সিরিয়ায় ইসরাইলের প্রবল হামলা

Slider সারাবিশ্ব

292914_12

 

 

 

 

সিরিয়ার অভ্যন্তরে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সিরিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যাটারি, সেনা ঘাঁটি ও ইরানি অবস্থানগুলোর ওপর শনিবার এসব হামলা হয় বলে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিরয়েছে। হামলায় ক্ষয়ক্ষতির তাৎক্ষণিক বিবরণ পাওয়া যায়নি। তবে এর ফলে আরো ব্যাপক সঙ্ঘাত সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সিরিয়ার বিমানবিধ্বংসী গোলায় তাদের একটি এফ-১৬ জঙ্গিবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর তারা এই হামলা চালায়। এ তাদের আটটি জঙ্গিবিমান অংশ নেয়। সিরিয়া থেকে তাদের ভূখণ্ডে ইরানি ড্রোন অনুপ্রবেশ করেছিল বলেও দাবি করেছে ইসরাইল।

সিরিয়ায় ইরানের অবস্থান সংযত রাখতে সে দেশে প্রায়ই ইসরাইল হামলা চালিয়ে থাকে। ১৯৮২ সালের পর এবারই সিরিয়ায় কোনো ইসরাইলি বিমান বিধ্বস্ত হলো।

সিরীয় সেনাদের গুলিতে ইসরাইলি জঙ্গিবিমান ভূপাতিত

বিবিসি ও আলজাজিরা

সিরিয়ার সেনাবাহিনী ইসরাইলের একটি এফ-১৬ জঙ্গিবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। সিরিয়ার অভ্যন্তরে অবস্থিত ইরানি স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালাতে গেলে বিমানটিকে গুলি করে ধ্বংস করা হয়। সিরিয়া থেকে উড্ডয়নকৃত একটি ইরানি ড্রোন ইসরাইলের আকাশসীমায় প্রবেশ করার জবাবে ইসরাইল ওই হামলা চালিয়েছে।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র লে. কর্নেল জোনাথন কনক্রিকাস জানান, তাদের একটি জঙ্গি হেলিকপ্টার সিরিয়া থেকে ইসরাইলে প্রবেশকারী একটি ইরানি ইউএভি ড্রোনকে সফলভাবে বাধা প্রদান করে। এরপর ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনী সিরিয়ায় ইরানি নিয়ন্ত্রিত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। এ সময় সিরিয়ার সেনারা ব্যাপক বিমানবিধ্বংসী গোলা নিক্ষেপ করলে তাদের একটি এফ-১৬ জঙ্গি বিমান ভূপাতিত হয়। তবে দুইজন পাইলট নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ দিকে জঙ্গিবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর সিরিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ও দেশটিতে থাকা ইরানি লক্ষ্যস্থলগুলোতে ব্যাপক বিমান হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। এতে দুই পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা ক্রমেই আরো তীব্রতর হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ইসরাইলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে জেটটি বিধ্বস্ত হয়। বৈরুত থেকে আলজাজিরার সংবাদদাতা জানান, গত এক বছরে ইসরাইল সিরিয়ায় অসংখ্যবার বিমান হামলা চালিয়েছে; কিন্তু এই প্রথম তাদের একটি জঙ্গি বিমান খোয়ালো। তিনি বলেন, এই প্রথম ইসরাইল সিরিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর কথা স্বীকার করল। এর আগে তারা সিরিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালালেও হামলার লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে কোনো কথা বলত না, এমনকি হামলার কথাও স্বীকার করত না।

ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, শনিবার সিরিয়া থেকে পাঠানো ইরানের একটি ড্রোন (চালকবিহীন বিমান) ইসরাইলের আকাশসীমায় প্রবেশ করলে সেটিকে আটকে দেয়া হয়। জবাবে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। পাল্টা জবাব দিতে সিরিয়া বিমানবিধ্বংসী গোলা ছোড়া শুরু করে। ওই সময় ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলের অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ‘রেড এলার্ট সাইরেন’ বাজতে শুরু করে। স্থানীয়রা জানান, তারা ওই সময় জর্দান ও সিরিয়া সীমান্তে বড় বড় বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। সিরীয় সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়, শনিবার ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাব দিতে একটি সেনাঘাঁটি থেকে একাধিক জঙ্গিবিমানে গুলি করা হয়েছে।

ইসরাইলি আগ্রাসন
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পরে একজন সামরিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায় যে, ইসরাইল সিরিয়ার মধ্যাঞ্চলে একটি সেনাঘাঁটিতে আগ্রাসন চালিয়েছে। দামেস্কের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, এই হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। এরই পাল্টা ব্যবস্থা সিরিয়া কয়েকটি ইসরাইলি জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করেছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। সিরিয়ার ব্যাপক গোলাবর্ষণের ফলে ইসরাইলে বিমান হামলার সাইরেন বাজানো হয়।

সিরিয়ার সরকারপন্থী মিলিশিয়ারা এক বিবৃতি জানায়, এখন থেকে ইসরাইল তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মারাত্মক পাল্টা ব্যবস্থা দেখতে পাবে। তারা আরো জানায়, ইসরাইল যে ড্রোনটি ধ্বংস করেছে সেটি আইএসের বিরুদ্ধে নজরদারি করছিল।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা এই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে এবং আরো ব্যবস্থা গ্রহণের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ইসরাইলের মুখ্য সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রোনেন ম্যানেলিস বলেন, এই ঘটনার জন্য ইসরাইল সরাসরি ইরানকে দায়ী করছে।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এটি ইসরাইলি ভূখণ্ডে ইরানের মারাত্মক হামলা। ইরান এই অঞ্চলকে যুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং কিভাবে এর অবসান ঘটবে তা তারা জানে না। এ ঘটনার জন্য যারাই দায়ী হোক, তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে। জেরুসালেম থেকে আলজাজিরার ইমরান খান জানান, এই ঘটনার বড় ধরনের তদন্ত করা হতে পারে। ইসরাইল এত দিন মনে করে আসছে, আরব বিশ্বের আকাশে তাদের টহলের একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে। এই ঘটনা তাদের সে গর্বকে চূর্ণ করে দিয়েছে। তাই এই তদন্ত। তবে এ ঘটনার জন্য ইসরাইল এখন ইরানকে দায়ী করে দেশটির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বেকা উপত্যকায় বিস্ফোরণ
সিরিয়া সীমান্তের কাছে বেকা উপত্যকায় বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসরাইল সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে ইরানি উপস্থিতির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। ‘তারা লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া হিজবুল্লাহর কাছে অস্ত্র পৌঁছার সুযোগ দেবে না। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মস্কো সফর করেছেন এবং সেখানে তিনি সিরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহারের সবুজ সঙ্কেত রুশদের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি
সিরিয়া থেকে ওড়ানো একটি ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইসরাইল। ইসরাইলি সেনাসূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়েছে, ড্রোন ওড়ানোর জবাবে শনিবার সিরিয়ায় ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে তারা। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আধিপত্যের রাজনীতিতে ইসরাইল আর ইরানের অবস্থান পরস্পরের বিপরীতে। ইরান সিরীয় যুদ্ধে আসাদ সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ইসরাইল সবসময়ই তাদের ওপর ইরানি হামলার আশঙ্কার কথা প্রচার করে আসছে। গত বছরের ডিসেম্বরে জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত যেকোনো সময় ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর হুমকি দেন।
শনিবার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরাইলকে লক্ষ্য করে সিরিয়া থেকে ওড়ানো একটি ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করেছে ইসরাইলি জঙ্গি হেলিকপ্টার। ইসরাইলি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অল্প সময়ের মধ্যেই ড্রোনটি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরপরই এটি নজরদারিতে ছিল বলে দাবি করা হয় বিবৃতিতে। ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করার পাশাপাশি সিরিয়ায় ইরানি স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হামলা চালায়। হামলার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *