দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন শহরে সরকারের বিরুদ্ধে দুই দিনের বিরল বিক্ষোভের পর শনিবারও সরকারের সমর্থকেরাও রাজপথে বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভে গুলির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।
এ ছাড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে ব্যাপক ধরপাকড় করা হয়েছে।
গত কয়েক দিনে সরকারবিরোধী এবং সরকারপক্ষের পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে ইরান। বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হওয়া ছাড়াও বহু বিক্ষোভকারী জানিয়েছেন তারা তাদের মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ পাচ্ছেন না।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জনগণকে যেকোনো ধরনের ‘বেআইনি সমাবেশ’ এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অজ্ঞাত অ্যাকাউন্ট থেকে বিক্ষোভ আরও ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এরপর বহু লোকজনের মোবাইলের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ইরানি কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি, ‘বিশ্ব কিন্তু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ‘
বিক্ষোভ শুরু বৃহস্পতিবার, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মাশহাদ শহরে।
কে বা কারা বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইশাক জাহাঙ্গিরির ধারণা, দেশটির কট্টরপন্থী ও অতিরক্ষণশীল বিরোধীরা সম্ভবত প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভের উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু একপর্যায়ে তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
মাশহাদ শহরে বহু লোক রাস্তায় নেমে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ করে এবং হাসান রুহানির বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী তেহরান এবং কেরমানশাহ, ইস্পাহান, কোম, কাজভিন, হামেদান, রাসত শহরে। কেরমানশাহে ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে জলকামান ব্যবহার করে।
কোনো কোনো বিক্ষোভ থেকে ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের আগের রাজতন্ত্রের পক্ষে স্লোগান দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
২০০৯ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর এবারের বিক্ষোভই জন-অসন্তোষের সবচেয়ে ব্যাপক প্রকাশ। প্রথমদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে তা দেশটির ধর্মীয় অনুশাসন ও সরকারি নীতিবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নেয়। ক্রমে তা দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এসব বিক্ষোভ থেকে রাজবন্দীদের মুক্তি ও পুলিশি নির্যাতন বন্ধের দাবিও জানানো হয়।
সূত্র : বিবিসি ও সিএনএন