মো: আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন ; উত্তরা প্রতিনিধি :
গরম কড়াইয়ে পুঁটি মাছ ভাজছেন স্ত্রী, পাশে বসে তা খাচ্ছেন স্বামী, আর তাদের ছোট্ট সন্তান হামাগুড়ি দিয়ে পৌঁছে গেছে রেললেইনের উপর। ট্রেনের সাইরেনে শিশুটি একটু সরতেই সেই লাইন দিয়েই দ্রুতগতিতে কমলাপুরের দিকে ছুটে গেল ট্রেনটি। শিশুটির পরিবারও নির্বিগ্নে।
রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে তেজগাঁও স্টেশন হয়ে বিএফডিসির রেলগেট পযর্ন্ত দু’পাশে গড়ে উঠা অবৈধ বস্তিতে এভাবেই ঝুকিঁ নিয়ে বসবাস হাজারো নিম্নবিত্ত পরিবারের। রেললাইন ঘেষে ঘর, আর দরজার সামনে দিয়েই ছুটে যায় দ্রুতগতির ট্রেন। প্রচন্ড শব্দ আর মুত্যু ঝুঁকি। তার মধ্যেই চলছে গোছল থেকে রান্না-খাওয়া অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনের সবকিছুই। ৯-১০ বছরের শিশুরা সারাক্ষণ ছোটাছুটি করছে লাইনের উপরেই। বড়রাও বসে আছেন নিশ্চিন্তায়।
এই বস্তিতে বসবাস করা শিশুরা জানায় কোন সময়ই ভয় লাগে না তাদের। ছোট থেকে দেখে দেখে বড় হযেছে তারা। আর তাদের বাবা মা বললেন কি করবো ভাই গরীব মানুষ যাবো কোথায় সন্তানদের নিয়ে,আমরা তো দিন আনি দিন খাই। এত দূর্ঘটনা ঘটার পরও তবে কেন এই ঝুঁকি পূর্ন্য বসবাস ঠেকানো যাচ্ছে না সরেজমিনে অনুসন্ধানে তাই গ্রাম বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রেললাইনের দু’পাশ দখল হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। একটি চক্র রেললাইনের দুপাশে দখল বানিজ্য করে নিজের পকেট ভারী করে মৃত্যুও সাথে বসবাস করতে বাধ্য করে নিন্মবিত্তদের। জানা গেছে, প্রতিটি দখলের পিছনে রয়েছে অসাধু কিছু রেলওয়ের সদস্যরাও। যারা এই দখলবাজঁদের মদত দিচ্ছে ও মাস শেষে মাসোহারা পাচ্ছে। দেখা গেল রেললাইনের দুপাশের বস্তিতে নিম্নবিত্তের লোকজনই বেশি বসবাস করেন। প্রতিদিন-প্রতিটি মুহূর্ত তাদের চলতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। নিম্নবিত্ত এসব লোকজন নিজেরাই বলছেন, পুনর্বাসন না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কথা হয় এক পরিবারের জামিরন নামের এক মহিলার সাথে তিনি জানালেন,জন্ম থেকেই এ বস্তিতে, বেড়ে উঠেছেন, বিয়েও হয়েছে, মা হয়েছেন এ বস্তি ঘরেই। দুটি ছেলে আরেকটি মেয়ে তার। ছোট একটি মুদি দোকান চালান। স্বামী করেন দিনমজুরের কাজ। বললেন বস্তিতে বসবাস ঝুকিঁপূর্ন্য তবে এখানে টাকার বিনিময়ে একটি চক্র সব সুবিধা করে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ কররেও পুনরায় আবারো তারা এই বস্তি ঘর তৈরি করে ঘর ভাড়া দিতে শুরু করে দেয়।
পলিথিন বা টিনের খুপড়িতে আছে টেলিভিশনও। রেলের জমির ওপর গড়ে ওঠা এ অবৈধ ঘরের বাসিন্দারা থাকেন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে। রয়েছে ওয়াসার অবৈধ চোরাই পানির লাইন ও অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ ।
বস্তিতে থাকা আরো অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেল, রেল কর্তৃপক্ষ বারবার উচ্ছেদ করলেও কিছুদিন পর আবার সেখানেই গড়ে ওঠে এ বস্তি। কারন অন্য কোথাও যাবার জায়গা নেই বলে এমন ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস তাদের। তবে সবার দাবী যদি তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলে এখানে আর থাকবেন না তারা।
মগবাজার রেলগেট থেকে শাহজাহানপুর পর্যন্ত লাইনের দু’পাশে একইভাবে গড়ে উঠেছে আরও বস্তি। রয়েছে অসংখ্য দোকান। রেললাইনের ওপরেই সকাল-বিকাল বসছে বাজার। তাদেরও দাবি, এমন ঝুঁকির কাজ যেন না করতে হয় সেজন্য পুনর্বাসন করতে হবে।অন্যদিকে রেলের জমিতে আশ্রয় নেওয়া নিম্নবিত্ত এ মানুষগুলোর অনেকেই এখন জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে। মাদক,ছিনতাই,চুরির সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে বহুদিন থেকে এই বস্তিতে থাকা কিশোর ও যুবকদের বিরুদ্ধে। তবে নিরাপদ আশ্রয় আর কাজের সুযোগ পেলে অপরাধের সাথে জড়িত হওয়া এই কিশোররা হয়ে উঠবেন দেশের সম্পদ, এমন কথাও জানান বস্তিবাসীরা।
রেলের ঢাকা বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা এসএম রেজাউল করিম পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তার কথাই তুলে ধরলেন। পুনর্বাসন না করলে উচ্ছাদে কাজ হবে না বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।