‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নেবে আওয়ামী লীগ

Slider রাজনীতি

3a0700b269d522b0e8eda4a6227e6f90-lg

 

 

 

 

খালেদা জিয়ার কক্সবাজার যাত্রা, পথে পথে দলের নেতা-কর্মীদের জমায়েত করাকে বিএনপির মাঠে নামার প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল। এর মাধ্যমে বিএনপিকে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর শেষ হওয়ার পরপর আওয়ামী লীগেরও একটা বড় দল কক্সবাজারে যাবে।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মনে হচ্ছে খালেদা জিয়া হিসাব করে এগোচ্ছেন। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে তাঁর। কক্সবাজার সফরের মাধ্যমে তিনি মাঠের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। এরপর তিনি দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে এমন সফর কর্মসূচি নিতে পারেন। এই অবস্থায় আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি বা নির্বাচনের প্রস্তুতি নির্বিঘ্নে চলতে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। তবে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার সফর পণ্ড করার কোনো পরিকল্পনা সরকারি দলের ছিল না। তাঁর যাত্রাপথে যাতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বড় ধরনের জমায়েত করার সুযোগ না পান, সে জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মহাসড়কে উপস্থিত ছিলেন। অবশ্য গতকাল ফেনীতে কয়েক দফায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এটা অতি উৎসাহীদের কাজ।

আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, তারা বিএনপির চেয়ারপারসনের এই সফরকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। তারা মনে করছে, দলকে সংগঠিত করে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি নিয়ে মাঠে নামা, খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে খালেদা জিয়া সড়কপথে তিন দিনের এই সফর করছেন। এরপর ৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে বড় একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারে যাবে। তাদের সঙ্গে ত্রাণবাহী ট্রাকও রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও বহরে যোগ দেবেন।

খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরের দিন ঠিক হওয়ার পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা গত বুধবার দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। ওই বৈঠক থেকেই খালেদা জিয়ার পাল্টা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে।

৪ নভেম্বর চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরীর স্মরণসভা রয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত থাকবেন। স্মরণসভা শেষ করেই কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হবেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সেখানে খালেদা জিয়ার প্রতিটি বক্তব্যের জবাব দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও অন্যতম মুখপাত্র মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, তাঁরা ৪ নভেম্বর ত্রাণ দিতে যাবেন।

গতকাল খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘ওরা নিজেরা মারামারি করে আওয়ামী লীগের ওপর দোষ চাপাতে পারে। তাদের কর্মিসভায় মারামারির দৃশ্য তো সবাই দেখেছে।’

তা ছাড়া খালেদা জিয়ার এই সফরের পাল্টা হিসেবে ‘মানবতার যাত্রা’ নামে একটি কর্মসূচি পালনের কথা চিন্তা করছে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে তারা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে যাত্রা করতে পারে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার কক্সবাজার যাত্রাকালে পথে পথে জমায়েতের মাধ্যমে বিএনপি একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় বলে মনে করছেন সরকারি দলের নেতারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল মৌলভীবাজারে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফরের উদ্দেশ্য ত্রাণ ও মানবিক নয়, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনীতি।

তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের নামে খালেদা জিয়ার এই সফর নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু বলেই মনে হয়। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ এবং জিয়াউর রহমান সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার ভালো ভালো কথায় তারা হয়তো নির্বাচনের দিকে হাঁটছে। এটা ভালো লক্ষণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *