শহীদ আব্দুল হামিদ জেবুন্নেছা দম্পতি : শহীদ পরিবারের তালিকায় স্থান হয়নি যাদের।

Slider বরিশাল

13775497_209712072759635_7779631239137845290_n - Copy

 

 

 

 

 

পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে যে সকল কারিগর তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন। আব্দুল হামিদ এবং জেবুন্নেছাও সেই কারিগরদের অন্যতম। পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোষর রাজাকার বাহিনীর হাতে নির্মম হত্যাকান্ডের স্বীকার এই দম্পতিকে স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বৎসরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তাদের কি আমরা যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে পেরেছি??

ভোলা জেলার (তৎকালীন বরিশাল) দৌলতখান থানার সার্কেল অফিসার ছিলেন রাজশাহীর কৃতি সন্তান আব্দুল হামিদ। স্ত্রী জেবুন্নেছা ও চার সন্তান নিয়ে তার সরকারী বাসভবনেই বসবাস করতেন। সরকারী কর্মকর্তা হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ছিল তার নিয়মিত যোগাযোগ। এমনকি রাতে মুক্তিযোদ্ধারা তার বাড়ীতে এসে বিশ্রাম এবং খাওয়া দাওয়া করতো। এই খবর জানাজানি হলে বিজয়ের উষালগ্নে ১৯৭১ সালের ৯ নভেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১ টার দিকে পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোষর রাজাকার বাহিনী সার্কেল অফিসার আব্দুল হামিদ ও তার স্ত্রী জেবুন্নেছাকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যায় সে সময় বাধা দেয়ায় দারোয়ান হাফিজুল্লাকে বাসভবনের গেটেই নির্মমভাবে খুন করে পাক বাহিনী। প্রায় উনিশ দিন পরিএকটি মাটির গর্ত থেকে তাদের ক্ষত বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। ভোলা জেলার দৌলতখান থানার চকবাজারে শহীদ আব্দুল হামিদ, জেবুন্নেছা ও দারোয়ান হাফিজুল্লাহর কবর এখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে শহীদ সমাধি হিসেবে নেই কোন সংস্কার, এই সমাধিতে পড়েনা কোন শ্রদ্ধাঞ্জলী। অফিসের কিছু কর্মচারী এবং তার সন্তান ও আত্মীয় স্বজন ছাড়া অনেকেই জানেনা এই কবরগুলিতে কারা শুয়ে আছেন? শহীদ পরিবারের তালিকাতে তাদের নাম ওঠেনি আজও। কিন্তু তাদের আত্মত্যাগ কি আমরা ভুলে যাবো?

13775497_209712072759635_7779631239137845290_n ০০02

 

 

 

 

 

শহীদ আব্দুল হামিদ এবং তার স্ত্রী শহীদ জেবুন্নেছাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের দুই কন্যা রুলী, সন্ধি ও একমাত্র শিশু পুত্র সুমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকেছে শুধু । তখনও তারা বুঝতে পারেনি তাদের বাবা মাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বা তাদের বাবা মা আর কোনদিন ফিরে আসবে কি না। মেজ কন্যা রুলীর সেদিন ছিল জন্মদিন। ভোরের সুর্য উঠলেই হয়তো এই বাড়িতে জন্মদিনের উৎসব হতো আত্মীয় পরিজনে মুখর হয়ে উঠতো। সেই জন্মদিনটি পালন করা হয়নি রুলীর। সেই থেকে আজও পালিত হয়না। সেদিনের সেই শিশুরা আজ অনেক বড় হয়ে গেছে দেশের জন্য বাবা মায়ের আত্মাহুতির জন্য তারা গর্ববোধ করে কিন্তু স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বৎসরেও শহীদ পরিবারের তালিকায় তাদের নাম না ওঠায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন। সরকারী গেজেটে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি এই শহীদ পরিবারের জন্য। সংস্থাপন মন্ত্রনালয় থেকে এই পদস্থ কর্মকর্তার প্রাপ্য বেতন ভাতাদি আজও পরিশোধ করা হয়নি।

ক্ষমতার পালাবদলে রাজা যায় রাজা আসে, এই শহীদ পরিবারের সন্তানদের খোজ খবর নেয়নি কেউ। দিন বদলের সরকার ও জাতীর বিবেকের কাছে শহীদ পরিবারে সন্তানদের একটাই দাবী শহীদ পরিবার হিসেবে তাদের স্বীকৃতি দেয়া হোক। শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোন সুযোগ সুবিধা দেয়া হোক বা না হোক চাকুরী কালীন তাদের বাবার কষ্টার্জিত শ্রমের অধিকার বেতন ভাতাদি পরিশোধের ব্যবস্থা অন্তত করা হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *