প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর সেরে ফেরার ৪৮ ঘণ্টা পরেই পদ্মার ওপর দিল্লি-ঢাকা যৌথ উদ্যোগে প্রস্তাবিত ‘গঙ্গা ব্যারাজ’ প্রকল্পটি কার্যত পরিত্যক্ত ঘোষণা করল বাংলাদেশে।
তিস্তা চুক্তির পাশাপাশি এই ‘গঙ্গা ব্যারাজ’-এর বিরোধিতাতেও সরব ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি ছিল, পদ্মায় এ ভাবে বাঁধ দেওয়া হলে মালদহ ও মুর্শিদাবাদে ভাঙন মাত্রাছাড়া হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে দিল্লি বার বার রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলতে উদ্যোগী হলেও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নবান্নের কর্তারা তা এড়িয়ে গিয়েছেন। মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দিয়ে রাজ্যের বিরোধিতা ও আশঙ্কার কথা কেন্দ্রকে জানিয়েও দিয়েছিলেন।
তবে বাংলাদেশের জলসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, গোয়ালন্দের কাছে পাংশায় প্রস্তাবিত ব্যারাজ প্রকল্পটি টেকনিক্যাল কারণেই বাতিল করা হল। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তির বিষয়ে তিনি কোনও কথা বলেননি। শুধু জানিয়েছেন, নতুন করে প্রযুক্তিগত খসড়া করে পাংশার বদলে অন্য কোনও জায়গায় এই ব্যারাজটি করা হবে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো মঙ্গলবার জানিয়েই দিয়েছেন ‘গঙ্গা ব্যারাজ’ প্রকল্পটি বন্ধ হচ্ছে না। এটা হবে। তবে কোথায় হবে, কী ভাবে হবে— সেটাই আসল কথা।’’
বাংলাদেশের জলসম্পদ মন্ত্রীর কথায়, ফরাক্কা ও তিস্তা ব্যারাজ নির্মাণ করে যে ভুল হয়েছে, সরকার আর তাঁর পুনরাবৃত্তি চায় না। ১৯৯৬-এ ভারতের সঙ্গে গঙ্গার জলচুক্তির পরে বাংলাদেশ পদ্মায় যে বাড়তি জল পাচ্ছে, তা ধরে রেখে কৃষি-সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য পদ্মায় ব্যারাজটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু মন্ত্রী আজ জানিয়েছেন, তাঁর নিজের মন্ত্রকের তৈরি সেই প্রকল্প-রিপোর্টটিতেই বিস্তর ‘টেকনিক্যাল ভুল’ ছিল। সে জন্যই প্রকল্পটি ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করা হচ্ছে। নতুন প্রকল্প তৈরির জন্য ফের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়া হবে বলে জলসম্পদ মন্ত্রী জানিয়েছেন।
এ দিনই সাংবাদিক সম্মেলন করে ভারত সফর নিয়ে শেখ হাসিনাকে তুলোধোনা করেছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। ক্ষমতায় এলে হাসিনার সই করে আসা চুক্তিগুলি তাঁর সরকার পুনর্বিবেচনা করবে বলেও তিনি ঘোষণা করেছেন।