মোস্তাফিজুর রহমান দীপ;গাজীপুর অফিসঃ
আত্মত্যাগের স্মরণে, ১৯৭৩ সালে ভাস্কর আবদুর রাজ্জাক এ ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত এটিই প্রথম ভাস্কর্য।
এখান থেকেই প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হওয়ায়, এটি গাজীপুরের গর্ব ও অহংকার। উল্লেখ্য আবদুর রাজ্জাক মতিঝিলের শাপলা চত্তর ভাস্কর্যটিও নির্মাণ করেন।
জাগ্রত চৌরঙ্গীর দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যায়যে, ডান হাতে গ্রেনেড, বাঁ হাতে রাইফেল। লুঙ্গি পরা,খালি গা, খালি পা আর পেশিবহুল বাংলা মায়ের দামাল ছেলে দাঁড়িয়ে আছে স্মৃতি হয়ে জাগ্রত চৌরঙ্গীতে । এ ভাস্কর্যটি গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর চান্দনা চৌরাস্তার ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কের ঠিকমাঝখানে অবস্থান করছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মাটির নিচ থেকে উপর পর্যন্তজাগ্রত চৌরঙ্গীর উচ্চতা ৪২ ফুট ২ ইঞ্চি। যা ২৪ ফুট ৫ইঞ্চি স্তম্ভের উপর মূল ভাস্কর্যটি। ইট, রড, ধূসর সিমেন্ট,সাদা সিমেন্ট ইত্যাদি দিয়ে ঢালাই করে নির্মিত । এভাস্কর্যটি ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩ নম্বর সেক্টরের ১০০ জন ও ১১ নম্বর সেক্টরের ১০৭ জন শহীদ সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বহন করে।বিদেশীদের মতো নিজের দেশের স্মৃতিকে ধরে রাখারজন্য কিছু ব্যতিক্রমীমানুষের চিন্তার বহি:প্রকাশ ঘটেছে জাগ্রত চৌরঙ্গীতে। এটি স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিকে ধরে রাখতে বীরদের বীরত্ব আর দেশের
ইতিহাসের কাহিনী বহন করে। জাগ্রত চৌরঙ্গী মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের অসামান্য আত্মত্যাগের স্মরণে নির্মিত তেমনি একটি ভাস্কর্য।
যেভাবে জাগ্রত চৌরঙ্গীর গাজীপুরে মাথা তুলেদাঁড়ালো:-
শহীদ হুরমত উল্যাহ, মনু খলিফাদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্যে মেজর জেনারেল আমিন আহমেদ চৌধুরী একটি ভাস্কর্য তৈরির উদ্যোগ নিলেন। তিনিদেখা করলেন আর্ট কলেজে সবে মাত্র চালু হওয়া ভাস্কর্য বিভাগেরপ্রধান আব্দুর রাজ্জাকের সাথে। তিনি ছিলেন মুলতচিত্র শিল্পী, ভাস্কর্য তৈরির প্রস্তাবে তিনি রাজিহয়ে গেলেন। ভাস্কর্যটি বানাতে প্রয়োজন ছিলো তিরিশ হাজার ইট, ইটের গুড়া, রড আর প্রায় তিনশো ব্যাগ সিমেন্ট। মেজর জেনারেল আমিন চৌধুরীর সুবেদারকেজানাতেই তিনি ছয় হাজার ইট ও ছয়শো ব্যাগ সিমেন্ট ম্যানেজ করে ফেললেন।
১৯৭৩ সালে এক বছরে আর্ট কলেজেই ভাস্কর্যটি তৈরি হলো। এর ভাস্কর ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক, সহকারি ভাস্কর হামিদুজ্জামান ও প্রকৌশলী ছিলেন আব্দুর রশিদ। এছাড়া জয়নুল আবেদিনরাও এগিয়ে এসেছিলেন,করেছিলেন সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য। তখন ঢাকায় একটিমাত্র ক্রেন ছিলো। ভাস্কর্যটি ক্রেনে উঠিয়ে আনাহলো জয়দেবপুরে। আর্ট কলেজ থেকে এটিকে চৌরাস্তায় আনতে সময় লেগেছিলো দুই দিন। ভাস্কর্যটি স্থাপনে মসজিদের ইমাম বাধা দিতে এলে বিভিন্ন কথা বলে তাকে বোঝানো হলো।সংসদ ভবন নির্মানের জন্যে আনা মার্বেল পাথর থেকে সুবেদার সাহেব অলিখিত ভাবে প্রায় ২০০ টি মারবেলপাথর নিয়ে আসেন। মুলত ভাস্কর আব্দুর রাজ্জাক অনেক কষ্ট ও শ্রম দিয়েছেন এই ভাস্কর্যটি নির্মানের পেছনে।তিনি দিন রাত মেজর জেনারেল সাহেবের বাসায় থেকে কাজ করে গিয়েছেন। এভাবেই ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরের ৮ বা ৯ তারিখে সৃষ্টি হলো দেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত প্রথম স্মৃতিস্থম্ভ “জাগ্রত চৌরঙ্গী”।
বাঙালী জাতীর গর্বের সই ভাস্কর্য আজ অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে।আমরা বিজয়কে স্মরন করি,স্বাধীনতাকে স্মরন করি,একুশ কে স্মরন করি,
ইতিহাসের সাথে মিশে থাকা এই সকল ভাস্কর্য রক্ষা করা আবশ্যক।
অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ভাস্কর্যের স্থান টি হয়ে উঠেছে মূত্র ত্যাগ এর স্থান।
প্রশাসন, সচেতন নাগরিক সমাজ এর সামনে দিনের আলোতে ঐতিহ্যবাহী জাগ্রত চৌরঙ্গি আজ পরিনত হয়েছে মূত্রালয় হিসেবে।
এক মাত্র জনসচেতনতাই পারে এই সকল ঐতিহ্য কে ধরে রাখতে।