ডিএনসিসি কর্মকর্তার ময়লা চাঁদাবাজি!

Slider ঢাকা

021252kalerkantho-01-01-2018-20

 

 

 

 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উত্তরা এলাকার পাঁচটি ওয়ার্ডের ময়লা সরকারি ডাম্পিং স্টেশনে ফেলতে দিচ্ছেন না ডিএনসিসির স্থানীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মোহসিন আহমেদ। গতকাল শনিবার সকাল থেকে ময়লা সংগ্রহকারী স্থানীয় ভ্যানগাড়িগুলো গেটে দাঁড়িয়ে থাকলেও ডাম্পিং স্টেশনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এই অবস্থা দেখা গেছে। ওই সময় ৩৫টি ময়লার গাড়ি দেখা গেছে ডাম্পিং স্টেশনের গেটে।

ভ্যানগাড়ির চালকরা বলছেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক থাকতে ডাম্পিং স্টেশনে ময়লা ফেলতে কোনো টাকা-পয়সা লাগত না। কিন্তু এখন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্থানীয় সুপারভাইজার ভ্যানগাড়িপ্রতি তিন হাজার টাকা দাবি করছেন। ওই টাকা না দেওয়ায় ডাম্পিং স্টেশনে ময়লা ফেলতে দিচ্ছেন না তিনি।

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ কয়েকজন ভ্যানচালক কালের কণ্ঠকে বলেন, এলাকায় এলাকায় ঘুরে ভ্যানগাড়িতে করে ময়লা সংগ্রহ করে তাঁরা এসে ডাম্পিং স্টেশনে ফেলেন। কিন্তু হঠাৎ গতকাল ময়লা ফেলতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁরা বলেন, এখন ভ্যানগাড়িগুলো এভাবে পড়ে থাকলে আজ রবিবার স্থানীয় বিভিন্ন এলাকার ময়লা কিভাবে পরিষ্কার করবেন?

কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, উত্তরা এলাকার তুরাগ ইউনিয়নকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৫২, ৫৩, ৫৩ নম্বরে বিভক্ত করা হয়েছে। ঘনবসতিপূর্ণ এই তিনটি ওয়ার্ডের জনসংখ্যা দুই লাখের বেশি। ওই তিনটি ওয়ার্ডের প্রতিদিনের বর্জ্য অপসারণে ৫০টির বেশি ভ্যানগাড়ি কাজ করছে। বেসরকারি উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে এসব ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে ডাম্পিং স্টেশনে ফেলা হচ্ছে।

প্রতিদিনের এসব বর্জ্য ভ্যানগাড়ির মাধ্যমে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের আজমপুর কাঁচাবাজারের পাশের ডাস্টবিন, ১২ নম্বর সেক্টরের ময়লার মোড় এবং ১০ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের স্লুইস গেটের পাশের ডাস্টবিনে ফেলে আসছিলেন ভ্যানগাড়িচালকরা। কিন্তু গতকাল সকাল থেকেই ডাস্টবিনে ময়লা ফেলতে দিচ্ছেন না ডিএনসিসির উত্তরা এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোহসিন আহমেদ।

ময়লা নিষ্কাশনের স্থানীয় উদ্যাক্তা মো. শহিদ মিয়া গতকাল বলেন, ‘২০০৩ সাল থেকে বর্তমান ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের ময়লা-আবর্জনা চারটি ভ্যানে করে পরিষ্কার করে আসছি। কিন্তু আজ (গতকাল) সকাল থেকে ময়লা ফেলতে দিচ্ছেন না ডিএনসিসির কর্মকর্তারা। ১০ নম্বরের ডাস্টবিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করলেও আমার ভ্যানগাড়ির কোনো ময়লা ফেলতে দিচ্ছে না।’

এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশেই ময়লা ফেলতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন শহিদ মিয়া। একই অভিযোগ স্থানীয় ময়লা নিষ্কাশনকারী মো. নাগর আলীরও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ময়লা নিষ্কাশনকারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতি ভ্যানগাড়ি থেকে তিন হাজার টাকা করে দাবি করেছেন মোহসিন সাহেব। টাকা না দিলে নাকি এখানে ময়লা ফেলতে দিবে না।’

ময়লা নিষ্কাশনকারী আবুল কাশেম বলেন, ‘বলছে, সিটি করপোরেশনের মধ্যে পড়েনি, তাই এখন ময়লা ফেলতে দেবে না। কিন্তু সিটিতে না পড়লে এলাকায় সিটি নির্বাচন হচ্ছে কেন?’ তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘মশার কামড় খাচ্ছি, কিন্তু ডাস্টবিনের তালা তিনি খুলে দিচ্ছেন না।’

ভ্যানচালক আতাউর রহমান, মো. কামাল হোসেন, সিরাজুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা নিয়ে প্রতিদিন সকালে ডাস্টবিনে ফেলেন তাঁরা। গতকাল সকালে ময়লা নিয়ে ডাস্টবিনের সামনে এসে দেখেন তালা মারা।

কয়েকজন চালক জানান, গাড়ির ময়লা পচে এখন প্রকট গন্ধ আসছে।

অনেকে নিরুপায় হয়ে রাস্তার পাশেই ময়লা ফেলে যাচ্ছে।

ডিএনসিসির ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর নতুন তিনটি ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, তাদের এলাকাটি আগে ইউনিয়নভুক্ত হলেও বেশ কয়েক মাস আগে ডিএনসিসির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব এলাকার ময়লা নিয়ে থাকে আটজনের স্থানীয় উদ্যাক্তা।

কামাড়পাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা আলাউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘অনেক জায়গায় চাঁদাবাজির কথা শুনেছি, এবার ময়লা ফেলতেও যদি চাঁদাবাজি চলে তাহলে মানুষ কোথায় যাবে?’

এ ব্যাপারে জানতে ডিএনসিসির উত্তরা এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মোহসিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস দিলেও তার কোনো সাড়া দেননি তিনি।

তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেখুন, হরিরামপুর ইউনিয়নটি এখন ডিএনসিসির তিনটি ওয়ার্ডে বিভক্ত হয়েছে। আগে যেখানে ময়লা ফেলত সেসব স্থানে ময়লা ফেলুক তারা। নতুন তিন ওয়ার্ডের ময়লা-আবর্জনা ফেললে সংশ্লিষ্টদের ওপর চাপ বেশি পড়ে যাবে। আর যেহেতু নির্বাচন হচ্ছে, নির্বাচন শেষে আমরা সমাধান বের করব।’

এর আগে ওসব এলাকার ময়লা এই ডাস্টবিনেই ফেলত—জানালে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এখানে ফেলত কি না আমি জানি না।’

আর তিন হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চাঁদা চেয়েছে এমন কোনো প্রমাণ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *