বগুড়ার ‘তুফানের’ ছায়া রায়পুরে

Slider রাজনীতি

de304a2e5edc0e6a33614aa557b58270-5a16643ac4152

 

 

 

 

বাসা থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছিলেন বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকার। তিন মাস আগের বর্বর ওই ঘটনার প্রতিবাদে এখনো দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মানববন্ধন হচ্ছে। এর মধ্যেই লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভা শ্রমিক লীগের নতুন সভাপতি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ মামলার এক আসামিকে। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন অস্ত্র, মাদক, অপহরণসহ সাত মামলার আরেক আসামি।
গত বছর ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হন কমিটির নতুন সভাপতি আজাদ হোসেন চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক জহির সর্দার সর্বশেষ গত জুলাই মাসেও গ্রেপ্তার হন অপহরণের একটি মামলায়। গ্রেপ্তারের পর দুজনের ছবি তুলে তখন রায়পুর থানার নামে খোলা ফেসবুক পাতায় প্রচার করেছিল পুলিশ।

লক্ষ্মীপুর জেলা শ্রমিক লীগ গত সোমবার রাতে রায়পুরের নতুন কমিটি অনুমোদন দেওয়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, ‘তুফান-কাণ্ডে’ এমনিতেই সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এরপরও কমিটিতে ধর্ষণ মামলার আসামিরা কীভাবে নেতৃত্বে এলেন, বিষয়টি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানাবেন তাঁরা।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুঠোফোনে বলেন, রায়পুর পৌর শ্রমিক লীগের পাঁচ সদস্যের এই কমিটির দুজনের বিষয়ে তাঁর আপত্তি ছিল। কিন্তু একটি ‘শক্তির’ কারণে কমিটি অনুমোদন করতে হয়েছে। অবশ্য ওই শক্তি কী তা স্পষ্ট করতে চাননি তিনি।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি রায়পুর উপজেলা ও পৌরসভা শ্রমিক লীগের সম্মেলন হয়। এর নয় মাস পর একসঙ্গে গত সোমবার দুটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। রায়পুর পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি আজাদ হোসেন চৌধুরীকে ছাত্রী (১৩) ধর্ষণের মামলায় গত বছরের ২১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন। এখন তিনি জামিনে রয়েছেন। ধর্ষণের ঘটনার পর ভুক্তভোগী পরিবারটি রায়পুর ছেড়ে চলে যায়।

ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর মা মুঠোফোনে বলেন, মামলা করার পর আজাদের লোকজন তাঁকে হুমকি দেয়। বিভিন্ন মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় তিনি সরকারের কাছে বিচার চান।

তবে আজাদ হোসেনের দাবি, ধর্ষণ মামলাটি মিথ্যা। কিছুদিনের মধ্যে আদালতে রায় হবে। তাতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। দলের একটি পক্ষ মামলাটি করিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহির সর্দারের বিরুদ্ধে অপহরণ, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র আইনসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাতটি মামলা রয়েছে বলে রায়পুর থানার পুলিশ জানায়। এর মধ্যে ছয়টি মামলারই তিনি এজাহারভুক্ত আসামি। সর্বশেষ গত ৫ জুলাই উপজেলার সাইচার গ্রামের নূর মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তিকে অপহরণের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

এ বিষয়ে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, জহির সর্দারের পুরো পরিবার মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাঁর পরিবারের চার সদস্য মাদক-সংক্রান্ত মামলায় একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এর মধ্যে মাদকের একটি মামলায় জহিরের বাবা করিম সর্দারের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালত সাজাও দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। গত বছর জহিরের ছোট ভাই মো. মোসলিমের ইয়াবা আস্তানায় পুলিশ অভিযান চালায়। সেখানে গোলাগুলির একপর্যায়ে পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।

যথারীতি জহির সর্দারও তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মামলা মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে একটি চত্রু তাঁর বিরুদ্ধে লেগে আছে।

পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি পদের প্রার্থী ছিলেন নাজমুল আলম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অস্ত্র ও ধর্ষণ মামলার আসামিদের দিয়ে শ্রমিক লীগের কমিটি করা দুঃখজনক। কমিটির নেতৃত্বে এ ধরনের লোক এলে ভালো মানুষ রাজনীতি থেকে সরে যাবেন।

কোনো দল বা সংগঠনের নেতা বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় দুর্বৃত্তরা ঠাঁই পেলে সমাজ বিপদগ্রস্ত হয় বলে মন্তব্য করেছেন লক্ষ্মীপুর নাগরিক কমিটির সভাপতি মাহবুব মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, সুস্থ রাজনীতির চর্চার জন্য যোগ্য ও সৎ মানুষকে সামনে নিয়ে আসা উচিত। তা না হলে কারও জন্যই বিষয়টি মঙ্গলজনক হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *