আকস্মিক নেপালের রাস্তায় সেনাবাহিনী, কিন্তু কেন!

Slider জাতীয় বিচিত্র


ডেস্ক: রাজনীতিতে কোনো উত্তেজনা নেই। নেই কোন বিক্ষোভ মিছিল, জ¦ালাও পোড়াও। তা সত্ত্বেও নেপালের রাজপথে টহল দিচ্ছে মিলিটারি পুলিশ। নিউ বানেশ^র, থাপাথালি, কালিমাটি এবং মহারাজগঞ্জে তাদেরকে টহল দিতে দেখা গেছে। আকস্মিক তাদেরকে রাস্তায় টহল দিতে দেখে জনগণের প্রশ্ন- কেন, কি কারণে হঠাৎ রাস্তায় সেনাবাহিনীর টহল? উত্তরে সেনাবাহিনী বলেছে, সারাদেশে লকডাউন চলছে। এ সময়ে সেনাবাহিনীর পোশাক পরে কেউ যাতে সেই লকডাউন ভঙ্গ করতে না পারে তা প্রতিরোধ করতেই রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। এ খবর দিয়েছে অনলাইন কাঠমান্ডু পোস্ট।

সেনা মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বিজ্ঞান দেবপান্ডে বলেছেন, মিলিটারি পুলিশ হলো নেপালের সেনাবাহিনীর নিজস্ব আইন প্রয়োগকারী ইউনিট।
তাদেরকে মোতায়েন করা হয়েছে নিউ বানেশ^র, থাপাথালি, কালিমাটি ও মহারাজগঞ্জে। লকডাউনের সময়ে কেউ যাতে সেনাবাহিনীর পোশাকের অপব্যবহার করতে না পারে, লকডাউন ভঙ্গ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারা জনসাধারণের ওপর নজরদারি চালাবে না। রোববার রাস্তায় এভাবে মিলিটারি পুলিশের সদস্যদের দেখা গেছে। ওদিকে নয়া পত্রিকা রিপোর্ট করেছে, সেনাবাহিনীর পোশাকের মতো একটি শার্ট পরে বয়স্ক একজন মানুষ ব্লাডব্যাংকের দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেনা সদস্যরা তাকে থামিয়ে ওই শার্ট খুলতে বাধ্য করেছে। ওই পত্রিকাটির প্রথম পৃষ্ঠায় ওই ব্যক্তির শার্টহীন একটি ছবি প্রকাশ করেছে। এ সময় তার গায়ে শুধু একটি গেঞ্জি ছিল। তাকে সেনা সদস্যরা ঘেরাও করে নিয়ে যাচ্ছেন।

এ ছবি প্রকাশ হওয়ার পর ব্যাপক জনসমালোচনা দেখা দিয়েছে। অনেকে প্রশ্ন করছেন, কে নেপালের সেনাবাহিনীকে ব্যারাক থেকে বেরিয়ে আসার অনুমতি দিয়েছে। এমন সমালোচনার জবাবে বিজ্ঞান দেবপা-ে বলেছেন, তারা সেনা সদস্যদের এমন আচরণের জন্য দুঃখিত। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সমালোচনার মুখে সেনা সদস্যরা তাদের অস্ত্র পরিহার করেছে সোমবার।

এমন অবস্থায় যখন করোনা মহামারি চলছে তখন রাস্তায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ মানুষ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সেনাবাহিনীর সশস্ত্র সদস্যদের উপস্থিতিকে কেউ স্বাগত জানায় নি এবং তাদের এ কর্মকান্ড অবৈধ। নেপালি আইন অনুযায়ী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ক্লিয়ারেন্স ছাড়া ব্যারাক ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারে না নেপালের সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালের স্থানীয় প্রশাসন আইন অনুযায়ী, জরুরি অবস্থার অধীনে আইন শৃংখলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর সমর্থন চাইতে পারেন জেলা প্রধান কর্মকর্তা।

কাঠমান্ডুর প্রধান জেলা কর্মকর্তা জনকরাজ দাহাল কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেছেন, সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কোনোই সিদ্ধান্ত হয় নি। আবার সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু সেনা সদস্যরা শুধু জনগণের ওপর নজর রাখছে তাই তাদেরকে মোতায়েনের আগে কোনো অনুমতি প্রয়োজন নেই। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শান্ত বাহাদুর সুনার বলেছেন, যদি জনগণ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে কাজ করার জন্য সেনাবাহিনীকে ব্যারাকের বাইরে বের করে আনার প্রয়োজন হয় শুধু তখনই নিরাপত্তা পরিষদ বা স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতির দরকার হয়। তিনি আরো বলেছেন, সেনা সদস্যদের অপ্রয়োজনীয় চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে শুধু মিলিটারি পুলিশ। যারা এই পোশাকের অপব্যবহার করছে তাদের প্রতিরোধ করছে। জনসাধারণকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়া হয় নি তাদের, যদি না কেউ সেনাবাহিনীর পোশাকের অপব্যবহার করে। তারা শুধু বাহিনীর মধ্যে শৃংখলা রক্ষার জন্য ব্যারাক থেকে বেরিয়ে এসেছে।

কিন্তু নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বেসামরিক সরকারের অনুমতি ছাড়া সেনা সদস্যদের এভাবে বাইরে বের করে আনতে পারে না এই বাহিনী। স্থানীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক গেজা শর্মা ওয়াগলে বলেছেন, সেনা সদস্যরা ব্যারাক ছাড়তে পারেন শুধু নিরাপত্তা পরিষদ বা স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি থাকলে। এর বাইরে আর কোনোভাবে তারা ব্যারাক ছেড়ে বেরিযে আসতে পারে না। যদি তাদের পোশাকের অপব্যবহার হয়ে থাকে তাহলে তারা নিজস্ব বাহিনী না নামিয়ে নেপালি পুলিশের সহযোগিতা চাইতে পারতো। কিন্তু ব্যারাক ছেড়ে এভাবে বেরিয়ে আসায় তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তকে কোন যুক্তি দিয়ে প্রতিপন্ন করা যায় না।

এ ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলোতেও নাড়া লেগেছে। ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী দল উভয় পক্ষের আইন প্রণেতারা বলেছেন, বেসামরিক শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে সেনাবাহিনীকে। ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (এনসিপি) আইন প্রণেতা দীপক প্রকাশ ভট্ট বলেছেন, বেসামরিক প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে এভাবে রাস্তায় সেনাবাহিনীর বেরিয়ে পড়া ঠিক নয়। এ বিষয়টি দেখা উচিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের। তা না হলে বিষয়টি দেখা উচিত পার্লামেন্টের স্টেট অ্যাফেয়ার্স কমিটির।

বিরোধী নেপালি কংগ্রেস দলও একই রকম মন্তব্য করেছে সোমবার। এ দলের এমপি প্রকাশ মানসিং বলেছেন, বেসামরিক পুলিশ বাহিনীর কাজ সেনারা করতে পারে না। আমরা তো দেখেছি রাস্তায় জনসাধারণকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সেনারা। আসলে এই সরকারের উদ্দেশ্যটা কি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *