পদ্মাবতীর আড়ালে জাত-পাতের রাজনীতি?

Slider বিনোদন ও মিডিয়া সারাবিশ্ব

288315_118

 

 

 

 

ভারতে যে ফিল্মটিকে ঘিরে গত কয়েকমাস ধরে তুমুল দাঙ্গাহাঙ্গামা চলছে সেই ‘পদ্মাবত’ বৃহস্পতিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে অবশেষে মুক্তি পেয়েছে – কিন্তু ভারতের অন্তত চারটি রাজ্যে পরিবেশক বা হল-মালিকরা ছবিটি দেখানোর ঝুঁকিই নিচ্ছেন না।

এদিকে রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের নানা প্রান্তে বৃহস্পতিবার পদ্মাবতের বিরুদ্ধে নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, প্রতিবাদকারীরা রাস্তা অবরোধ করে নানা জায়গায় সমাবেশও করেছেন।

কিন্তু বিপুল বাজেটে তৈরি এমন একটি ছবি এত দীর্ঘ সময় ধরে এই বাধার মুখে পড়ায় পদ্মাবত বা সার্বিকভাবে বলিউডের অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়ছে?

আসলে গত প্রায় এক বছর ধরে পদ্মাবতী বা পদ্মাবত নিয়ে ভারতে যে তর্কবিতর্ক বা সহিংসতা চলছে, তার পর বৃহস্পতিবার ছবিটি পুলিশ পাহারা নিয়ে হলে মুক্তি পেয়েছে ঠিকই – কিন্তু রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও গোয়াতে ছবিটি এখনও দেখার কোনো সুযোগ নেই, আর অন্যত্রও গন্ডগোলের ভয়ে লোকে বড় একটা হলমুখো হচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে বক্স অফিসে ছবিটির লাভের মুখ দেখা বেশ কঠিন বলেই বিশ্বাস করেন বলিউড ব্যবসার হাঁড়ির খবর রাখা ইন্দু মিরানি।

মিরানি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “নির্মাতারাই জানাচ্ছেন ছবিটি বানাতে খরচ হয়েছে এক শ’ আশি কোটি রুপি। ধরে নিচ্ছি এর মধ্যে শ্যুটিং ভন্ডুল হওয়া, মুক্তি পিছিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়তি সুদ গোনা – এসব খরচও ধরা আছে।”

“এখন এই বিপুল বাজেটের একটা ছবির লাভের মুখ দেখতে হলে অন্তত নির্মাণ খরচের আড়াইগুণ ব্যবসা করতে হবে, মানে অন্তত সাড়ে চারশো কোটি। এখন মুক্তির দিনে চারটে রাজ্যে ছবিটা যদি দেখাই না-যায় – অথচ আমরা জানি পাইরেটেড কপি ঠিকই চলে আসবে – সেখানে ওই অঙ্কের টাকা তোলাটা খুব মুশকিল।”

বলিউডের সাংবাদিক তপন বক্সি আবার বিশ্বাস করেন, দু-চার দিন পরে গন্ডগোল থিতোলেই পদ্মাবতের ব্যবসা তুঙ্গে উঠবে।

তিনি বলছিলেন, “আমি ছবিটা দুচারদিন আগেই দেখেছি, আর এটাও বুঝেছি যে যা-নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে, তার ছিঁটেফোটাও আসলে এই ছবিতে নেই। বরং ছবিটায় যা আছে, তা হলো ভরপুর মনোরঞ্জন।”

“ফলে এখন লোকে হামলার ভয়ে পদ্মাবত দেখতে যেতে ভয় পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু কদিন বাদেই মুখে মুখের প্রচারে যখন রটে যাবে যে এই ছবি নিয়ে বিতর্কর কিছু নেই – তখন আন্দোলনও থিতিয়ে যাবে আর লোকেও ছবিটা দেখতে যাবে। ফলে আমার ধারণা দু-পাঁচ দিন বাদেই এই ছবির ব্যবসার হাল ফিরবে”, বলছিলেন বক্সী।

তবে পদ্মাবতের নির্মাতারা লাভ করতে পারুন বা না-পারুন, এই ছবিকে ঘিরে গত কয়েক মাস ধরে যা ঘটল তাতে বলিউড আগামী দিনে কোনো স্বাধীন ভাবনার পিরিওড ফিল্ম বানাতেই ভয় পাবে বলে মনে করছেন নামী অভিনেতা প্রকাশ রাজ – যিনি সম্প্রতি বারে বারেই বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন।

রাজ বলেছেন, “কীভাবে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে তার ধরনটা দেখুন। হ্যাঁ, রাজপুতরা যদি মনে করেন তাদের সংস্কৃতির কোনও অপব্যাখ্যা হয়েছে তাহলে অবশ্যই তারা প্রতিবাদ জানাবেন – তবে তার জন্য সেন্সর বোর্ড আছে, দেশে আইন-আদালত আছে।”

“তার বদলে যখন মাথা কেটে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়, সেটে গিয়ে আগুন ধরিয়ে পরিচালককে চড় মারা হয় সেটা কিন্তু মেনে নেওয়া যায় না। শিল্পীর স্বাধীনতায় এটা হল সন্ত্রাস আমদানি করা, তাদের সোজাসুজি ভয় দেখানো!”

অনেকেই বলছেন, পদ্মাবত বিতর্কে বলিউডের সবচেয়ে বড় ক্ষতি এটাই – যে মুম্বাইয়ের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এরপর কোনও সাহসী ছবি বানাতেই ভয় পাবে।

‘বক্স অফিস’ ম্যাগাজিনের সাবেক সম্পাদক ইন্দু মিরানি আবার অন্য একটা বিষয় ভেবেও বিস্মিত।

তিনি বলছিলেন, “পদ্মাবতের নির্মাতা সংস্থা ভায়াকম এইটিন কিন্তু শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির কোম্পানি – যিনি আবার প্রধানমন্ত্রী মোদির অতি ঘনিষ্ঠ। তার পরও কীভাবে পদ্মাবত এই ধরনের বিক্ষোভের মুখে পড়ল এবং কেন্দ্রে ও রাজ্যে এতগুলো বিজেপি সরকার প্রায় হাত গুটিয়ে রইল, সেটা এখনও একটা রহস্যই। এর উত্তর জানা নেই আমারও।”

তবে রাজপুত ভাবাবেগের রাজনীতিই যে বিজেপি ও কংগ্রেসের মতো দেশের প্রধান দলগুলোকে এই বিতর্কে নীরব রেখেছে, তা বুঝতে অবশ্য বেশি অসুবিধে হয় না।

বলিউডের অর্থনীতি আজ মাশুল দিচ্ছে ভারতের সেই জাতপাতের রাজনীতিরই – পদ্মাবত যার শুধু একটা উপলক্ষ মাত্র!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *