গাজীপুরে বিএনপির প্রার্থী হাসান না মান্নান?

Slider রাজনীতি

untitled-1-recovered_46

 

 

 

 

 

 

 

 

 

স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট, গাজীপুরঃ

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিতেও রয়েছেন একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলের পাঁচ নেতার পক্ষ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হলেও বেশি আলোচনায় আছেন বর্তমান মেয়র এম এ মান্নান এবং সাবেক সংসদ সদস্য হাসান সরকার।

তবে পাঁচ নেতাই বলছেন, যাকেই ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হবে, তার পক্ষেই সবাই কাজ করবেন।

এমনিতে গাজীপুরকে আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে ধরা হয়। তবে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্যা খানকে এক লাখেরও বেশি ভোটে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেন বিএনপির এম এ মান্নান।

নেতারা জানান, বর্তমান মেয়র এম এ মান্নানকেই আবার বিএনপির প্রার্থী করার সম্ভাবনা বেশি। আর কোনো কারণে তাকে প্রার্থী করা না গেলে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা হাসান সরকারের।

তবে এই দুই জন ছাড়াও শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সালাউদ্দিন সরকার, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতা সোহরাব উদ্দীন এবং কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত হোসেন সরকারও মনোনয়ন চাইবেন।

১৫ মে ভোট ধরে এরই মধ্যে খুলনার সঙ্গে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এবার দলীয় প্রতীকে হবে ভোট। তাই আলাদা আমেজ আছে নির্বাচনী এলাকায়।

এবার ভোটের তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে শুরু হয়েছে নানা হিসেব নিকেশ। গতবারের মতোই আওয়ামী লীগে আজমত উল্যাহ ও জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়ন নিয়ে নিজেদের মধ্যে ‘লড়াই’ শুরু করে দিয়েছেন।

নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুরের মেয়র এম এ মান্নান বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন জেলে রয়েছেন। এ অবস্থায় নির্বাচন এবং প্রার্থিতার বিষয়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা মেনেই আমি নির্বাচনী মাঠে নামব।’

নির্বাচনের জন্য অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বিএনপি এখন আরও ঐক্যবদ্ধ দাবি করে মেয়র বলেন, তাকে দলের মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করার জন্য পুরো প্রস্তুত রয়েছেন।

তবে বিএনপির এই নেতা শারীরিক অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে ভর্তি। এর আগে বিভিন্ন সময় অসুস্থ থাকায় তিনি মেয়র পদে তার অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেননি বলে মনে করে বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় তিনি নির্বাচনী প্রচারে কতটুকু নামতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় আছে তাদের।

অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী হাসান উদ্দীন সরকার বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে লড়াই করার তার যেমন প্রস্তুতি রয়েছে, তেমনি ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে জেতার অবস্থায়ও রয়েছে বিএনপি।

হাসান বলেন, ‘গতবারের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে রয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে বা বর্তমান মেয়রকে মনোনয়ন দিলে তা নিয়ে তাদের কোনো বিরোধ হবে না।’

মেয়র মান্নান পাঁচ বছরের মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই ছিলেন বরখাস্ত হয়ে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রাণঘাতী নাশকতার অগুণতি ঘটনা ঘটেছে তার নির্বাচনী এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে।

আর এসব ঘটনায় নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যেই ৩০টিরও বেশি মামলা হয় মান্নানের বিরুদ্ধে। প্রায় দুই বছর কারাগারে থাকার পর আইনি লড়াইয়ে দায়িত্ব পেয়েও নানা কারণে নগরের উন্নয়নে আশানুরূপ কাজ করতে পারেননি মান্নান।

কাজ করতে না পারার কথা স্বীকার করেন বিএনপি নেতারাও। তবে এ জন্য তারা বর্তমান মেয়রের ব্যর্থতার বদলে তার বরখাস্ত থাকার বিষয়টিই সামনে নিয়ে আসছেন।

তবে মেয়রের বিরোধীরা এমন যুক্তিতে সন্তুষ্ট থাকতে চান না। তারা বলছেন, ভোট দিয়ে নাগরিকরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেন কাজের জন্য। সেই কাজ করতে পারলে নগরবাসী হতাশ হবে এটাই স্বাভাবিক।

বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগেও মনোনয়ন প্রত্যাশী চার জন। তবে গতবারের মতোই দুই প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান এবং জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে দ্বৈরথ শুরু হয়ে গেছে। বিএনপির আলোচিত দুই নেতার তুলনায় আওয়ামী লীগে আলোচিত দুই নেতার মধ্যে ‘লড়াই’ বেশি জোরাল। তারা একে অন্যকে ছাড় দিতে চাইছেন না।

বড় দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ছাড়াও মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আশায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিলবোর্ড ও পোস্টার টাঙ্গিয়েছেন জাসদের মহানগর সভাপতি রাশেদুল হাসান রানা ও তার সমর্থকরা।

রাশেদুল হাসান রানা বলেন, ‘প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের বাইরে মেয়র পদে যোগ্য নেতা চাইছেন নগরবাসী। এ জন্যই আমি নির্বাচনী মাঠে আছিন।’

শুক্রবার বিকালে চান্দনা চৌরাস্তায় জাসদের এক সভায় রানাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন দলটির সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

এর বাইরে ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও হেফাজত ইসলামের গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমানও নির্বাচনে প্রার্থী হবেন জানিয়েছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ১২ এপ্রিল। আর প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ এপ্রিল। মহানগরে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশনে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *