পোড়া বস্তিতে আকাশটাই শামিয়ানা

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

3d3b0e83c1c9ae1f6dd4e280e238c8ec-5aae58c2f1f09

ঢাকা: কালচে হয়ে যাওয়া মেঝে। তার চারপাশে ভাঙা টিন কোনো রকমে ঠেস দেওয়া। মাথার ওপরে একটি কাপড়ের ছাউনি। তার মধ্যে শাহিদা বেগম ছেঁড়া একটি কাপড় জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে অন্যের দেওয়া কাপড় দিয়েই দিন চলছে তাঁর। দুবেলা খাবার ছাড়া আর কিছুই জোটেনি।

মিরপুর ১২ নম্বরে পল্লবীর ইলিয়াস মোল্লা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায় সপ্তাহ হতে চলল। খাবার ছাড়া তেমন কোনো সাহায্য মেলেনি বস্তিবাসীর। ১১ মার্চ রোববার দিবাগত রাত তিনটায় ইলিয়াস মোল্লা বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি ইউনিট ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সোমবার সকাল সাতটার পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এ ঘটনায় একজন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
আজ রোববার দুপুরে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা পলিথিন ও ভাঙা টিন দিয়ে খুপরি বানিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা নিজের বাসার কাছে কিছু জায়গা করে দিয়েছেন। সেখানে থাকছেন কেউ কেউ। পেয়ারা বেগম গৃহকর্মীর কাজ করেন। দুই মেয়ে নিয়ে এই বস্তিতে থাকেন। আধা পোড়া ও ভাঙা টিন দিয়ে ঘর দাঁড় করিয়েছেন। মেয়েদের নিয়ে অন্য কোথাও যেতে সাহস করেন না।
বস্তির ভেতরে ঢুকলেই সাহায্যের জন্য একেকজন ছুটে আসেন। খাবার পাচ্ছেন, কিন্তু তাঁদের ঘর লাগবে। পর্যাপ্ত কাপড়ও নেই। শাহিদা বেগম বলেন, ‘স্কুল-কলেজের পোলাপাইন আইসা কিছু পুরান কাপড় দিয়া গেছে। তা দিয়া কোনো রকম চলতাছি।’ স্থানীয় সংসদ সদস্য আগুন লাগার পরা থেকে তাঁদের দুপুর ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা করছেন।
১৩ মার্চ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বস্তি পরিদর্শন করেন। সেখানে গিয়ে তিনি ১০০ টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান। তবে বস্তিবাসী সে সম্পর্কে জানেন না। এখন পর্যন্ত চাল বা টাকা নিয়ে কেউ তাঁদের কাছে যায়নি।
বাসস্থানের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মশা। আবুল হোসেন নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘একে তো মাথার ওপর কিছু নাই, তার লগে মশার যন্ত্রণায় ঘুমাইতে পারি না।’ দিনে রোদ আর রাতে মশা। পলিথিন বা কাপড়ের ছাউনিতে এ চৈত্রের তীব্র রোদ মানছে না।

পোড়া বস্তিতে নিজ উদ্যোগে একজন ঘর তুলছেন ভাড়া দেওয়ার জন্য। মিরপুর ১২, ঢাকা, ১৮ মার্চ। ছবি: প্রথম আলোলাকি আক্তারের স্বামী অসুস্থতার জন্য তেমন কিছু করতে পারতেন না। টুকটাক কাজে দিন চলে যেত। কিন্তু আগুনে ঘরের সব পুড়ে ছাই। কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘এক কাপড়ে ছিলাম তিন দিন। পরে লোকজন আইসা কাপড় দিছে। তার একটা জামা ভাগে পাইছি।’ তিনি আরও বলেন, খাবার হিসেবে খিচুড়ি, ভাত, মাংস দেওয়া হয়। কিন্তু ছোট বাচ্চাদের নিয়ে বিপদে পড়েছেন।
বস্তিতে এখন গ্যাস, বিদ্যুৎ–সংযোগ নেই। পুরুষেরা টয়লেটের জন্য নিজেদের মতো ব্যবস্থা করে নিলেও মেয়েরা সমস্যায় পড়েছেন।

বস্তিবাসীর এই হাল নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতির পুরো প্রতিবেদন এখন দপ্তরে পৌঁছায়নি। তাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের নির্মাণসহ নানা সামগ্রী দিতে দেরি হচ্ছে। প্রতিবেদন পেতে এত দেরি কেন? জবাবে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহম্মদ আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ার জন্যই প্রতিবেদন তৈরিতে দেরি হচ্ছে।’ তবে তিনি জানান, প্রতিবেদনটি শিগগিরই তৈরি হবে। আর ত্রাণ যাবে দ্রুত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *