এ কেমন বাবা-মা! ১৩ সন্তানকে শেকলে বেঁধে না খাইয়ে মারছিলেন!

Slider বিচিত্র

174815parents1১৩ জনই অপুষ্টিতে ভুগছে, অপরিচ্ছন্ন। বয়স দুই থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। কয়েকজনকে আবার শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে বিছানার সঙ্গে। এই অবস্থায় ১৩ জনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করল পুলিশ। তাদের মা-বাবাই এ ভাবে দিনের পর দিন আটকে রেখেছিল তাদের। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অভিযুক্ত অভিভাবকদের।

লস অ্যাঞ্জেলসের দক্ষিণ-পশ্চিমে পেরিস নামে ছোট একটি জনপদে বাস টারপিন দম্পতির। তাঁদের বাড়ি নিয়ে সন্দেহ করার মতো কিছু ছিল না। সামনে অনেকটা প্রশস্ত জায়গা, গাছপালা রয়েছে, পাশে গাড়ি দাঁড় করানো। এই বাড়ি থেকে রবিবার হঠাতই একটা ফোন পেয়েছিল পুলিশ। ফোনের ওপারে এক ভয়ার্ত কিশোরীর কণ্ঠ। তার কাছ থেকে টারপিনদের আশ্চর্য কাহিনি শুনে অবাক হয়ে যায় পুলিশ।

এরপর তারা অভিযান চালায় সেই বাড়িতে। ভেতর ঢুকে পুলিশকর্মীরা চমকে উঠেছিলেন। এই বাড়িতে দিনের পর দিন ধরে আটকে রাখা হয়েছে ১৩টি ছেলেমেয়েকে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে বিছানার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল শেকল দিয়ে। শেকলে লাগানো ছিল তালা। তাদের আধপেটা খাইয়ে রাখা হয়েছে, তাই কারো শরীর-স্বাস্থ্যের বিকাশ হয়নি। দেখলেই বোঝা যায় , তারা রুগ্ন, দুর্বল। নিজের সন্তানদের এভাবে ক্ষুধার্ত রেখে, অত্যাচার করার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অভিভাবক ডেভিড অ্যালেন টারপিন (৫৭) ও লুইস আনা টারপিন (৪৯)-কে।

বাবা-মার নজর এড়িয়ে ১৭ বছরের কিশোরী পুলিশকে মোবাইল থেকে ফোন করেছিল। শুনিয়েছিল তাদের করুণ কাহিনি। রিভারসাইড শেরিফ বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৭ বছর বয়স হলেও মেয়েটির চেহারা ১০ বছরের মতো। তার সাহসেই এতদিনের অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়েছে ১৩ ভাইবোন। শুধু আধপেটা খাবার দিয়ে রাখাই নয়, স্নান করতে দেওয়া হত না তাদের। নোংরা জামাকাপড় পরে থাকতে বাধ্য হত তারা।

পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ির ভেতরটা বেশ অন্ধকার ছিল। স্যাঁতস্যাঁতে একটি জায়গায় এদের খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ভারী দুর্গন্ধ ছিল আশপাশে। বিস্ময়ের এটাই, এই বন্দিদের সাতজন প্রাপ্তবয়স্ক। তাঁদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে।

প্রত্যেককেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালের প্রধান মার্ক উফারের মন্তব্য, ‘আমাদের কর্মীদের কাছে এদের চিকিৎসা করাটাও হৃদয়বিদারক ব্যাপার। নিজের চোখকেও বিশ্বাস করা যাচ্ছে না, এমনটাও ঘটতে পারে!’ টারপিন দম্পতির মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন তাঁরা এ ভাবে নিজেদের সন্তানদের বন্দি করে রেখেছিলেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। টেক্সাসে বহু বছর কাটানোর পর ২০১০-এ এই দম্পতি ক্যালিফোর্নিয়ায় আসে। ডেভিড একাধিকবার দেউলিয়া হয়ে গিয়েছেন। যদিও পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ডেভিড একাধিক ভালো সংস্থায় চাকরি করেছেন। পুলিশের অনুমান, এতগুলি সন্তান থাকায় সংসারের খরচ বহন করতে পারছিলেন না তিনি।

টারপিনের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, বছর পাঁচেক এই দম্পতির সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাতই হয়নি। ফেসবুকে অবশ্য সন্তানদের সঙ্গে টারপিন দম্পতির হাসিমুখের ছবি দেখা যাচ্ছে। প্রতিবেশীদের বয়ান এই ছবির সঙ্গে মিলছে না। তাঁদের বক্তব্য, বাইরে দেখাই যেত না টারপিন দম্পতি ও তাদের ছেলেমেয়েদের। বাড়িতেই সম্ভবত তারা পড়াশোনা করত। কিন্তু, বাইরে খেলতে বের হতো না। কী উদ্দেশ্যে এমন হীন কাজ করেছে টারপিন দম্পতি, তা জানতে ধৃত দুজনকে জেরা করবে পুলিশ।

সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *