আর শুধু দলীয় সংগঠন বা সংঘ পরিবারের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে নয়া পন্থা নিতে হচ্ছে বিজেপির থিঙ্ক-ট্যাঙ্ককে। তাই বাংলার নাগরিক সমাজকে পাশে পেতে অরাজনৈতিক সংগঠন খুলে ফেলল বিজেপি।
পশ্চিমবঙ্গে এই সংগঠনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নব বঙ্গ’। রবিবারই আত্মপ্রকাশ ঘটেছে এই সংগঠনের। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, অন্য রাজ্যেও নাগরিক সমাজ গঠনের ভাবনা রয়েছে বিজেপির।
২০১৯ সালের ভোট দুয়ারে কড়া নাড়ছে। এরই মধ্যে সাম্প্রতিক সমীক্ষা ইঙ্গিত করেছে নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা পড়তির দিকে। পায়ের তলার মাটি সরছে, একটু একটু করে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে বাড়ছে রাহুল গান্ধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা। তাই রাহুল ও মমতার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে এবার নাগরিক সমাজকে পাশে পেতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। সেই আঙ্গিকেই এই নতুন সংগঠন গড়ার ভাবনা।
২০১৮-তে স্থানীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। তারপর ২০১৯-এ কেন্দ্রীয় লোকসভা। আর ২০২১ ফের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন। নরেন্দ্র মোদি আবার ২০২১-এ নতুন ভারত গঠনের স্বপ্ন দেখছেন। এ জন্য বিজেপির ক্ষমতায় থাকা জরুরি। তা নিশ্চিত করতে চাইছেন তিনি। কিন্তু শুধু সংগঠন ও সংঘের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না মোদী-শাহরা। তাঁরা বুঝছেন ক্ষমতায় থাকতে গেলে অরাজনৈতিক সংগঠন গঠন করা জরুরি। সেই কারণেই রাজ্যে রাজ্যে অরাজনৈতিক সংগঠন খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন অমিত শাহ। পশ্চিমবঙ্গেও এই নির্দেশ এসেছিল। সেই নির্দেশ মেনেই পশ্চিমবঙ্গে ‘নব বঙ্গ’ গঠন করা হচ্ছে।
এই নাম দিয়েই বিজেপি বুঝিয়ে দিতে চাইছে, তাঁদের পরবর্তী লক্ষ্য পশ্চিম বঙ্গ দখল। নতুন বঙ্গ গঠন করতে তাঁরা ভরসা করছেন ‘নব বঙ্গে’র ওপর। সেই কারণেই সাযুজ্য রেখে দলের নামকরণ করা হয়েছে। এই ‘নব বঙ্গে’র সঙ্গে দলের রাজ্য সংগঠনের কোনো যোগ থাকবে না। তবে সংগঠনের মাথায় থাকবেন বিজেপি নেতারা। শীর্ষ নেতৃত্বেরও কেউ কেউ থাকতে পারেন। থাকবেন আরএসএসের নেতারাও।
এই ‘নব বঙ্গে’র আহ্বায়ক করা হয়েছে সৌমেন পুরকায়স্থকে। তিনি জাতিসঙ্ঘে কর্মরত ছিলেন। তাঁর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। রবিবার হো চি মিন সরণির রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেন্টারে ‘নব বঙ্গ’ আত্মপ্রকাশ করেছে। এই সংগঠনের কাজ হবে মূলত কেন্দ্রের তথা নরেন্দ্র মোদীর কাজের প্রচার করা। রাজ্যে তথা দেশের যুবসমাজকে আকৃষ্ট করা এই সংগঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য।
বিজেপি বুঝতে পেরেছে, শুধু হিন্দু ভোট জয় সম্ভব নয়। সমাজের অন্য অংশের সমর্থনও প্রয়োজন। তাই নয়া পন্থায় নয়া যুদ্ধ জয়ের ‘গৌরচন্দ্রিকা’ সেরে রাখলেন মোদী-শাহরা।