চাটাইয়ে মুড়িয়ে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান!

Slider গ্রাম বাংলা

বীর মুক্তিযোদ্ধা তাহেজ উদ্দিন সরকারকে জাতীয় পতাকার পরিবর্তে বাঁশের চাটাইয়ে মুড়িয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার পাশাপাশি মুক্তিযেদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

ঘটনাটি গতকাল শনিবার বিকেলে পাবনার বেড়া পৌর এলাকার শহীদ আব্দুল খালেক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। নিহত মুক্তিযোদ্ধা বাড়ি বেড়া পৌর সদরের সম্ভুপুর গ্রামে।
স্থানীয়রা জানান, গত শুক্রবার মহান এই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হলে ১৯ মে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। এই মুক্তিযোদ্ধার শেষ যাত্রায় তাঁকে জাতীয় পতাকা দিয়ে যথাযথ সম্মান দেখনো হয়নি। তাকে বাঁশের চাটাই মুড়িয়ে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসানসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল পর্যায়ের লোজন উপস্থিত ছিলেন।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের উপর দায়িত্ব দেওয়া ছিল মরহুমের গোসল করানোসহ যাবতীয় কাজ কর্মের। মুক্তিযোদ্ধারা কফিনে কোন প্রকার জাতীয় পতাকা দিয়ে মোড়ানো ছাড়াই গার্ড অব অনার প্রদানের জন্যে প্রস্তুত করেন। পরে আমরা প্রশাসনের লোকজন গিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়।

অথচ অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় আমি নিজেও বিষয়টি লক্ষ্য করি নাই। পরে যখন বিষয়টি লক্ষ্য করলাম স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি ইসহাক আলীর নিকট কারণ জানতে চাইলে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আসলে ওই সময় কিছুই করার ছিল না বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
বেড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি ইসহাক আলী বলেন, মরহুমের পরিবার এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা পতাকা না জড়ানোর বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো সামান্য বিষয়, আপনাদের এতো মাথা ব্যাথা কেন। একটা ভুল হয়েছে তাই বলে এটা নিয়ে এতো মাতামাতি কেন!

প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মিলন হোসেন বলেন, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর ভারত এবং বাংলাদেশের দুটি সনদ আছে। বেড়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি ইসহাক আলী ইচ্ছাকৃতভাবে আমার বাবাকে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়নি। ইসহাক আলী শুধু আমার বাবার সাথেই করেণ নাই, দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের অমর্যাদা করেছে। এই ঘটনার বিচার হওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তিন বার ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছি গার্ড অব অনার দেওয়ার সব কিছু ঠিক আছে কি না। তিনি বলেছেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল সব ব্যবস্থা করেছে। আপনি চিন্তা করবেন না, কিন্তু বাস্তবে পূণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। বিভিন্ন লোকজন বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করছেন।
পাবনার তরুণ গনমাধ্যম কর্মী তপু আহমেদ বলেন, মাঝে মধ্যেই এই ধরনের কাজ কর্ম আমাদের চোখে পরে। সবাই ভুল বা অনিচ্ছাকৃত ভুল বলেই পার পেয়ে যাচ্ছেন, যা মোটেও কাম্য নয়।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি বলেন, যাদের জন্যে আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদেরকেই অবমুল্যায়ন করা হচ্ছে। এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এই মুক্তিযোদ্ধা।

পাবনা ড্রামা সার্কেলের সাধারণ সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ধরণের কর্মকান্ডে ভুল হয়েছে, দুঃখিত বলে পার পাওয়া উচিত নয়। অবশ্যই শাস্তি হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন। আর এ ধরনের কর্মকান্ডের শাস্তি না হলে বারবার হবে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *