কর্মস্থলেই বোমা বানিয়েছিলেন আকায়েদ!

Slider সারাবিশ্ব

eb2b33b669329afc719a773db4154370-5a2f00e70b0c7

 

 

 

 

 

 

 

সোমবার স্থানীয় সময় সকাল সাতটা। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের সবচেয়ে বড় বাস টার্মিনালে যেতে হন্তদন্ত হয়ে ছুটছে মানুষ। টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে বাস স্টেশনে যাতায়াতের ভূগর্ভস্থ পথটি কিছুটা সরু। সেখানে মানুষের আনাগোনাও বেশি। হুট করেই বিকট শব্দ আর ধোঁয়া! শুরু হয়ে গেল চিৎকার ও মানুষের দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি।

ম্যানহাটনের পোর্ট অথোরিটি বাস টার্মিনালে দিনের শুরুটা ছিল এমনই। আতঙ্ক আর ভয়ের অনুভূতি কেড়ে নিয়েছিল সকালের স্নিগ্ধতা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জানা গেছে সন্দেহভাজন হামলাকারীর পরিচয়। পুলিশ বলছে, সন্দেহভাজন বোমা হামলাকারীর নাম আকায়েদ উল্লাহ। ২৭ বছরের এই ব্যক্তি বাংলাদেশি। সাত বছর আগে নিউইয়র্কে আসেন তিনি। ইদানীং থাকেন ব্রুকলিনে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা ও তদন্তকারী সংস্থাগুলো এখন এই সন্দেহভাজন হামলাকারীর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করছে। এই ব্যক্তির বিষয়ে কারও কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য থাকলে তা জানানোর আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ।

নিউইয়র্কের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে সিএনএন জানিয়েছে, কর্মস্থলে বিস্ফোরকটি তৈরি করেছিলেন আকায়েদ উল্লাহ। প্রাথমিক তদন্তে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আকায়েদ এটি স্বীকার করেছেন। তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ হয়নি। আকায়েদ ইচ্ছে করেই নির্দিষ্ট স্থানে বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছেন। বাস টার্মিনালে হামলার পর পরই পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তের পর তা নাকচ করা হয়।

নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নিলের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, আকায়েদ উল্লাহ যে বিস্ফোরকটি ব্যবহার করেন, সেটি তার শরীরে লাগানো ছিল। জেমস ও’নিল বলেন, বিস্ফোরকে ব্যবহৃত প্রযুক্তি উচ্চমানের ছিল না। তার কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের তার ও ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে।

নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি একটি বৈদ্যুতিক কোম্পানিতে কাজ করছিলেন আকায়েদ। সেখানে তার ভাইও কাজ করতেন।

পড়শিরা যা বলছেন: আকায়েদ ও তার পরিবার যে বাড়িতে থাকেন, ঠিক তার পাশেই থাকেন অ্যালান বুতরিকো। সিএনএনকে তিনি জানিয়েছেন, আকায়েদ থাকতেন ভূগর্ভস্থ কক্ষে। তার বোন থাকতেন দোতলায়। তার ভাইও থাকতেন একই ভবনে। বুতরিকো বলেন, গত দুই রাত ধরে আকায়েদের বাড়ি থেকে মারামারি, চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল।

বুতরিকো বলেন, ‘আমার ভাড়াটিয়ারা জানিয়েছেন, গত দুই রাত ধরেই এমন চলেছে। তাঁরা বলেছেন যে, কান্না ও গোঙানোর শব্দ শুনতে পেয়েছেন। তবে কি হয়েছে বুঝতে পারেননি। পুলিশেও খবর দেওয়া হয়নি।’

অ্যালান আরও জানান, বন্ধুসুলভ ছিলেন না আকায়েদ। তিনি বলেন, ‘সে একেবারেই বন্ধুসুলভ ছিল না। তার পরিবার একেবারেই অর্ন্তমুখী স্বভাবের। কারও সঙ্গেই খুব একটা কথা বলত না। তারা কেবল এখানে থাকত, ব্যস এটুকুই।’

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি সূত্রের বরাতে সিএনএন বলছে, গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড এ ধরনের হামলা চালাতে আকায়েদকে বাধ্য করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলের ‘অনুপ্রবেশ’ তিনি মেনে নিতে পারেননি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু ব্যাখ্যা করেননি তিনি।

অন্যদিকে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে আকায়েদের সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না – সেই বিষয়টি এখনো স্পষ্ট হয়নি। কিছু সংবাদমাধ্যম এ ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ করেছে। নিউইয়র্কের পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নিল বলেছেন, ‘আকায়েদ বিবৃতি দিয়েছে।’ কিন্তু সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে চাননি তিনি। তবে তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন বলেছে, এ বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

06040540b8a5858d529f20a44b9074a7-5a2f0176f3cb0

 

 

 

 

 

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, আকায়েদ উল্লাহর নিউইয়র্ক শহরে ট্যাক্সি ও লিমোজিন গাড়ি চালানোর লাইসেন্স ছিল। ২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ওই লাইসেন্সের মেয়াদ ছিল। ২০১৫ সালের মে মাসের পর ওই লাইসেন্স আর নবায়ন করা হয়নি। তবে শহরের ইয়েলো ট্যাক্সি বা উবার চালানোর লাইসেন্স তাঁর ছিল না।

গুরুতর আহত আকায়েদ উল্লাহকে এখন বেলেভু হাসপাতালে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিস্ফোরণে তার হাত ও পেটের কিছু অংশ পুড়ে গেছে। বিস্ফোরণে আরও চার ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তবে তাঁদের অবস্থা গুরুতর নয়।

সোমবারের হামলাস্থল পোর্ট অথোরিটি বাস টার্মিনাল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম বাস টার্মিনাল। প্রতিদিন নিউইয়র্ক থেকে নিউজার্সি পর্যন্ত বিভিন্ন বাস এই টার্মিনাল থেকে যাত্রী পরিবহন করে। এ ছাড়া গ্রেহাউন্ড ও পিটারপ্যানের মতো দূরবর্তী স্থানগুলোয় যাত্রী পরিবহনকারী বাসগুলোও এখান থেকেই ছেড়ে যায়। গড়ে প্রতি দিন এই বাস টার্মিনাল দিয়ে আড়াই লাখ যাত্রী যাতায়াত করেন।

93e17a3bb39b38ce4f95da592ef2641d-5a2e99ed7df63

 

 

 

 

নিউইয়র্কে চলতি বছরে এটি তৃতীয় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা। গত মার্চ মাসে মার্কিন সেনাবাহিনীর এক সাবেক সদস্য ছুরিকাঘাতে একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে হত্যা করেন। এ ছাড়া গত অক্টোবর মাসে এক উজবেক বংশোদ্ভূত অভিবাসী পথচারীদের ওপর ট্রাক চালিয়ে দিলে আটজনের মৃত্যু হয়। ওই দুই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এখন বিচার চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *