আট জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১১

Slider জাতীয়

118403_p3

ঢাকা: নীলফামারী, চুয়াডাঙ্গা ও নারায়ণগঞ্জসহ পাঁচ জেলায় র‌্যাব ও পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ৬ মাদক ব্যবসায়ী নিহতের হয়েছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাগুলো ঘটে।

নীলফামারীর সৈয়দপুরে মধ্যরাতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।এ ঘটনায় আহত হয়েছেন চারজন পুলিশ সদস্য। নিহতরা হলেন সৈয়দপুর শহরের নিচু কলোনি এলাকার মাদক স¤্রাট জনি(৩৪) ও ইসলামবাগ এলাকার শাহিন(৩২)। সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহজাহান পাশা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন এইদুইজন মাদক ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় পুলিশ।

আর ভোরে তারা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল জানান,আটক মাদক ব্যবসায়ীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান,গোলাহাট বধ্যভুমি এলাকায় জসিয়ার ও নূর বাবু নামে দুইজন চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী রাতে মাদকের বড় চালান নিয়ে গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় আসবেন। ওই কথার সূত্রধরে আটক দুইজনকে নিয়ে সেখানে গেলে সেখানে ওৎ পেতে থাকা মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের উপর গুলি চালায় ও ককটেল ফাটিয়ে আটকদের পালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় তাদের গুলিতেই আটক দুইজন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় চারজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। আহতদের সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট্য হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা ও ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। নিহতদের লাশ ময়না তদনেতর জন্য জেলার মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে বাচ্চু খান (৩৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এসময় উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমান ইয়াবা ট্যাবলেট ও বিদেশী অস্ত্র। আজ ভোরে আড়াইহাজারের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিমুলতলী এলাকা নামক স্থানে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত বাচ্চু খান রাজধানী ঢাকার উত্তরার উত্তরখান এলাকার আশরাফ খানের ছেলে। এ সময় মাদক ব্যবসায়ের কাজে তাদের ব্যবহৃত একটি জিপ গাড়িও উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধারের জন্য রুপগঞ্জের ৩শ ফিট এলাকায় র‌্যাব টহল দিচ্ছিল। এ সময় র‌্যাব একটি প্রাইভেটকারকে থামানোর জন্য সংকেত দিলেপ্রাইভেটকারটি র‌্যাবের ব্যারিকেট ভেঙ্গে পালানোর চেষ্টা করে। পরে র‌্যাবের দল উপজেলার শিমুলতলীতে কারটি আটক করে। এ সময় গাড়িতে থাকা ৩ জন মাদক ব্যবসায়ী র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে । আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব ও পাল্টা গুলি ছুড়ি । এতে ঘটনাস্থলেই বাচ্চু নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়। তবে বাকি ২ জন পালিয়ে যায়। এ সময় ১ র‌্যাব সদস্য আহত হন। র‌্যাব ১ এর কোম্পানী কমান্ডার আনোয়ার হোসেন ও আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। বর্তমানে লাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রয়েছে। হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হাবিব ইসমাইল ভুইয়া জানান, লাশের শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে। এই ব্যাপারে মামলা দায়েরর প্রস্তুতি চলছে বলে ওসি এম এ হক জানান।

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা রেল স্টেশনের গতকাল দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে পশ্চিম পাশের মাঠে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে কামরুজ্জামান সাধু খাঁ (৪৫) নামের অপর এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি এবং ১ বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। বন্দুকযুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানার ৪ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। নিহত কামরুজ্জামান সাধু এলাকার শীর্ষ মাদকব্যবসায়ী এবং তার নামে আলমডাঙ্গা থানায় ১২টি মাদক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খাঁন জানান, আলমডাঙ্গা স্টেশনের পশ্চিম দিকের একটি জঙ্গলের ভেতরে ৮/১০ জন মাদক বিক্রেতা অবস্থান করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল ওই স্থানে অভিযান চালায়। রাত দেড়টার দিকে পুলিশের টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মাদক বিক্রেতারা পুলিশের ওপর গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কামরুজ্জামানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদিকে বন্দুকযুদ্ধের সময় আলমডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর রহমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল হামিদ, কনস্টেবল মাসুদ রানা ও কনস্টেবল রাকিবুল হোসেন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা। ঘটনাস্থল তল্লাশি করে একটি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি ও এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামের ডেবারপাড়ে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে রাত আড়াইটার দিকে আরো এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শুক্কুর আলী(৪৫) নিহত হয়েছেন।
র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারি পরিচালক মিমতানুর রহমান মুঠোফোন বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। মাদকের একটি বড় চালান আসছে এমন খবর পেয়ে র‌্যাব-৭ একটি দল ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। মাদক ব্যবসায়ীরা টের পেয়ে র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আতœরক্ষায় র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে আক্রমণের মুখে পালিয়ে যায় মাদক ব্যবসায়ীরা। পরে শুক্কুর আলীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে র‌্যাব ১০ হাজার ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটার গান, বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করেছে বলেও জানান তিনি। নিহতের নামে থানায় ১০টিরও অধিক মাদক মামলা রয়েছে বলেও জানা গেছে।

দিনাজপুরের বিরামপুরে পুলিশের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে দাগী মাদক ব্যবসায়ী প্রবাল হোসেন (৩৫)নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে,পুলিশের এসআই খুরশেদ আলম,এএসআই রাম চন্দ্র ও এক কনেষ্টবল। আহত ৩ পুলিশ ভর্তি রয়েছে দিনাজপুর পুলিশ লাইন হাসপাতালে।
সামবার মাদক ব্যবসায়ী প্রবাল হোসেনকে আটক করে পুলিশ। তাকে নিয়ে রাতে বিরামপুর থানার পুলিশের একটি চৌকস দল মাদক উদ্ধার করতে গেলে মাদক ব্যবসায়ী প্রবাল হোসেন ও তার সহযোগিতা পুলিশের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালালে মাদক ব্যবসায়ী প্রবাল হোসেন ঘটনাস্থলে নিহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৩ রাউন্ডগুলিসহ একটি রিভালবার,৫টি ককটেল,একটি সামুরাই ও ৯২ পিস ফেন্সিডিল উদ্ধার করেছে। নিহত মাদক ব্যবসায়ী প্রবাল হোসেনের বিরুদ্ধে আগের ৮টি মামলা রয়েছে।

এছাড়া দেশের আরো কয়েকটি জেলায় বন্দুকযুদ্ধে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লায় শরীফ (২৬) ও পিয়ার (২৮) নামে দুই যুবক, নেত্রকোনায় আমজাদ (৩০) ও অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধন মিয়া (৩৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *