সুন্দরবন রক্ষায় ইউনেস্কোকে চিঠি দিয়েছে জাতীয় কমিটি

Slider জাতীয়

310088_170

সুন্দরবন বিষয়ে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির জুলাই সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের ক্রমাগত উপেক্ষা নিরসনে ইউনেস্কোর পদক্ষেপ কামনা করে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি চিঠি দিয়েছে। গত ১২ এপ্রিল তারা ঢাকাস্থ ইউনেস্কার প্রধান বিট্রিকস কালদুন বরাবর এচিঠিটি দেয়া হয়।

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর-রুনি মিলনায়তনে ধ্বংসোন্মুখ সুন্দরবন রক্ষায় ইউনেস্কোর জরুরী পদক্ষেপের দাবীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল মুল বক্তব্য রাখেন। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ আবদুল মতিন, বাপা’র যুগ্মসম্পাদক শরীফ জামিল ও আলমগীর কবির, সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. মোজাহেদুল ইসলাম মুজাহিদ।

ইউনেস্কা বরারর দেয়া চিঠির ব্যাপারে অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বিস্তারিত তুলে ধরে জানান, সুন্দরবন বিষয়ে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির জুলাই সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সমুহ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার ক্রমাগত উপেক্ষা করে চলেছেন। রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ অব্যহত রয়েছে কিন্তু তার মারাত্বক ক্ষতিকর প্রভাব নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না।

আর কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষাও করা হয়নি। তাছাড়া বনের পাশে যথেচ্ছ বৃহাদাকার শিল্প প্রতিষ্টান নির্মাণ কাজ চলছে। এব্যাপারে সুন্দরবন কমিটির পক্ষ থেকে দেয়া চিঠির সাথে একটি প্রতিবদেন যুক্ত করা হয়েছে, যাতে উদ্বেগের মূল কারণগুলি উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউনেস্কা বরারর দেয়া চিঠি দেয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বলা হয়ে থাকে সুন্দরবন নিয়ে আমাদের কি স্বার্থ আছে? আমি এব্যপারে বলতে চাই আমাদের একটাই স্বার্থ যে সুন্দরবন আমাদের নানান ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সাহায্য করে থাকে, তাকে রক্ষা করতে হবে। রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ নানান ধরণের পরিবেশ বিধবংসী প্রকল্প থেকে সুন্দরবন রক্ষাই আমাদের স্বার্থ। কোনো আবেগের বশবর্তী হয়ে এদাবি করছি না।

সুলতানা কামাল আরো বলেন, সুন্দরবন বিনাশী একের পর এক সরকারী পদক্ষেপে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। এসব কার্যক্রমের ফলে বনের উপর অবধারিত ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বাংলাদেশের সকল সম্পর্কের মানুষ ও সারাবিশ্ব তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সুন্দরবন বিনাশী এসকল কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে গত বছর জুলাই মাসে জাতিসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠান ইউনেস্কো’র ৪১ তম সভায় পরিস্কার ভাবে বলেছে বাংলাদেশের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে একটি কৌশলগত পরিবেশ প্রভাব সমীক্ষা না করে বাংলাদেশ যেন সে এলাকায় কোন প্রকার শিল্পায়ন নিয়ে অগ্রসর না হয়।

তারা আরো বলেছেন, সুন্দরবনের নদীগুলোর পানি প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য উজান দেশের সাথে যৌথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে; বনের নদীগুলোতে নৌপরিবহন বৃদ্ধি ও ড্রেজিং করার পূর্বে পরিবেশগত প্রভাব নিরুপন করতে হবে। কিন্তু সরকার এসব পরামর্শ না মেনে, বরং তার উল্টো পদক্ষেপ গ্রহন করছেন।

তিনি বলেন, সুন্দরবন সংরক্ষণে ইউনেস্কোর বিজ্ঞান ভিত্তিক, সুচিন্তিত, পরিস্কার মতামত ও শতসমূর্হ বাস্তবায়নে আমাদের সরকারী মহল নির্বিকার। তাই এই শর্তগুলো সরকার যথাযথভাবে মানছে কিনা, সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা ইউনেস্কোকে একটি চিঠি দিয়েছি।

তিনি ইউনেস্কোকে পাঠানো চিঠির সারমর্ম তুলে ধরে এবিষয়ে চিঠির দাবীগুলো তুলে ধরেন।
ক) জুলাই ২০১৮ মাসে অনুষ্ঠেয় বিশ^ ঐতিহ্য কমিটির ৪২তম সভায় সুন্দরবনকে আলোচ্য বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যাতে বিশ^ ঐতিহ্য স্থলের সম্ভাব্য ঝুঁকিসমূহ পূণর্বিবেচনা ও একে বিপদাপন্ন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করণের সময় পার হয়ে যাচ্ছে কিনা তার মূল্যায়ন।

খ) ‘কৌশলগত পরিবেশসমীক্ষা’ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ যেমন বঙ্গোপসাগর ও পশুর নদী দিয়ে কয়লা পরিবহন জরুরী ভাবে স্থগিত করা।

গ) বিশ্ব ঐতিহ্য কনভেনশনের ধারা ৬.৩ মোতাবেক অন্য কোন দেশের অভ্যন্তরে কোন‘বিশ্ব ঐতিহ্য স্থল’ ক্ষতিগ্রস্থ না করার বিধানের প্রেক্ষাপটে ভারত কীভাবে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজে যুক্ত হয়েছে তা জানাতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো।

ঘ) বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৌশলগত সমীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত অর্থ বিনিয়োগকারীদেরকে রামপাল ও পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সহ কোন বৃহৎশিল্পে বিনিয়োগ না করার আহ্বান জানানো।

ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, আমরা আশা করবো বিশেষ মহলের স্বার্থ রক্ষা না করে, দেশের সম্পদ-পরিবেশ ও জনস্বার্থে সুন্দরবন বিনাশী কার্যক্রম বন্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নেবেন।

শরীফ জামিল বলেন, সুন্দরবনকে বাঁচানোর স্বার্থে দেশের জনগন ও ইউনেস্কোসহ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক মহলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর প্রতি মনোযোগী হওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *