রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ শিশু। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন শেখ আব্দুস সালাম। এসব রোহিঙ্গা নারী ও শিশু রয়েছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে, সন্তানসম্ভবা নারীদের জন্য বিনা খরচে অ্যাম্বুলেন্সসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ডায়রিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। প্রায় ১১ শতাংশ রোহিঙ্গা ডায়রিয়ায় ভুগছে। সঙ্গে চর্ম ও শ্বাসযন্ত্র সমস্যাও রয়েছে। কন্ট্রোল রুম থেকে জানা যায়, ২৬শে আগস্ট থেকে ১৯শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সেবা নিয়েছেন তিন হাজার ১৪ জন রোহিঙ্গা। বর্তমানে ভর্তি আছেন প্রায় ২০০ রোগী। এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ৩১৫ জন, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৪৯৩ জন। শ্বাসতন্ত্রে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের। চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৬ জন। রোহিঙ্গ শিশুদের হামের টিকা দেয়া হয়েছে ২৬ হাজার ৩৮১ শিশুকে, মুখে পোলিও’র টিকা খাওয়ানো হয়েছে ১৪ হাজার ৭৮০ শিশুকে। বর্তমানে উখিয়া ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি দল। এই দলে থাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, এখানে হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। মিয়ানমারের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যগতভাবে কখনোই সচেতন ছিল না। নিরাপদ প্রসব পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন বলেন, নিরাপদ পদ্ধতিই গ্রহণ করা হয়েছে। এদের চিকিৎসার জন্য উখিয়া, টেকনাফের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে গত কয়েকদিন আগের চেয়ে নানা রকম ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম দেয়া হয়েছে, চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে। ৩৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। ৫ থেকে ৭টি অ্যাম্বুলেন্স রোহিঙ্গা অসুস্থ রোগীদের আনা-নেয়া করছে। তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে উন্নয়ন সহযোগীরাও কাজ করছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, অন্তঃসত্ত্বা, স্তন্যদায়ী মা ও শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। স্তন্যদায়ী মায়েদের শরীরে পুষ্টি নেই, খাবার নেই, তারা শিশুদের খাওয়ানোর মতো পুষ্টি পাবে কোথায়? সন্তানকে ব্রেস্ট ফিড করানোর মতো পরিবেশও নেই। ঢাকা থেকে যোগাযোগ করলে কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন শেখ আব্দুস সালাম বলেন, হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফ দেয়া হয়েছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি। তাদের নিরাপদে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, প্রসব সংক্রান্ত যে কোনো জটিলতা হলে বিনা খরচে অ্যাম্বুলেন্সে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই ব্যবস্থা কিভাবে আরো উন্নত করা যায় সে বিষয়ে ঢাকা থেকে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা নারী-শিশুদের স্বাস্থ্যগত বিষয়ে যেন কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ নজর দেয়া হয়েছে।