গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদ নিয়ে কাড়াকাড়ি-৪

Slider বাধ ভাঙ্গা মত লাইফস্টাইল

11067707_1433839713587388_4960053005872897381_n

 

 

 

 

 

 

মোঃ জাকারিয়া/ সামসুদ্দিন/ আলী আজগর খান পিরু, গাজীপুর অফিস: আর ৪/৫ মাস পরেই অনুষ্ঠিত হতে পারে গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচন।গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের প্রথম  নির্বাচন ভিন্ন প্রতীকে হলেও দ্বিতীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে প্রথম  হচ্ছে  গাজীপুর সিটিকরপোরেশনে। প্রথম নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ও ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রার্থীরা দ্বিতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নানা আলোচনা ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করে প্রার্থীরা এগিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনের দিকে। তবে অতীত ইতিহাস কোন প্রার্থীকেই পাশ কাটিয়ে যেতে দেয়, এমন আভাস কোন ইতিহাস দেয় না।

সব মিলিয়ে গাজীপুর সিটিকরপোরেশনের আসন্ন দ্বিতীয় নির্বাচন নিয়ে গ্রামবাংলানিউজের ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আজ ৪র্থ পর্ব। এই পর্বে তুলে ধরা হল প্রথম নির্বাচনে দেশব্যাপী আলোচিত মেয়র প্রার্থী  আলহাজ্ব এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের ভাল,  মন্দ, সুখ-দু:খ দিয়ে তৈরী  রাজনৈতিক বর্নাঢ্য জীবন ও ইতিহাসের নানা  অধ্যায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। জীবনের শুরু থেকেই তিনি ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্রজীবনে বিনয়ী ও নম্র আচরণের  জাহাঙ্গীর আলম সহজেই ছাত্র রাজনীতিতে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেন। বিএনপি সরকারের আমলে জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর ডিবির হাতে আটক হন। সাড়ে ৯ কেজি বিস্ফোরক দ্রব্য সহ আটক আসামী জনৈক রফিকুল ইসলামের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৫৪ ধারায় জাহাঙ্গীর আলমকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে রিমান্ডেও আনে। ২০০৫ সালে দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার কারণে জাহাঙ্গীর আলমের ওই গ্রেফতার নিয়ে রাজনীতিতে নতুন মোড় সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক পক্ষ বিপক্ষ নানা মুখরোচক আলোচনা সমালোচনা শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ তদন্ত করে জাহাঙ্গীর আলমকে ৫৪ ধারা  থেকে অব্যাহতি দিলে জাহাঙ্গীর আলম রাজনীতিতে হারানো  ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন।

পরবর্তি সময় ২০০৯ সালে  তিনি গাজীপুর সদর উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যান হন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ভোটে। জীবনের প্রথম জনপ্রতিনিধি হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সদরের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করেন। বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে ও সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি অনুদান দিয়ে সকলের নিকট জায়গা করে নেন। এক সময় তিনি গাজীপুর-১( কালিয়াকৈর) আসন থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ওপ্রস্তুতি নেন। শেষ মেষ তিনি গাজীপুর মহানগরের মেয়র পদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেন। গাজীপুর মহানগর প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীর আলম তার  অবদানকে অতিরিক্ত যোগ্যতা মনে করে ২০১৩ সালে মেয়র পদে নির্বাচন করেন। আনারস প্রতীক নিয়ে জনসংযোগ করতে গিয়ে প্রথম দিনেই  অপহরণ হয়ে যান। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে জাহাঙ্গীর আলম নৈতিক ভাবে নিজের সমর্থন আওয়ামীলীগ প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লাহ খানকে দিয়ে জনাব খানের পক্ষে প্রচারণায় নেমে পড়েন। ওই নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী  এড.আজমত উল্লাহ খান বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নানের নিকট পরাজিত হন।

এরপর মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান একাধিকবার কারাবরণ করায় মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামীলীগ দলীয় কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ। কিরণের দায়িত্ব পালনকালে জাহাঙ্গীর আলম কারাগারে আটক মেয়র মান্নানের মুক্তির দাবি করেন। আর পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান আসাদুর রহমান কিরণকে সহযোগিতা করেন।

মহানগরের অনেক বাসিন্দারা মনে করছেন, সুখে দুঃখে জাহাঙ্গীর আলম নাগরিকদের পাশে থাকেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর দিনে জাতীয় শোক দিবসে গাজীপুর মহানগরে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে  প্রতি বছর শতাধিক গরুও বিতরণ করেন। ফলে মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর আলম একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছেন।

এ ছাড়াও জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশন করে মহানগরের মধ্যে শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদেরও মন জয় করার চেষ্টা করছেন। সব মিলিয়ে জাহাঙ্গীর আলম দলীয় মনোনয়ন পেলে  মেয়র হতে পারবেন এবং মহানগরের অনেক উন্নয়ন করতে পারবেন বলে অনেকের ধারণা।

তবে জেলা আওয়ামীলীগের একাধিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতারা বলছেন, জাহাঙ্গীর আলমের বিপুল পরিমান অর্থ, বিশেষ কিছু জনসভায় দলীয় সিনিয়র নেতাদের আমন্ত্রন না করা ও অতীত ইহিতাস তাকে দলীয় মনোনয়ন পেতে অসহযোগিতা করবে। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকেরা বলছেন, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপির সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের সখ্যতা দলীয় মনোনয়ন পেতে যথেষ্ট সহায়তা করবে।  এই অবস্থায় অনেক সাধারণ মানুষ বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম মেয়র হলে মহানগরের উন্নয়ন হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *