প্যারিসে শেখ হাসিনা-ম্যাখোঁ বৈঠক

Slider সারাদেশ

d3af5dfed1b8a72a1ef8d24c6cca4c21-59cb3f25a6cda

বাসস: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবিবাণিজ্য, অর্থনীতি ও অন্যান্য অগ্রাধিকার ক্ষেত্রে সহযোগিতার সুযোগ-সুবিধা অনুসন্ধানে একটি যৌথ কমিশন গঠনে সম্মত হয়েছে ঢাকা ও প্যারিস ।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার এখানে এলিসি প্রাসাদে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বলেন, বৈঠকে উভয় নেতা অত্যন্ত আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় ও বৈশ্বিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু জলবায়ু পরিবর্তনসহ পাঁচটি বিষয়ে আলোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে যোগ দিতে ফ্রান্স গেছেন।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দুই নেতার আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যু এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রগতির প্রসঙ্গটিও উঠে আসে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আপনার নেতৃত্বের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের অত্যন্ত আগ্রহ ও আন্তরিকতা রয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের সমর্থনে ফরাসি সরকার ও জনগণ বিশেষ করে ফরাসি ঔপন্যাসিক আঁদ্রে মালরোর ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।

শহীদুল হক বলেন, যৌথ কমিশন গঠনের ধরন পরবর্তীতে ঠিক করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরাসি প্রেসিডেন্টকে তাঁর সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। ফরাসি প্রেসিডেন্ট আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং আগামী বছরের শুরুর দিকে তাঁর দক্ষিণ এশিয়া সফরের সময় বাংলাদেশ সফরে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা অধিকতর সম্পৃক্ততার সুযোগ পাবেন এমন অগ্রাধিকার খাতগুলোতে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহ প্রকাশ করেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জ্বালানি, অবকাঠামো, ওষুধ শিল্প, আইসিটি ও বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং শক্তিশালী আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত পদক্ষেপ জোরদারের জন্য সকল পর্যায় থেকে বিশ্ব নেতাদের জোটের ওয়ান প্ল্যানেট শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী গতকাল প্যারিস পৌঁছেছেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর গাড়ি থেকে নেমে আসলে এলিসি প্যালেসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার জানানো হয়।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর গাড়ির কাছে এগিয়ে আসেন এটি ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভেচ্ছা।

বৈশ্বিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তির দুই বছর উদ্‌যাপনের পরে হতাশা ও নেতৃত্ব শূন্যতার মাঝে আলোচনার জন্য এই সম্মেলন আহ্বানের উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী এ বছরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গ্লোবাল প্যাক্ট ফর এনভায়রনমেন্ট বিষয় বৈঠক আয়োজনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের উদ্যোগের কথা স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী এই বৈঠকে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা ম্যাখোঁকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্মেলনে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণে আপনার নেতৃত্ব দেখতে চাই এবং আমরা এর কার্যক্রম দেখতে চাই।’

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, তারা জ্বালানি নিরাপত্তা এবং সৌর বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সর্বশেষ রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে এবং এই ইস্যুতে ফ্রান্সের কাছে বাংলাদেশের প্রত্যাশার কথা জানতে চান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১০ লাখ মিয়ানমারের নাগরিক বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে, এরা পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে উপস্থাপিত তাঁর পাঁচ দফা প্রস্তাব পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তিনি জাতিসংঘে যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেভাবেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হতে পারে।

মিয়ানমার নাগরিকদের তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে এই সংকটের সমাধানে আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়ের অব্যাহত সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক চাপ চাই।’ তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে উঠবে।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তাদের অব্যাহত মানবিক সাহায্য এবং সকল বিশ্ব সংস্থায় ভূমিকা রাখার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম এবং ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেইন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *