নিজের চিঠি————– রিবেল মনোয়ার

Slider বাধ ভাঙ্গা মত লাইফস্টাইল

21558847_131805544128913_4991941806231870388_n

 

 

 

 

 

আমি সবসময় নিজের বিচার নিজে করতে আগ্রহী। একজন মানুষ যদি নিজের বিচার সিনজে করতে পারে তাহলে পৃথিবী অনেক সুন্দর হতে পারে। আমাদের জীবনটাই সুন্দর কিছুর সন্ধানে নিয়োজিত।

আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি তখন বৃত্তি পরীক্ষার জন্য স্কুল শেষে কোচিং করতাম আর প্রায় সন্ধ্যা যেতে বাড়ি ফিরতে। তখনও আমার বাই সাইকেল হয়নি। ১ কিলোমিটার নিয়মিত হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। আমি খুবই চিকন ও হালকা গড়নের ছিলাম।

শরীরে শক্তিও কম ছিলো আর পেটে ক্ষুধা। আজ অনেক বছর পর বুঝতে পারি স্টিভ জবস কেন ক্ষুধার্ত আর বোকা থাকতে বলেছিলেন। আমি তখন ভাবতাম গ্রামের এই ছোট্ট জীবন থেকে কিভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে উচু ভবনগুলোকে যাওয়া যায়।

স্কুল থেকে ফিরে বাড়ি গিয়ে মায়ের হাতে খাবো। এ ধরনের গরমের ক্লান্ত এক দিনে এক সাধুর সাথে দেখা হলো। আমার পরনে স্কুল ড্রেস আর পিঠে একটি কালো ব্যাগ। হাতে ড. লুতফর রহমানের উন্নত জীবন বইটি। উনি বইটি আমার হাতে দেখে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। সাধুর চোখ ছিলো খুবই আন্তরিক ও শীতল আর বৈজা চোখ। আমি আজও চোখ বন্ধ করলে এই চোখ দেখতে পাই। উনি সাধারণ কেউ নন বলে আমার মনে হলো।

সেই অচেনা মানুষটি আমার সাথে হাঁটলেন আর বললেন বাবা পানি খাবে, তোমার অনেক পিপাসা। তুমি ছোট্ট এ বুকে এত পিপাসা কিভাবে রাখো? উত্তর দেবার প্রয়োজন পড়েনি, আমার চোখের সাগড় দেখে তিনি বুঝেছিলেন …

আমি তার কাঁসার পাত্র থেকে রাস্তাতে পানি খেলাম। এরপর জহুর আলীর বাঁশ তলায় বসিয়ে কিছু কথা বললেন, আমার মধ্যে সেকথা এক সেকেন্ডের জন্যও নিস্ক্রিয় থাকেনি। গেরুয়া কাপড়ের সেই সাধু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, ‘ বাবা তুমি যদি জীবনকে উন্নত করতে চাও তোমাকে উন্নত মানুষের দেখা পেতে হবে। একা কেউ উন্নত হতে পারেনা। আমি উন্নত মানুষের খোঁজেই বাউল হয়েছি । ’ আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনার পরিবারের কে? কে আছে ? উনি বললেন, পুরো পৃথিবী আমার পরিবার। তৃমিও আমার সন্তান। আমি যেখানেই যাই সবাই আমার পরিবার। রক্ত দিয়ে যে পরিবার তৈরি হয় তারচেয়ে বড় পরিবারের আমি বিশ্বাস করি। এত শুদ্ধ বাংলায় তিনি বলেছিলেন যে আমি মোহিত ছিলাম। মনে ঝড় উঠেছিলো।

21935530_2015833852037054_126167169_n

 

 

 

 

 

 

তিনি বলেলেন, ‘বাবা তোমাকে জীবনভর উন্নত মানুষের খোঁজে অনেক ছুটতে হবে। কোনদিন আশা ছেড়োনা। তোমাকে পারতে হবে। উন্নত মানুষরাই তোমাকে উন্নতি করতে সাহায্য করতে পারবে। ’

তৃমি এই পথে কারও সমর্থন না পেলেও জানবে আমার মতো কিছু মানুষ তোমার সঙ্গে থাকবে। আর উপযুক্ত হতে তোমাকে তোমার কাজের ও চিন্তার বিচার করতে হবে। পারলে প্রতি ঘন্টায়, প্রতিদিনে, সপ্তাহে একবার অথবা মাসে একবার। কিন্ত নিজের বিচার করা তোমাকে শেখাবে আগামীর পথচলা। তৃমি একা নও পৃতিবীর অনেক মানুষ কেউ জঙ্গলে, নদীতে, রাস্তায় অথবা শহরে একই কাজ করবে। তৃমি তাদরকে খুঁজে বের করবে। ’

( তিনি আরও কথা বলেছিলেন যে বিষযে আরেকদিন বলবো। জসীমঋদ্দিন হলের ১২৮ নম্বর রুমে বসে ২ দিন সব কথাগুলো মনে করে লিখেছিলাম। )

তখন থেকে প্রতিদিন দিন শেষে চিন্তা করি। কাজ শুরুর আগে ও পরে চিন্তা করি। আর সপ্তাহে একবার কাগজ কলমে নিজের অগ্রগতি রিপোর্ট তৈরি করি।

21850544_2015833605370412_1873891885_n

 

 

 

 

 

 

এক সপ্তাহে কি কি ভুল হয়েছে , কি অহেতুক কাজ হয়েছে। নতুন কতগুলো মানুষকে চিনেছি। তাদের মধ্যে উন্নত মানুষ কি কেউ আছে ? আজও আমি সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করি। আসলে চেষ্টা কোন স্থির সময়ের জন্য নয়। কথনো থেমে গেলেই শেষ। এটি জীবনভর প্রক্রিয়া। যতক্ষণ জীবন আছে ততক্ষণই চেষ্টার সময়।

আমি যখন নিজের ভুলগুলো দেখতে পাই তখন চিন্তা করি কিভাকে আমি আরও ভালো করবো। আর কারো সাথে ভুল করে থাকলে ক্ষমা চাই। হয়তো আর সুযোগ হবেনা ক্ষমা চাওয়ার। হয়তো আর সুযোগ হবেনা ভালোবাসার ও সাহায্য করার। সময় একটি ফ্রেম।

আর প্রতিদিনই উন্নত মানুষ খুঁজে ফিরি। খুঁজতে গিয়ে অনেক ভান্ডার চিনেছি। এটাই জীবন হোক তা মনের ভান্ডার, জ্ঞানের ভান্ডার বা ধনের ভান্ডার।

সত্যিকার অর্থে আজকে আমার কাছে ইনভেস্টর বা ধনী মানুষের অভাব নেই। আজকে উন্নত মানুষের অভাব, যারা নিজের ও অন্যের জীবনকে উন্নত করতে চায়। এভাবে জীবনে হাজার হাজার মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। আমি সবসময় চিন্তা করি ‘আমার মিশন হলো আসল হীরের টুকরেগুলোকে এক জায়গায় করা। ’হীরের টুকরো খুঁজতে গিয়ে ধুলো-বালি, ময়লা , কাঁকড়, ইটের টুকরো সব পেয়েছি। পেয়েছি স্বর্ণ , রুপা বা তামা। শুধু ভালো গুলো রাখতে চেয়েছি। শুধু আমার জন্য নয়। আমি যে স্বপ্নকে নিয়ে চলি। সেই স্বপ্নই আমার জীবন। যখন নামাজে বসি তখন আমি এটাই প্রার্থনা করি যে আমি কি আমার স্বপ্নের পথেই আছি আল্লাহ। আমাকে পথ দেখাও।

বহুবার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে আবার স্বপ্ন দেখেছি আরও শক্তভাবে স্বপ্ন দেখা শিখেছি। স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এসে অনুভব করেছি নতুন কিছু অভিজ্ঞতা। যারা বড় বড় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে আজকে শীর্ষে আছে তারা কিভাবে সেসব কাজ করতেন? এ প্রমে।নর উত্তর পেতে ছুটেছি সবার কাছে। তাদের কাছে জেনেছি জীবন দিলেও স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছাড় দেওয়া যাবেনা। জীবনতো খুবই ছোট কিছু স্বপ্ন আরও অনেক বড় কিছু যার জন্য জীবন তৈরি হয়েছে। এটি অনেকটা জীবন পাখির মতো। পাখি না থাকলে জীবন থাকেনা।

প্রয়োজনে বংশ, রক্ত, সম্পর্ক , বন্ধুত্ব বা সমাজ গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভালো কিছু করতে আমরা কি কি করবো আর কি কি করবোনা দুটোই সমান গুরুত্ব বহন করে। তাই কোন ধরনের মানুসের সাথে কাজ করবো এটা যেমন জরুরী তেমনি কোন ধরনের মানুষ এই স্বপ্নের সাথে যায়না সেটা বের করাও জরুরী।
নিম্ন মধ্যবিক্ত গ্রামীণ পরিবারের সন্তান হিসেবে সব ধরনের কস্ট ও বাস্তবতা দেখে আজকের মতো দিনে এসেছে। একসময় গ্রামের মনুরছড়ায় মাছ ধরা থেকে আজ ফাইভ স্টার হেটেলের স্যালমন ফিশ সব স্বাদ মনে আছে । তেমনি কামলার কাজ থেকে শুরু করে কোম্পানীর টপ লেভের কাজের অভিত্জ্ঞতা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে।

21919192_2015833462037093_1269595883_n

 

 

 

 

 

 

আমি সবার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ যে আমার মতো কম যোগ্য লোকের সাথেও আমার থেকে যোগ্য লোকরা কাজ করেন। আমার কথার উপর বিশ্বাস রেখে অনেকগুলো পরিবার আজ আর্থিক ভিতের উপর দাড়িয়ে আছে। এটা আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ ও সৌভাগ্য । আমার বাবা গ্রামের একটি দোকান চালিয়ে আমাকে বড় করার স্বপ্ন দেখেছেন। আমি নিজের কারনে আপোষ করতে পারলেও শত পরিবার আর শত মানুষের স্বপ্নকে নিযে আপোষ করতে পারিনা। আমি বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র বিসর্জন দিতে দ্বিাধাবোধ করিনা।

পুরো পৃথিবী আমার পক্ষে কি বিপক্ষে এ চিন্তা আমার মনে আসেনা। আমি নতুন পৃথিবী তৈরিতে বিশ্বাস করি। এটাও বিশ্বাস করি এই পৃথিবীর বাইরেও আরও পৃথিবীর সন্ধান পাওয়া সম্ভব যেখানে নতুন স্বপ্ন তৈরি হবে।

আসুন স্বপ্নগুলো নিযে এগিয়ে যাই। আর স্বপ্নগুলোকে নিয়ে এগিয়ে যেতে যেসব বাধা আছে তা সরিযে ফেলি। আমি খুবই সুখী হই যখন কোন একটা ছেলে এসে বলে আপনি ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছেন, আমি প্রতিষ্ঠিত, আমি কাজ শিখেছি। যখন তাদের উপার্জন করা অর্থ আরেকজনের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে আমি কৃতজ্ঞতায় কেঁদে ফেলি।

একজন মানুষ যদি একদল মানুষকে স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে পারে। পুরো পৃথিবী তাদেরকে সহযোগিতা শুরু করে। এটাই প্রকৃতি। আমরা প্রকৃতির সন্তান, আমার মায়ের কোলেই আছি । আমরা মায়ের সন্তান, আমরা জীবনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আমরা একটি পরিবার , পুরো পৃথিবী একটি পরিবার।আমরা মানুষের বিশ্বাস রাখি, আমরা এগিয়ে যাই, আমরা এগিয়ে দেই। আমরা স্বপ্ন দেখি আমরা স্বপ্নে বাঁচি।

২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭
সাফারা আইটির ছাদঘর
এখানে নদী ও আকাশ মিশেছে মনের সাথে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *