তারেক রহমানের নাগরিকত্ব বিতর্ক : কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

Slider রাজনীতি

313203_131

সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ আইনবিদ খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, তারেক রহমান জন্মগতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক। তাই তার নাগরিকত্ব বাতিল করার ক্ষমতা কারো নেই। পাসপোর্টের ওপর ভিত্তি করে জন্মগতভাবে কোনো দেশের কোনো নাগরিকের নাগরিকত্বের ব্যাপারে কোনো প্রভাব পড়ে না। পাসপোর্ট বিদেশ ভ্রমণের একটি ট্রাভেল ডকুমেন্ট। ইতঃপূর্বে আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালত অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলায় এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।

অন্য দিকে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, তারেক রহমান ভিসা নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ভিসার একটি মেয়াদ আছে। ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে তিনি সেখানে কিভাবে থাকছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন এসে যায়। সেজন্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেছেন যে, উনি পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। এখন বলা যেতে পারে, এর উদ্দেশ্য কী? হতে পারে, তিনি মেয়াদ বাড়ানোর জন্য পাঠিয়েছেন, অথবা পাসপোর্ট সারেন্ডার (ত্যাগ) করেছেন। এ সম্পর্কে আমার মনে হয় আরো কিছু তথ্য দরকার। সত্যতা যাচাই করা দরকার, উনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেয়েছে কি না এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন করেছেন কি না, সেটা এখন জানার বিষয়।

তারেক রহমানের নাগরিকত্বের বিষয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রিটেনের সঙ্গে কোনো বন্দী বিনিময় চুক্তি নেই। সেই কারণে আইনগতভাবে বাংলাদেশের কোনো নাগরিককে বাংলাদেশ সরকার ব্রিটেন থেকে বহিষ্কার বলতে পারে না। এমনকি যুক্তরাজ্য সরকার যদি কোনো বিদেশী নাগরিককে ওই দেশ থেকে বহিষ্কার করতে চায় তা হলেও তাতে আদালতের নির্দেশনা প্রয়োজন হবে। একই সঙ্গে ওই ব্যক্তি বহিষ্কারের বিরুদ্ধে আদালতে বক্তব্য রাখতে পারবেন। প্রাথমিক আদালত যদি তার বহিষ্কার আদেশ বহাল রাখে সে ক্ষেত্রে তিনি ওই দেশের উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পাবেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার যে কথা বলছেন, সেটা অবাস্তব এবং আইনের বিধান সম্পর্কে তার অজ্ঞতাপ্রসূত। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সরকার তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীতসন্ত্রস্ত। সে কারণে বেসামাল বক্তব্য দিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার অশুভ প্রচেষ্টা করছে। কিন্তু দেশবাসী এ ব্যাপারে সচেতন রয়েছে।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক রাজনৈতিক নেতা বিদেশে অবস্থান করে নিজ দেশে গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছেন। তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন, যেদিন জাতীয়তাবাদী শক্তি বর্তমান অবৈধ সরকারকে বিদায় করে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করবে। সেদিন তারেক রহমান বিজয়ী বেশে লাখো মানুষের ভালোবাসা নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন। এ ব্যাপারে সরকারের অবাস্তব রাজনৈতিক বিতর্ক না তোলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
তিনি বলেন, তারেক রহমান যদি ওই দেশে রাজনৈতিক আশ্রায় নেন তা হলেও তার নাগরিকত্বে আঘাত আসবে না। যুক্তরাজ্য গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে বিশ্বাস করে। তারা তারেক রহমানকে এই অবৈধ সরকারের হাতে তুলে দেবে না।

তারেক রহমানের নাগরিকত্ব বিষয়ে গতকাল সুপ্রিম কোর্টের নিজ চেম্বারে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, পাসপোর্টে একটি মেয়াদ থাকে। মেয়াদ শেষ হলে পাসপোর্ট ইস্যু করবে কে? বাংলাদেশের সরকারের কাছ থেকেই তো তারেক পাসপোর্ট নিয়েছেন। ব্রিটিশ সরকার তো পাসপোর্ট ইস্যু করবে না। সে ক্ষেত্রে উনি (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) হয়তো প্রিজাম্পশন (ধারণা) করেছেন। এটা তো ধারণা হয় যে বাংলাদেশে উনার (তারেক রহমান) নাগরিকত্ব নেই। সেটা দেখাতেই ব্রিটিশ সরকারকে পাসপোর্ট দিয়েছেন। সুতরাং সেই পাসপোর্ট তিনি কেন দিলেন, সেটি কিন্তু প্রশ্নের বিষয়।

তিনি আরো বলেন, পাসপোর্ট জমার মাধ্যমে এখন তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বর্জন এবং ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন কি না তা দেখার বিষয়। এটি না জেনে আমাদের মনে হয় কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
তাহলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ধারণার ওপর নির্ভর করে কথা বলছেন কি না, জানতে চাইলে শফিক আহমেদ বলেন, উনি (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) শুধু বলেছেন পাসপোর্ট জমা হয়েছে। সিকোয়েন্স (পরিণাম) কী হয়েছে, তা কিন্তু বলেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *