায়িত্ব। শরীয়তের দৃষ্টিতে সন্তানের সে দায়িত্ব বা কর্তব্যগুলো কী?

কুরআনে বর্ণনা

পবিত্র কুরআন মাজিদের সুরা বনী ইসরাঈলে আল্লাহ বলছেন আল্লাহর ইবাদাতের সাথে সাথে তোমরা পিতা-মাতার আনুগত্যও কর। ইরশাদ হচ্ছে, ‘‘প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এ আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। তাদের মধ্য হতে যদি একজন কিংবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বৃদ্ধ অবস্থায় উপনীত হয়, তখন তাদের ‘ওফ’ বলবে না (এমন আচরণ করবে না, যাতে তারা কষ্ট পেয়ে ওফ উচ্চারণ করে)। তাদের ধমক দেয়াও যাবে না। কথা বলার সময় যেন বিনয়ের সাথে সম্মান প্রদর্শন পূর্বক কথা বলো’’।

দেখুন, এক আল্লাহর ইবাদাতের পাশাপাশি মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে সতর্ক করছেন। বলে দিয়েছেন, ‘তাদেরকে সামান্য পরিমাণ কষ্টও দেয়া যাবে না এবং যথাযত সম্মান প্রদর্শন করতে হবে’। অতএব, কর্তব্য হলো তাদেরকে যথাযত সম্মান করা, কষ্ট না দেয়া, বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের সেবা করা এবং অসুস্থাবস্থায় যথাযথ চিকিৎসা নেয়া।

হাদিসে পাকের ভাষ্য

রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনেক হাদিসের মধ্যে পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনে জোর দিয়েছেন, উৎসাহিত করেছেন, সর্বোপরি নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) একবার রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা উত্তম আমলটি কী’? রাসুলে আকরাম জবাব দিলেন, ‘সময় মত নামাজ আদায় করা’। পুণরায় জিজ্ঞেস করা হল, ‘এরপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা’। আবারো প্রশ্ন করা হল, ‘অতঃপর কোনটি?’ জবাব এলো, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা’ (বুখারি ও মুসলিম)।

সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন বদদোয়া দিচ্ছিলেন এই বলে- ‘তার নাক ধুলিমলিন হোক, তার নাক ধুলিমলিন হোক, তার নাক ধুলিমলিন হোক’ (আরবে কাউকে ধিক্কার জানানোর ক্ষেত্রে এমনটা ব্যবহৃত হয়)। জিজ্ঞাসা করা হলো কার নাক? তিনি ইরশাদ ফরমালেন, ‘ঐ ব্যক্তির, যে তার পিতা-মাতা উভয় অথবা যে কোন একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেলো, অথচ তাদের সেবা-শুশ্রূষা করে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না’ (মুসলিম শরিফ)। বোঝা গেলো পিতা-মাতার সেবা-যত্নের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসুলের সন্তুষ্টির পাশাপাশি জান্নাত লাভের শুভ সংবাদও রয়েছে। পিতা-মাতার সন্তুষ্টি মানেই হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। যেমনটি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) এর হাদিসেও প্রমাণ পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘‘পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট, আর তাদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট” (তিরমিযি)।

মৃত্যু পর কি পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য

জীবিত অবস্থায় যেমনিভাবে উভয়ের প্রতি নানাবিধ কর্তব্য রয়েছে, তেমনি মৃত্যুর পরেও কিছু কর্তব্য রয়েছে। যেমনটি হযরত আবু উসায়েদ সায়েদি (রা.) এর হাদিসে পরিলক্ষিত হয়। তিনি বলেন, ‘একদা বনু সালমা গোত্রের একলোক রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের সাথে সদ্ব্যবহারের উপায় আছে কী? রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যুত্তরে বললেন অবশ্যই আছে। আর তা হলো- ‘তাদের জন্য দোআ করা, মাগফেরাত কামনা করা, কৃত অঙ্গীকার পূরণ করা এবং তাদের আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সদ্ব্যবহার করা’ (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)।

বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী নিম্মোক্ত কাজসমূহ তাদের মৃত্যুর পর সন্তানের উপর কর্তব্য:

(১) মৃত্যুর পরবর্তী তাদের প্রতি প্রথম কর্তব্য হলো গোসল, জানাজা, কাফন-দাফন ইত্যাদি সমাপ্ত করা।
(২) সর্বদা তাদের জন্য দোআ ও মাগফেরাত কামনা করা।
(৩) তারা যদি কোন ঋণ রেখে যায়, যত দ্রুত সম্ভব, তা পরিশোধ করা।
(৪) শরীয়তে নিষিদ্ধ নয়, এমন অসিয়ত যদি তারা করে যান, সেটা পূর্ণ করা।
(৫) তাদের উভয়ের আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধুবদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা, যেমনি ভাবে তারা রাখতো।
(৬) তাদের কবর জিয়ারত করা এবং ঈসালে সাওয়াব পৌঁছানো।
(৭) তাদের কৃত শপথ পালণ করা এবং যথাসম্ভব তাদের অনাদায়কৃত ইবাদাত আদায় করা। যেমন- কারো হজ্ব ফরজ হওয়া সত্ত্বেও যদি আদায় না করে মারা যায়, তবে তার পক্ষ থেকে তা আদায় করা।

উপরুক্ত আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার কোন সুযোগ নেই। বরং তাদের প্রতি অবহেলা করার অর্থ হলো আল্লাহ-রাসুলের নির্দেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করা। আর যারা আল্লাহ এবং তার রাসুল (দ.) এর আদেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করবে, তাদের পরিণতি সহজেই পরিমেয়। অতএব, প্রত্যেক সন্তানের কর্তব্য হলো- পিতা-মাতার প্রতি যথেষ্ট আদব সহকারে কথাবার্তা বলা। তাদের যথাযত যত্ন নেয়া। যাবতীয় ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা। মৃত্যুর পরবর্তী নির্ধারিত কর্তব্য সম্পাদন করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেককে পিতা-মাতার প্রতি যথেষ্ট পরিমাণ সদ্ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন, আমিন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *