‘আমি ফিরে আসব। কাঁদার কিছু নেই। চিন্তা করো না, সবাই শক্ত হও।’ কথাগুলো বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার। ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের উদ্দেশে বাসা ছাড়ার সময় স্বজনদের কাছ থেকে এভাবে বিদায় নেন। পরে এই আদালত এতিমখানার তহবিল তছরুপের দায়ে তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
বিএনপি প্রধানের ছেলে তারেক রহমানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিদেশি অনুদানের ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের দায়ে মা-ছেলের এই সাজা। সাজা হওয়ায় খালেদা জিয়া ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
বিএনপি ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি। শেখ হাসিনা তখন আরও পাঁচ বছরের জন্য শাসনভার পান। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। বিএনপি এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য তৈরি।
ঢাকায় বেশ জোর গুঞ্জন আছে যে এই মুহূর্তে যদি বাংলাদেশে নির্বাচন হয়, শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ হেরে যাবে। যদিও দলীয় প্রধানকে কারাগারে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। দলটির সামনে সুযোগ এসেছে কালো ছায়া দূর করার। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে এর সূচনা হয়েছিল। বিএনপি প্রধানের কারাদণ্ড হয়তো সেখান থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ নিয়ে এসেছে। এর মাধ্যমেই দলটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
তবে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি এবং এই দুই নেত্রীর দ্বন্দ্ব এমনটা হতে দেবে না। রায় ঘোষণার সকাল থেকে ঢাকাকে কার্যত অচল করে রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। সংঘাতের পূর্বাভাস পেয়ে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক টহলে ছিলেন। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীতে একটি সেনানিবাসের উদ্বোধন করেন। সেটার নাম ‘শেখ হাসিনা সেনানিবাস’। এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়।
শেখ হাসিনার হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ হতাশ। খালেদা জিয়ার শাসনামলেও এ দেশের জনগণ এমনটাই ভাবত। তখন এই ক্ষমতা ছিল খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের হাতে। খালেদার ২০০১-২০০৬ সালের শাসনামলে তারেক সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তারেক বর্তমানে লন্ডনে পলাতক আছেন।
বিএনপি যদি রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে আরও পাঁচ বছর দূরে থাকে, তাহলে দলটি দেশজুড়ে তাদের প্রভাব হারাবে। একই সঙ্গে পঙ্গু হয়ে যাবে তাদের আদর্শিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী। এতে শেখ হাসিনা আরও শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর হবেন। যেমনটা হয়েছিলেন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।