ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য: তিস্তায় নীরব হাসিনা, মোদি চুপ রোহিঙ্গায়

Slider টপ নিউজ সারাবিশ্ব

cb345bcf86a91c349767a28803cf2963-5b0a55a9d9cd8

ঢাকা: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে গত শুক্রবার এক মঞ্চেই উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নীরবতাই যেন প্রবল হয়ে বাজল। একদিকে শেখ হাসিনা তিস্তা নিয়ে সরাসরি কোনো কথা বলেননি, অন্যদিকে মোদির মুখেও ছিল না রোহিঙ্গা ইস্যু।

গতকাল শনিবার ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যু আজও অমীমাংসিত। তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ক্ষেত্রে বড় অন্তরায়। তাঁর মতে, বাংলাদেশকে পানি দিলে পশ্চিমবঙ্গের কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে এই ইস্যুটি সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে তিনি এখন পর্যন্ত ব্যর্থ।

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের (বাংলাদেশ ও ভারত) মধ্যে বহু সমস্যার সমাধান হয়েছে। কিছু সমস্যা এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে, তবে আমি সেসব বিষয় তুলে এই সুন্দর অনুষ্ঠানকে ম্লান করতে চাই না।’

কোনো শব্দ উচ্চারণ না করেই বার্তা দেওয়ার একটি দারুণ উদাহরণ এটি। ‘তিস্তা’ শব্দটি উচ্চারণ না করেও তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুটি তুলেছেন শেখ হাসিনা। তবে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি বারবার এসেছে তাঁর মুখে। বলেছেন, ‘১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত। তারা যখন এল, তাদের আশ্রয় দেওয়া উচিত বলে মনে হলো আমাদের। এমনকি নিজের থালার ভাতসহ আমাদের সীমিত সম্পদ তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চেয়েছি। আমরা দ্রুততার সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চাই। মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা করতে হবে। আমাদের দুই দেশকে অবশ্যই মিয়ানমারকে তাদের ফিরিয়ে নিতে বলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগে বক্তব্য দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হিন্দু-মুসলিম সাম্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুলের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করেছেন তিনি। তবে তিস্তা নিয়ে কোনো কথাই বলেননি।

আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তা, রোহিঙ্গা—কোনো ইস্যু নিয়েই কথা বলেননি। তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্য শেখ হাসিনার। এই লক্ষ্য অর্জনে তাঁকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করবে ভারত।’

রোহিঙ্গা প্রশ্নে সহায়তা কামনা

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে ভারতের সহায়তা চেয়েছেন। নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে রাজি নয়। তারা রোহিঙ্গাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে। তবে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের এমন ধারণার বিপক্ষে। তিনি রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে আগ্রহী।

প্রতিদান চান শেখ হাসিনা

আনন্দবাজার পত্রিকার খবর বলেছে, ‘দিয়েছেন অনেক, প্রতিদানে এবার ভারতের সহযোগিতা চান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠকে এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধনের পর সেখানেই মোদির সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, তাঁর সরকার উত্তর-পূর্বের জঙ্গিদের দেশছাড়া করেছে, ট্রানজিট দিয়েছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বরাবর দিল্লির পাশে থেকেছে। বাংলাদেশের নির্বাচনের বছরে এবার তাই ভারতের সহযোগিতা চায়।

আনন্দবাজার আরও বলেছে, ‘মোদির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি কী বলবেন, উপদেষ্টাদের সঙ্গে আগেই আলোচনা সেরে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁর দপ্তরের এক সূত্র জানান, হাসিনার বার্তা—মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে সরাতে, বাংলাদেশকে ফের পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত চলছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে পশ্চিমে আর পুবে—দুই দিকেই পাকিস্তান নিয়ে ঘর করতে হবে ভারতকে। তাই ভারতের উচিত বাংলাদেশের বর্তমান সরকারই যাতে ক্ষমতায় ফেরে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *