স্বামী ও সন্তান হারা হালিমার ১টি বছর, যেন কত যুগ!

Slider নারী ও শিশু

হালিমা

রাতুল মন্ডল, শ্রীপুর(গাজীপুর) থেকে: গাজীপুরের শ্রীপুরের কর্ণপুর সিটপাড়া গ্রামের বিচার না পেয়ে বাবা-মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনায় স্বামী সন্তান হারিয়ে প্রায় একটি বছর কেটে গেলো মা হালিমা বেগমের। গত বছরের এই দিনে শ্রীপুর রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশে আউটার সিগন্যালের পাশে দেওয়ান গঞ্জ গামী চলন্ত তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে পালিত মেয়ে আয়েশা আক্তারসহ বাবা হযরত আলী আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনা পত্রিকায় দেখে ছুটে আসেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ডক্টর কাজী রিয়াজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল হালিমার বাড়িতে। তিনি সকল সহযোগিতা ও সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দেন।

এ ঘটনায় হালিমা বেগম কমলাপুর রেলওয়ে থানায় তার স্বামী ও সন্তানকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তারা হলো, কর্ণপুর গ্রামের ফারুক হোসেন (৩০), আ. খালেক (৬০), ফাইজুদ্দিন (৫০), পটকা গ্রামের বোরহান (৩৫), আব্দুল হামিদ (৪৫), শাহিদ (৪০) ও শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল হোসেন বেপারী (৫৫)। ঘটনার দিনই পুলিশ ইউপি মেম্বার আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে। মাসেক খানেকের মধ্যে র‌্যাব আর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সব কয়েকটি আসামী। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আইনী লড়াইয়ে শুরু হয় আদালতে বিচারিক কার্যক্রম। তবে বর্তমানে সবাই জামিনে মুক্ত রয়েছে।
এদিকে স্বামী সন্তান হারিয়ে দিশেহারা হালিমার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে সুপারিশ করেছিল মানবাধিকার কমিশন। এরপর প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথে ক্ষমতাশীন ও বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলের কিছু সংখ্যাক নেতৃবৃন্দও দায়িত্ব নিয়েছিল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ও সৌর বিদ্যুৎ, মোবাইল ফোন, পোশাক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র সরবাহরহ করা হয়। এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিদিন হালিমার বাড়িতে পুলিশ পাহাড়ার ব্যবস্থা থাকতো। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে পুলিশ প্রত্যাহার করে নেয়। হালিমার দায়িত্ব নেয়া রাজনৈতিক কিছু নেতৃবৃন্দ খবর রাখলেও সবাই তাঁর অসহায়ত্ব নিয়ে রাজনীতি করেছে।

কি ভাবে কাটিয়েছে একটি বছর তা জানতে প্রতিবেদক গিয়েছিল হালিমার বাড়িতে। গত শনিবার দুপুরে কর্ণপুর গ্রামে হালিমার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সে স্বামী সন্তানের কবরের পাশে বসে কাঁদছে। আর আল্লাহ্ পাকের কাছে তাঁদের জন্য দোয়া করছে। এমন সময় কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার দুপুরে স্বামী সন্তানের জন্য বাড়িতে দোয়া পড়িয়েছেন। এবং লোকজনদের কাছ থেকে টাকা তুলে সেই টাকা দিয়ে দোয়ার পড়ে সবাইকে দুপুরে খায়িছেন। তবে তাঁর বেশির ভাগ সময় এই কবরের পাশেই কাটে বলে জানা যায়। হালিমা তাঁর ঘরে নিয়ে যান এই প্রতিবেদককে। নিয়ে দেখান তাঁর মেয়ের স্কুলের ব্যাগ, পোশাক, খাতা, কলমসহ ইত্যাদি। তাঁর সাথে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সে আরো বলেন, এখন আমার কেউ খবর রাখে না। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.শাহ্জাহান সরকারের দায়িত্বে থাকলেও তিনি এখন আর তাকে দেখতে পারেন না। মনে করের তাঁর জন্য তিনি ও তাঁর ইউপি সদস্য বিপদে পড়েছে। কিন্তু তা ভিন্ন কথা এদের কাছে মেয়ের যৌন নিপীড়নের বিচার চেয়েও কোন লাভ হয়নি। বরং বখাটের পক্ষ নিয়ে তার বিরুদ্ধে থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *