রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে মিয়ানমারের সমর্থক চীন, রাশিয়া ও ভারতে এখনই সরকারকে বিশেষ দূত পাঠাতে বলেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। তাঁরা বলেছেন, এই ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি এবং এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান প্রয়োজন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে এক সমাবেশে বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন এ কথা বলেন। এই দুই বিশিষ্ট ব্যক্তির ডাকে এ সমাবেশ হয়।
বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট আমাদের জাতীয় জীবনে একটি বড় সমস্যা। এটাকে হেলা করা যাবে না। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতি জড়িত। মিয়ানমারের যত অস্ত্র—চীন, ভারত, রাশিয়া ও ইসরায়েল—এ চারটি দেশ বিক্রি করে। এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য। তারা লাভবান। সে জন্য তারা মিয়ানমারকে সমর্থন করে।
সাবেক এই রাষ্ট্রপতি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছে যেতে হবে। সঙ্গে যাকে নেওয়ার নিন। চীন, রাশিয়াকে আমাদের বোঝাতেই হবে। মিয়ানমারকেও বোঝাতে হবে, যদিও এটা এত সহজ হবে না। তাদের সমর্থকদের বোঝাতে হবে।’
সমাবেশে বি চৌধুরী কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি এবং মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির জন্য দুটি প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, ‘এই ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিটি করে দেশের পাঁচটি বড় বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার পর কক্সবাজারে ১০ লাখ লোকের একটি সমাবেশ করা যেতে পারে। যাতে আমরা মিয়ানমারকে দেখাতে পারি, আমরা এই ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ। এতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়বে।’
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর মহা অন্যায় করেছে। বাংলাদেশও মহা অন্যায়ের শিকার হয়েছে। এটা আন্তর্জাতিক আইনের চোখে ঘোরতর অপরাধ। এ অন্যায়কে আমরা মেনে নিতে পারি না, মেনে নেওয়া অসম্ভব। বিশ্ব জনমতও আমাদের পক্ষে আছে।’
এ বিষয়ে সরকারকে দেশের নাগরিক সমাজের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান কামাল হোসেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার জন্য কৌশলের প্রয়োজন। এতে আইনের, কূটনীতির ও রাজনীতির বিষয় আছে। যাঁরা সরকারে আছেন, সবার বুদ্ধি-পরামর্শ নেওয়াই হবে তাদের দায়িত্বশীলতা ও বুদ্ধিমানের কাজ।
বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হোসেন বলেন, ‘এর জন্য আমাকে ডাকার দরকার নেই। সরকার চাইলে জাতীয় স্বার্থে পাবলিকলি বলে দেব। আর যদি কৌশলগত কিছু থাকে, তাহলে লিখে পাঠিয়ে দেব।’ তিনি বলেন, ‘এখনই চীন ও রাশিয়ায় বিশেষ দূত পাঠানো দরকার। সরকারকে বলব, কেন দেরি হচ্ছে, কালই পাঠান। চীন ও রাশিয়া বলেছে, এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, গণচীনকে বোঝাতে পারলে আমরা উপকৃত হব।’
সমাবেশে কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী দুই নেতার বক্তব্য সমর্থন করে এ ক্ষেত্রে ড. ইউনূসকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, যারা এই ঐক্যের বিরুদ্ধে যাবে, সে জাতীয় শত্রু হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘দেশে ফিরে জাতীয় ঐক্যের চেষ্টা করুন। এমন সুযোগ আর পাবেন না। আর দেশে ফিরে খাদ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করুন। বিবেক থাকলে এই সময়ে মিয়ানমার থেকে খাদ্য কিনে? এমন বিবেকহীন কোনো মন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় থাকতে পারে?’
সমাবেশে বি চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের যৌথ নামে একটি লিখিত বক্তব্য সাংবাদিকদের দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জনগণ রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে অর্থবহ পরিবর্তনের প্রত্যাশা করে আসছে।…জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি জাতীয় ঐক্যের রাজনৈতিক ধারা গড়ে তোলা সময়ের দাবি।…সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমন্বয়ে একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটাতে হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, অধ্যাপিকা দিলারা চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। সমাবেশ পরিচালনা করেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।