ছেলে দিয়াজ ইরফানের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করার দাবিতে টানা ছয় দিন অনশন করেছিলেন মা জাহেদা আমিন। আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে—পুলিশ কর্মকর্তাদের এমন আশ্বাসে ২ ডিসেম্বর অনশন ভঙ্গ করেন তিনি। এর ঠিক ১৫ দিনের মাথায় গতকাল রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন দিয়াজ হত্যা মামলার ১০ আসামির ৭ জন। লিখিত বক্তব্যে তাঁরা বলেন, ‘চট্টগ্রামে মেয়র আজম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার নকশার অংশ এই মামলা।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু। তিনি দিয়াজ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। দিয়াজের লাশ আবার কবর থেকে তুলে তৃতীয় দফা ময়নাতদন্ত করার দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে দিয়াজের মৃত্যুর সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাউকে হয়রানি না করার দাবি জানান তিনি।
আসামিদের সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে দিয়াজের বড় বোন জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী গতকাল রাতে বলেন, পুলিশ তাঁদের বলেছে আসামিরা পলাতক। তাহলে তাঁরা প্রকাশ্যে কীভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মানসিকভাবে দুর্বল করতে সংবাদ সম্মেলনে বিষোদ্গার করা হয়েছে। যাতে তাঁরা দিয়াজের বিচারের দাবি থেকে সরে যান। যা-ই হোক না কেন, বিচারের দাবিতে তাঁরা অনঢ় থাকবেন।
গত বছরের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় নিজ বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে—এই অভিযোগ এনে ২৪ নভেম্বর তাঁর মা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু (বর্তমানে কমিটি বিলুপ্ত), সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ কমিটির দায়িত্বে ছিলেন প্রক্টর আনোয়ার হোসেন। এ কারণে ভূমি দখলকারীদের ইন্ধনে দিয়াজের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁকেও (আনোয়ার) আসামি করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, দিয়াজের মায়ের করা মামলায় সিআইডি তদন্তে আসামিদের কারও বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকে ভিত্তিহীন ও প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করেন আলমগীর টিপু। তিনি বলেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে তাঁরা জেনেছেন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ায় দিয়াজ আত্মহত্যা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহসভাপতি মনছুর আলম, আবদুল মালেক, যুগ্ম সম্পাদক মো. আরমান ও আবু তোরাব, প্রচার সম্পাদক রাশেদুল আলম, আপ্যায়ন সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ। তাঁরা সবাই দিয়াজ হত্যা মামলার আসামি।
দিয়াজের মরদেহের প্রথম ময়নাতদন্ত হয় গত বছরের ২১ নভেম্বর। ২৩ নভেম্বর পুলিশ জানায়, দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে—এমন আলামত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মেলেনি। পরে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর দিয়াজের লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দিয়াজকে শ্বাস রোধ করে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে।