আদালতের নির্দেশে চার বছরের শিশুকেও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় রাখতে হচ্ছে

Slider জাতীয় বাংলার আদালত

021109kalerkantho-14-11-2017-36

 

 

 

 

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, এখনো অমুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় রয়ে গেছে। আদালতের আদেশের কারণে এসব অমুক্তিযোদ্ধাকে বাদ দেওয়া যাচ্ছে না।

আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে একাত্তরের চার বছরের শিশুকেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাখতে হচ্ছে।

গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের একাধিক সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী এভাবে তাঁর অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখনো ওই সব অমুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি ভাতা দিতে হচ্ছে। তবে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। সংসদের মাধ্যমে আদালতের প্রতি আহ্বান জানাব, যেন ওই সব আদেশ দ্রুত পুনর্বিবেচনা ও প্রত্যাহার করা হয়। ’

এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ বিষয়ে সরকারি আইনজীবীদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানান। স্পিকার বলেন, ‘আপনার আইনজীবীকে বলুন, বিষয়টি যেন আদালতে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত করতে যেন দ্রুত আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারেন। ’

একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে কোনো প্রকার নীতি-নৈতিকতা ছাড়াই সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রায় ৩৩ হাজার লোকের একটা তালিকা করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ দিয়েছিল, যাদের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি।

অনেকেই আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা করেছিল। এটা জাতির জন্য দুঃখজনক। কোনো রকম তথ্য-উপাত্ত ব্যতিরেকে তারা তালিকা করেছিল। তারা ইচ্ছামতো তালিকা করেছিল। ’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আদালতে মামলা থাকায় এসব অমুক্তিযোদ্ধাকে এখনো তালিকা থেকে আমরা বাদ দিতে পারিনি। এ বিষয়ে আদালতে ১১৬টি মামলা হয়। আমরা চেষ্টা করছি আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আদালতের আদেশ প্রত্যাহার করে স্ব স্ব উপজেলায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করতে। আদালতের আদেশের কারণে ১৯৭১ সালে যার বয়স চার বছর ছিল তাকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক। এটা মেনে নেওয়া যায় না। ’

তিন দিনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ওয়েবসাইটে : সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী জানান, দেশের প্রতিটি উপজেলায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে সরকার কাজ করছে। অধিকাংশ উপজেলার তালিকা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২টি উপজেলার তালিকা প্রস্তুত করা হয়নি। আগামী তিন দিনের মধ্যে সব উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। তবে এখনো যেসব প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হননি, তাঁরা আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।

আওয়ামী লীগের আরেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খানের আরেক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক ব্যাপার যে মুক্তিযোদ্ধাদের একটা সঠিক তালিকা এখন পর্যন্ত নেই। আমরা ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা বলতে কী বুঝি তার একটা সংজ্ঞা নির্ধারণ করি। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা বলতে যারা ভারতবর্ষে ট্রেনিং নিয়েছেন তাদের একটা তালিকা করি। সেখানে দেখা গেছে, কিছু কিছু সেক্টরের তালিকা তখন সঠিকভাবে সংরক্ষিত ছিল না বা আমরা বাংলাদেশে আনতে পারিনি। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর একটি তালিকা করে, যেটা লাল তালিকাভুক্ত বলে পরিচিত। সেখানেও অনেক অভিযোগ আছে। ’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *