অসুস্থ হলে হাতে ব্যাগ, গলায় স্টেথিসকোপ ঝুলিয়ে চিকিৎসক বাসায় হাজির। এ দৃশ্য নাটক-সিনেমায় আগে খুব দেখা যেত। তবে সত্যিই এখন চিকিৎসক বাসায় আসবেন।
পরীক্ষামূলকভাবে অলওয়েল নামের একটি প্রতিষ্ঠান বাসায় গিয়ে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালু করেছে। রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, কলাবাগান, শুক্রাবাদ ও ফার্মগেটে এই সেবা দেওয়া হয়।
ফিনল্যান্ড প্রবাসী এম এম আফতাব হোসেইন এর মূল উদ্যোক্তা। দেশের বাইরে থাকায় মা-বাবাকে চিকিৎসক দেখানো নিয়ে ঝামেলায় পড়তেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বাসায় এসে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমের বিষয় ভাবতে থাকেন। দেশে থাকা আরও সাত বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন অলওয়েল। গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে এটি এখনো পাইলট প্রকল্প হিসেবে চলছে।
উদ্যোক্তাদের একজন মোজাহেদুল হক আবুল হাসানাত বলেন, ‘প্রাইমারি হেলথের বিষয়গুলোতেই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। মূলত জেনারেল প্র্যাকটিশনার চিকিৎসকদের কাজটা হয় অলওয়েলের মাধ্যমে।’ তিনি আরও বলেন, লম্বা সিরিয়াল ও ঢাকার জ্যাম ঠেলে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছানো কষ্টকর। বয়স্ক রোগী হলে সমস্যা আরও বেশি হয়। দীর্ঘদিনের রোগীরা সবাই কোনো না কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে থাকেন। কিন্তু এরপরও ছোটখাটো কোনো চিকিৎসাসেবার জন্যই অলওয়েল। তবে জরুরি কোনো সেবা তাঁরা দেন না। এ ব্যাপারে মোজাহেদুল বলেন, ‘রোগীর অবস্থা জানার পর যদি আমরা বুঝি যে জরুরি সেবা দিতে হবে, তখন হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিই।’
অলওয়েল থেকে চিকিৎসক পেতে ০৯৬৬৬৭৬৬০০০ নম্বরে ফোন করতে হবে। ফোনে প্রথমে রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানা হবে। ফোন ধরবেনও একজন চিকিৎসক। রোগীর অবস্থা বুঝে একজন চিকিৎসক ও সঙ্গে একজন সহকারীকে রোগীর বাসায় পাঠানো হবে। মোহাম্মদপুরে অলওয়েলের অস্থায়ী অফিস থেকে এর কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
মোজাহেদুল বলেন, অলওয়েলে এখন ২০ জন চিকিৎসক আছেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে প্রত্যেক চিকিৎসকের সনদ তাঁরা যাচাই করে নিয়েছেন। এ ছাড়া রোগীর সঙ্গে ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
এখানে দুই পালায় (শিফট) দুজন করে চিকিৎসক থাকেন। সকাল আটটা থেকে বেলা তিনটা এবং তিনটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত সেবা কার্যক্রম চলে। রাজধানীর সব এলাকায় এখনো এ সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। মোহাম্মদপুর থেকে ৩০ মিনিটের দূরত্ব এমন যেকোনো জায়গাতেই অলওয়েল চিকিৎসক পাঠাবে। চিকিৎসক বাসায় গিয়ে সেবা দেওয়ার পরেই ফি নেওয়া হয়। অলওয়েলের ফি ৬০০ টাকা। চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে লাইসেন্স পেতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদনের কথা জানান মোজাহেদুল।
সেবা গ্রহীতা শায়লা হাবিব অলওয়েল সম্পর্কে বলেন, ‘ডাক্তার যে এখন বাসায় আসবেন, এটা চিন্তাও করা যায় না। এদের ডাক্তাররা খুবই জুনিয়র কিন্তু ব্যবহারে আমি মুগ্ধ। বেশ অনেকক্ষণ সময় দিয়েছেন, যেটা আমাদের দেশে হয় না।’ তিনি বলেন, এ ধরনের সেবা থাকা জরুরি। তবে ব্যবহার ও সেবার মান যেন না কমে।