জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে ক্ষমতা ছাড়ার জন্য গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল তাঁর দল জানু-পিএফ। কিন্তু তা মানতে নারাজ মুগাবে এখনো ক্ষমতা আঁকড়ে বসে আছেন। এবার তাঁকে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটি।
আজ মঙ্গলবার পার্লামেন্টের অধিবেশন বসবে। সেখানে মুগাবেকে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জানু-পিএফের এক নেতা। দলের এমপি পল মানগাওয়ানা জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়া শেষ করতে আজ ও কাল বুধবার দুই দিন সময় লাগতে পারে।
এদিকে কাল বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন মুগাবে। গত বুধবার সেনাবাহিনী ক্ষমতার ‘নিয়ন্ত্রণ’ নেওয়ার পর এটাই হবে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক। মন্ত্রিসভার বৈঠক সাধারণত হয় শহরের কেন্দ্রস্থলের একটি ভবনে। তবে সেনাবাহিনী সাঁজোয়া যান নিয়ে সেখানে তাঁবু গাড়ায় এবার বৈঠক ডাকা হয়েছে প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন স্টেট হাউসে।
গত রোববার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক ভাষণে মুগাবে জানিয়ে দেন, ক্ষমতা ছাড়তে তিনি রাজি নন। এরপর সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। মুগাবের ভাষণের জবাবে গতকাল সেনা কর্তৃপক্ষের বিবৃতি দেওয়ার কথা ছিল।
মুগাবে ও সেনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমঝোতা-প্রক্রিয়ায় জড়িত একটি সূত্রের বরাতে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, মুগাবের পদত্যাগের শর্তাবলির ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। একটি খসড়া পদত্যাগপত্রও তৈরি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সেনা কর্তৃপক্ষ মুগাবেকে বলেছে, তিনি যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন, তবে তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে দায়মুক্তি দেওয়া হবে। ব্যক্তিগত সম্পত্তিগুলো নিজেদের কাছেই রাখতে পারবেন তাঁরা।
একটি সূত্র জানায়, রোববারের ভাষণের উদ্দেশ্য ছিল মুগাবের মুখ দিয়ে জনসমক্ষে বলানো যে সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপ সাংবিধানিক ছিল। আর তিনি পদত্যাগ করলে তাঁকে পার্লামেন্টের স্পিকার বরাবর আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি লিখে জানাতে হবে।
রোববার রাতে মুগাবে ভাষণ দেওয়ার সময় অনেকে রাস্তায় জড়ো হয়েছিলেন তাঁর পদত্যাগে উল্লাস প্রকাশ করতে। কিন্তু তিনি ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানানোয় সমবেত জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
আর সোমবার নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম হওয়ার পরও মুগাবে পদত্যাগ না করায় ক্ষুব্ধ লোকজন রাজধানী হারারেতে ইউনিভার্সিটি অব জিম্বাবুয়েতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি করেন।
মুগাবের সিদ্ধান্তে চটেছেন জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতা যোদ্ধাদের সংগঠন ওয়ার ভেটারানস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা ক্রিস্টোফার মুতসভাঙ্গা। তিনি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই ব্যক্তি (মুগাবে) পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা হারারে ছেড়ে যাব না। আমরা জিম্বাবুয়ের জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে আনছি।’
গত বুধবার সামরিক বাহিনী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে ‘গৃহবন্দী’ রয়েছেন রবার্ট মুগাবে ও তাঁর স্ত্রী। দেশের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। রোববার মুগাবের দল জরুরি বৈঠক করে দলীয় প্রধানের পদ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করে। তাঁর জায়গায় বসানোর সিদ্ধান্ত হয় কিছুদিন আগে বহিষ্কৃত ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে। ধারণা করা হচ্ছে, নানগাগওয়াকে দেশের পরবর্তী নেতা করতে চাইছে সেনাবাহিনী। তিনি সেনাবাহিনীতে বেশ জনপ্রিয়। নানগাগওয়াকে আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলে।
৭৫ বছর বয়সী নানগাগওয়াকে বরখাস্ত করে প্রেসিডেন্ট মুগাবে তাঁর চেয়ে প্রায় ৪০ বছরের ছোট স্ত্রী গ্রেসকে ক্ষমতায় বসানোর পরিকল্পনা করলে সংকটের সূত্রপাত হয়।