পাঁচ সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে নানা হিসাব

Slider রাজনীতি

279910_195

 

 

 

 

প্রায় এক যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির দীর্ঘ দিনের দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন। এ নিয়ে দফায় দফায় দেশ জুড়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন আগামী জুলাই মাসে দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ায় বিএনপিকে এখন নতুন চিন্তায় ফেলেছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় আদালত পাঁচ বছরের সাজা দিলে সেদিনই কারাবন্দী হন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এই মুহূর্তে দলটির প্রধান লক্ষ্য খালেদা জিয়ার মুক্তি। যদিও অতীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট স্থানীয় সব নির্বাচনেই অংশ নিয়েছে। কিন্তু জুলাই মাসে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণার পর বিএনপিতে চিন্তাভাবনা চলছে। নানা হিসাব নিকাশ কষছেন সিনিয়র নেতারা। নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে দলটি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। সেই সাথে দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে চলমান কর্মসূচিতে ভিন্নতা আনতে চাইছে বিএনপি। এসব ব্যাপারে গত রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সিনিয়র নেতারা বৈঠকও করেছেন বলে জানা গেছে।

দলটির একাধিক নেতা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, ক্ষমতা জবরদখলকারী সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপিকে নানাভাবে ব্যস্ত রাখার কৌশল প্রয়োগ করে চলেছে। তবে স্থানীয় নির্বাচনে সরকারকে এককভাবে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেবে না বিএনপি এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। খালেদা জিয়াকে জেল থেকে মুক্তির আন্দোলনের পাশাপাশি এসব স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে বিজয় লাভ করতে কৌশলে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। দলীয় সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আন্দোলনের পাশাপাশি আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। সরকারকে এককভাবে ফাঁকা মাঠ ছেড়ে দেয়া হবে না।

জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে ইতোমধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রামে জনসভা করেছে বিএনপি। পর্যায়ক্রমে রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, রংপুরেও জনসভা করবে। ঢাকায় ১৯ মার্চ জনসভার জন্য তৃতীয়বারের মতো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে দলটি। কিন্তুএখনো অনুমতি পায়নি। চলমান কর্মসূচিতে ভিন্নতা আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। খুব শিগগিরই তা ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি বিশাল জনসভার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি।

গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আগামী জুলাই মাসে দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হবে। জানা গেছে, গাজীপুরে ৪ সেপ্টেম্বর, খুলনায় ২৫ সেপ্টেম্বর, রাজশাহীতে ৫ অক্টোবর, সিলেটে ৮ অক্টোবর ও বরিশালে ২৪ অক্টোবর নির্বাচনের পাঁচ বছর পূর্ণ হবে। এ অবস্থায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ৯ এপ্রিল থেকে ৫ অক্টোবর, খুলনায় ৩০ মার্চ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর, বরিশালে ২৭ এপ্রিল থেকে ২৩ অক্টোবর, সিলেটে ১৩ মার্চ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ও গাজীপুরে ৮ মার্চ থেকে ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বিএনপি নেতাদের মতে, অতীতে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির অবস্থান অনেকে শক্তিশালী। এমতাবস্থায় বিএনপি স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে। শুধু তাই নয়, এসব সিটিতে দলটি আবারো জয়ের টার্গেট নিয়ে কাজ করছে। এরই মধ্যে চলছে প্রার্থী বাছাইসহ নানা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। এ ছাড়া দলটির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা অনেক আগেই মাঠে নেমে পড়েছেন। তফসিল ঘোষণার পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে তারা মাঠে নামবেন। তারা জয় ধরে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টা করবেন। কেননা এ নির্বাচনকে তারা আগামী সংসদ নির্বাচনের টেস্ট কেস হিসেবেই ভাবছেন। যদিও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সিটি নির্বাচনে আলাদা প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জোট সূত্র জানিয়েছে।

পাঁচ সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই নির্বাচনের অর্থ হচ্ছে আওয়ামী লীগকে আরো পোক্ত করা। সুতরাং জনগণের এই ধরনের নির্বাচনের প্রতি খুব একটা সমর্থন থাকবে না। আমরাও এই নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণ করব কি না এটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে। বর্তমান যে পরিবেশ পরিস্থিতি আছে ও অবস্থা বিরাজ করছে তাতে বর্তমানে নির্বাচন করার মতো কোনো পরিবেশ নেই। নির্বাচন কমিশন পাঁচ সিটি করপোরেশন জুলাই মাসের মধ্যে নির্বাচন করবে বলে জানিয়েছে। এটা আপনাদের চাপে রাখার কৌশল কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার এবং তাদের তৈরি করা যে নির্বাচন কমিশন এদের লক্ষ্য একটাই তা হচ্ছে আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় বসানো এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা। আমরা মনে করি, যতক্ষণ পর্যন্ত না নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হচ্ছে, সব দলের সমান অধিকার দেয়া হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে বলে আমরা মনে করি না।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খুব দ্রুত বিষয়টি দলীয় ফোরামে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আমাদের শঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ সব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। বর্তমানে আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। তবে ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে দলীয় ফোরামে আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত হবে। সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি বিএনপির আছে বলে তিনি জানান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনেও কোনোটিতে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে। তবে প্রার্থী বাছাই করা আছে। তফসিল ঘোষণা হলে দলীয় প্রার্থীর নাম প্রকাশ করা হবে। জামায়াত পৃথকভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও জোটগতভাবেই সিটি নির্বাচনের প্রার্থী দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *