মিয়ানমারের সামরিক শক্তি কত

Slider রাজনীতি সারাবিশ্ব
মিয়ানমারের সামরিক শক্তি কত

ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মিয়ানমার অস্থিতিশীল একটি দেশ। বার বার সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে, গণতন্ত্র বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।

সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের চিত্র মিয়ানমারের বুকে খচিত রয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ইতিহাসও পুরনো মিয়ানমারের। ১৯৯০ সালের পর থেকেই মিয়ানমারকে সামরিক সহায়তা প্রদান করতে শুরু করে চীন, রাশিয়া ও ইউক্রেনসহ বেশ কয়েকটি দেশ। ভারতকে চাপে রাখতে চীন মিয়ানমারের কাছে বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ ও ‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার.কম’ সূত্র বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আকার ৫ লাখ ১৬ হাজার, যার মধ্যে ৪ লাখ ৬ হাজার নিয়মিত ও ১ লাখ ১০ হাজার রিজার্ভ সেনা সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের হাতে রয়েছে ১২৭টি যুদ্ধবিমানসহ মোট ২৬৪টি সামরিক বিমান, ৯টি অ্যাটাক হেলিকপ্টারসহ ৮৬ হেলিকপ্টার, ৮৮৬টি অত্যাধুনিক ট্যাংক, ৪ হাজার ২১২টি বিভিন্ন ধরনের মিসাইল, ১ হাজার ২০০ সাঁজোয়া সামরিক যান, আকাশ প্রতিরক্ষায় অন্তত ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র, ৩৯২টি গান সিস্টেম, ১২০০ অ্যান্টি ট্যাংক অস্ত্র, ২৭টি নেভাল ফ্রিগেড, ৪০টি পেট্রল ক্রাফটসহ মোট ১৫৫টি রণতরী। সামরিক শক্তিধর দেশের তালিকায় ৩১ নম্বরে থাকা মিয়ানমারের সামরিক সক্ষমতার একটি চিত্র নিচে দেওয়া হলো। 

মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বেচে কারা?

১৯৯০-পরবর্তী সময় থেকেই অস্ত্র কেনায় মনোযোগী হয় মিয়ানমার। নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে সই করার পরও অস্ত্র কেনাকাটায় থেমে নেই তারা। উল্টো ২০১২ সালের পর থেকে অস্ত্র কেনা সহজ হয়েছে মিয়ানমারের জন্য। এরই মধ্যে তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি করেছে রাশিয়া, চীন, ইসরায়েল, ইউক্রেন, ভারত, বেলারুশ, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, পোল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশ। চীন মিয়ানমারকে ইতিমধ্যে সামরিক সরঞ্জাম কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে। তারা সবচেয়ে বেশি যুদ্ধবিমান, রণতরী ও গোলা বিক্রি করেছে মিয়ানমারের কাছে। পিছিয়ে নেই রাশিয়া ও ইউক্রেন। রাশিয়া মিয়ানমারের কাছে মাটি থেকে ছোড়ার উপযোগী মিসাইল বিক্রি করেছে। ইউক্রেন বিক্রি করেছে রণতরী। অন্যদিকে ইসরায়েল বিক্রি করেছে ট্যাংক ও অস্ত্রবাহী যুদ্ধযান। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ নিয়ে একটি খবর প্রকাশ করে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, মিয়ানমার  সবচেয়ে বেশি বিমান কিনেছে চীন থেকে ১২০টি, রাশিয়া থেকে ৬৪টি এবং পোল্যান্ড থেকে ৩৫টি। মিয়ানমারের কাছে সবচেয়ে বেশি মিসাইল বিক্রি করেছে রাশিয়া (২৯৭১টি), চীন (১০২৯টি) ও বেলারুশ (১০২টি)। মিয়ানমারের কাছে নৌবাহিনীর  রণতরী বিক্রি করেছে চীন (২১টি), ভারত (৩টি) ও প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া (৩টি)। বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ, কামান (আর্টিলারি) বিক্রি করেছে চীন (১২৫টি), সার্বিয়া (১২০টি) ও রাশিয়া (১০০টি)। অস্ত্রবাহী গাড়ি-ট্যাংক বিক্রি করেছে চীন (৬৯৬টি), ইসরায়েল (১২০টি) ও ইউক্রেন (৫০টি)।

 

 

এখনই সেনাবাহিনীতে যোগদানে উপযুক্ত  ১০,৩০,০০০

মানবসম্পদ

অস্ত্রশস্ত্রের পাশাপাশি মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ মানুষ যুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বা যুদ্ধে সক্রিয় থাকবে সে হিসেবে একটি দেশের সেনা শক্তি নির্ণয়ে মানবসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধের ইতিহাস বলছে, ম্যানপাওয়ার (মানবসম্পদ) যত বেশি যুদ্ধে সাধারণত সে পক্ষই শক্তিশালী বলে গণ্য হয়ে থাকে। মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী ‘টাটমাডো’ সদস্য সংখ্যায় বিশ্বের নবম সশস্ত্র বাহিনী।

মোট জনসংখ্যা ৫,৬৮,০৯,৪১৮

জনশক্তি ৩ কোটি

কর্মক্ষম  ২,১৬,৩৫,০০০

মোট মিলিটারি সদস্য ৫,১৬,০০০

মোট মিলিটারি সদস্য ৫,১৬,০০০

মিলিটারিতে নিয়মিত ৪,০৬,০০০

রিজার্ভ মিলিটারি সদস্য ১,১০,০০০

 

অ্যাটাক এয়ারক্রাফট  (বোমারু যুদ্ধবিমান) ৭৭

এয়ার ফোর্স

আকাশে কার কত শক্তিমত্তা সেটি নির্ণয় করতে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার— সব ধরনের আকাশযানকেই রাখা হয়। এই আকাশযানের মোট তালিকা ধরেই আকাশে শক্তিমত্তা বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এয়ার ফোর্স, নেভি ও আর্মির সব ধরনের যুদ্ধ উপযোগী আকাশযান এই তালিকায় রাখা হয়। আধুনিক সময়ে আকাশে কার কত শক্তি সেটি যুদ্ধের ময়দানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে আকাশপথে হামলা করার প্রচলন বেশি। দেশে দেশে সামরিক হামলার বড় অংশই আকাশ থেকে করা হয়। আকাশে শক্তিমত্তা বিবেচনায় বোমারু বিমান, যুদ্ধবিমান ও হালকা বিমান সবই তালিকায় রাখা হয়। আধুনিক মিলিটারি শক্তিতে এমনও কিছু উড়োজাহাজ রয়েছে যেগুলো নিরাপদ যাত্রা, ত্রাণ পৌঁছানোর কাজে যেমন ব্যবহূত হয় আবার যুদ্ধের প্রয়োজনে আক্রমণও করতে সক্ষম।

যুদ্ধ উপযোগী আকাশযান ২৪৯

সরাসরি যুদ্ধবিমান  ৫৬

যাত্রী ও পরিবহন কাজে ব্যবহূত বিমান ৯৭

প্রশিক্ষণ বিমান  ৫৮

মোট হেলিকপ্টার ৮৬

অ্যাটাক হেলিকপ্টার  ৯

 

যুদ্ধ উপযোগী ট্যাংক  ৫৯২

সেনাশক্তি

ট্যাংক সেনাশক্তির একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান। এমটিবি বা মেইন ব্যাটল ট্যাংক ও হালকা ট্যাংক ডেসট্রয়ার এই দুই ধরনেই ট্যাংকই সেনাশক্তির অংশ। ট্যাংকের কারিগরি নানা আধুনিকায়নে পার্থক্য থাকলেও শক্তিমত্তায় ট্যাংক যুদ্ধে প্রতিপক্ষের বড় হুমকি। এ ছাড়া সেনাবাহিনী যুদ্ধে ব্যবহার করে, আর্মড ফাইটিং ভেহিক্যাল (এএফভি), আর্মড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) ও ইনফ্রান্টি ফাইটিং ভেহিক্যাল (আইএফভি)— উল্লেখ্য, এগুলোর সবগুলোয় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত যুদ্ধ করতে সক্ষম এমন পরিবহন।

সাঁজোয়া যান (এএফভি) ১,৩৫৮

সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি (কামান)  ১০৮

টোওড আর্টিলারি (কামান)  ৮৮৪

রকেট প্রজেক্টর ১০৮

 

ফ্রিগেডস (ভারী অস্ত্রসজ্জিত রণতরী) ৫

নেভির শক্তিমত্তা

এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আধুনিক নৌশক্তির গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। সমুদ্রে আধিপত্য বিস্তার ও হামলা করতে বিমানবাহী (যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার) রণতরীর হিসাবটা এখন প্রতিটি সামরিক শক্তিধর দেশই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। রণতরী থেকে প্রতিরক্ষার কাজও যেমন করা হয় তেমনি প্রতিপক্ষের ওপর হামলা করতেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে। এখন সাবমেরিনও নৌশক্তির অন্যতম প্রধান অস্ত্র। এসব সাবমেরিনের মধ্যে ডিজেলচালিত এবং নিউক্লিয়ার শক্তিনির্ভর সাবমেরিন দুটোই হিসাব করা হয়। আজকাল নৌ সেনা, সাবমেরিন আর রণতরীর হিসাব কষেই নৌশক্তি বিবেচনা করা হয় না। এর সঙ্গে যোগ হয় এসব রণতরীর সঙ্গে থাকা অন্যান্য যুদ্ধ পরিবহনও। সমুদ্রে আক্রমণ করতে ছোট বড় ডেসট্রয়ার আর অস্ত্রবাহী নৌযানও একেকটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ও রণতরীকে সঙ্গ দেয়। এসব বাড়তি নৌ-অস্ত্র সমুদ্রে আধিপত্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

মোট যুদ্ধজাহাজ ১৫৫

এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার  নেই

কর্ভাট (ছোট রণতরী) ৩

সাবমেরিন  নেই

পেট্রল ক্রাফট ৪০

 

মাইন ওয়ারফেয়ার ভেসেল ১

পেট্রলিয়াম (জ্বালানি তেল)

একটি দেশের সামরিক শক্তি পরিচালনায় চাই পর্যাপ্ত মজুদ জ্বালানি। যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে যুদ্ধ পরিহনগুলোর জন্য মজুদ জ্বালানি না থাকলে অল্প সময়ের ব্যবধানে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হতে হয়। এই সূচক নির্ণয় করতে পেট্রলিয়াম (তেল) জাতীয় পদার্থের ব্যারেল প্রতি মজুদ হিসেবে রাখা হয়।

পেট্রলিয়াম (ব্যারেল/ প্রতিদিন) উৎপাদন  ২০,০০০

কনজাম্পশন (খরচ) (ব্যারেল/প্রতিদিন) ২৮,১২০

মজুদ আছে (ব্যারেল/প্রতিদিন) ৫ কোটি

 

 রণতরীতে রূপান্তর সম্ভব এমন জাহাজ ২৯

লজিস্টিক

যুদ্ধের ময়দান বিস্তৃত হলে যুদ্ধসেনা, অস্ত্র ও যুদ্ধ পরিবহন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মোতায়েন করতে লাগে শক্তিশালী লজিস্টিক (কারিগরি) সহযোগিতা। যত বেশি সেনা, অস্ত্র ও যুদ্ধ পরিবহন তার চাই তত বড় কারিগরি/ পরিবহন সক্ষমতা। যুদ্ধের সময় যুদ্ধকেন্দ্রিক নানা পণ্য, অস্ত্র, গোলাবারুদ উৎপাদন করতে হয়। এ ছাড়া প্রয়োজন হয় বিপুলসংখ্যক শ্রমিকের। এদেরও যোগ করে লজিস্টিক সাপোর্টটা হিসাব করা হয়।

শ্রমশক্তি  ৩,৭১,৫০,০০০

প্রধান সমুদ্রবন্দর বা টার্মিনাল  ৩

সড়ক (কিলোমিটার)  ৩৪,৩৭৭

রেলপথ (কিলোমিটার)  ৫,০৩১

প্রয়োজনে ব্যবহার উপযুক্ত এয়ারপোর্ট  ৬৪

 

বাড়তি ঋণ , (মার্কিন ডলার)  ৯০৪ কোটি

অর্থনৈতিক সক্ষমতা

বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোও যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে থাকে। যুদ্ধের ব্যয় অত্যন্ত বেশি এবং যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অর্থনৈতিক মন্দার ভিতর দিয়ে যেতে হয় দেশগুলোকে। যুদ্ধ একটি দেশের প্রায় সব ধরনের অবকাঠামো ধ্বংস করে দেয়। এমন কোনো জিনিস নেই যা যুদ্ধের কারণে প্রকট সংকটের মুখে পড়ে না। আর্থিক দিক বিবেচনায় অনেক দেশেরই যুদ্ধ করার সক্ষমতা নেই। এই দেশগুলো যুদ্ধে নামার মতো ভুল সিদ্ধান্ত কখনই নেবে না। যুদ্ধ বাধলে তারা অল্প সময়ের মধ্যেই টাকার অভাবে যুদ্ধের ব্যয় বহন অক্ষম হয়ে পরাজয় স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়। মিয়ানমারের বিশাল সেনাবাহিনীর জন্য ব্যয় হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। তাদের ক্রয় ক্ষমতার সমতার অঙ্কও বিশাল।

প্রতিরক্ষা বাজেট  (মার্কিন ডলার) ২৪০ কোটি

সোনার বিনিময়ে (ফরেন এক্সচেঞ্জ) ৮৯১ কোটি

 

সীমান্তের দৈর্ঘ্য, (কিলোমিটার), ৬,৫২২

ভৌগোলিক অবস্থান ও গঠন 

একটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, আয়তন ও গঠন সে দেশের সামরিক শক্তি নিরূপণের জন্য উল্লেখযোগ্য। দেশ যত বড়, সে দেশ প্রতিপক্ষের জন্য তত দুর্জেয়। এ ছাড়া পাহাড়, মরুভূমি, সমুদ্র কিছু কিছু দেশকে যুদ্ধে এতটাই এগিয়ে রাখে যে তার চেয়ে দ্বিগুণ সামরিক শক্তিধর দেশও তাকে সমীহ করতে বাধ্য হয়। এ ছাড়া যুদ্ধকৌশল সাজাতেও তারা সময় পায় বেশি।

ভূমির পরিমাণ, (বর্গকিলোমিটার)  ৬,৭৬,৫৭৮

সমুদ্রতীর (কিলোমিটার)  ১,৯৩০

সমুদ্রসীমার দৈর্ঘ্য  (কিলোমিটার), ১২,৮০০

* সূত্র : গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার.কম

 

পরমাণু অস্ত্র নেই

২০০৭ সালে রাশিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের একটি ‘বিতর্কিত পরমাণু অস্ত্রের চুক্তি’ নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। এরপর ২০০৯ সালে সিডনি মর্নিং হেরাল্ড তাদের খবরে জানায়, মিয়ানমার ২০১৪ সালের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হতে পারে। ২০১০ সালে ডেমোক্র্যাটিক ভয়েস অব বার্মা জানায়, তারা মিয়ানমারে পরমাণু অস্ত্র তৈরি প্রক্রিয়ার প্রমাণ হাতে পেয়েছে। এ ছাড়া ইউএনের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়, উত্তর কোরিয়া মিয়ানমারকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তি ও কৌশলগত সহায়তা প্রদান করছে। এভাবে বিভিন্ন সময় জোর গুঞ্জন উঠেছে, মিয়ানমার হয়তো পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। অথবা পরমাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করেছে।

তবে এসব গুঞ্জন, অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। শুধু তর্ক-বিতর্কের অংশ, সন্দেহ, ধারণা বলেই পরিগণিত হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, মিয়ানমারের পরমাণু অস্ত্র নেই— এটাই বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। বিশ্লেষকদের মতামত বলছে, মিয়ানমার যদি পরমাণু অস্ত্র  তৈরির পরিকল্পনা করেও থাকে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তাদের নেই। তাই তাদের হাতে পরমাণু অস্ত্র থাকার বা অস্ত্র তৈরির কোনো সম্ভাবনা নেই।

 

বন্ধু চীন

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মিয়ানমারকে সমর শক্তিধর দেশ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে চীন। সামরিকভাবে চীনকে তাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলা যায়। ভারতকে চাপে রাখতে চীন মিয়ানমারকে সামরিক শক্তি বাড়াতে শুরু করে। ইতিহাস বলছে, ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত চীনের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক ছিল মিয়ানমারের। ১৯৮৬ সালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর থেকে চীন সমর্থন তুলে নিলে শুরু হয় চীন-মিয়ানমারের বন্ধুত্ব। চীন মিয়ানমারে তেল-গ্যাস, খনিজসম্পদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগসহ বাণিজ্যিক সুবিধা পায়। এ সময় চীন সামরিকভাবে মিয়ানমারকে সহায়তা করতে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিং মিয়ানমারকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম দিয়েছে। যার মধ্যে আছে ফাইটার, গ্রাউন্ড অ্যাটাক ও ট্রান্সপোর্ট, ট্যাংক, সাঁজোয়া মোটরযান, নৌবহর ও এয়ার মিসাইল। এ ছাড়াও চীন মিয়ানমারে সড়ক ও রেললাইন স্থাপন করে দিয়েছে।

 

রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে লুকোচুরি

২০১৪ সালে মিয়ানমারের ম্যাগাজিন ইউনিটি উইকলি সরাসরি অভিযোগ করে যে, মিয়ানমারের ম্যাগওয়ে অঞ্চলে সেনারা রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি করছে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ১৯৯১ সালে এ নিয়ে জোরদার অভিযোগ ওঠার পর তা অস্বীকার করে মিয়ানমার। ২০০৫ সালে এক বেলজিয়ান ফটোসাংবাদিক দুজন সেনা সদস্যের বরাত দিয়ে জানান, তারা রাসায়নিক অস্ত্র পরিচর্চা, সংরক্ষণের জন্য নিজেরা বাড়তি সতর্ক থাকেন। তবে এই অভিযোগগুলো সমালোচনার ঢেউ তুললেও মিয়ানমার সব অস্বীকার করেছে।

২০১৪ সালে মিয়ানমারের ম্যাগাজিন ইউনিটি উইকলি সরাসরি অভিযোগ করে যে, মিয়ানমারের ম্যাগওয়ে অঞ্চলে সেনারা রাসায়নিক অস্ত্র তৈরি করছে। ওই কারখানার আশপাশের লোকজন বলে, তারা ওই কারখানার আশপাশে কিছু চীনা লোকদের ঘুরতে দেখেছেন। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী সব অস্বীকার করে বলে, তারা সেখানে সামরিক অস্ত্র তৈরি করলেও সেগুলো রাসায়নিক অস্ত্র নয়। এই সংবাদ প্রকাশের জন্য ম্যাগাজিন ইউনিটি উইকলির প্রধান ও এক সাংবাদিককে ১০ বছরের জন্য জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

 

শিশুদের হাতেও তুলে দেয় মারণাস্ত্র!

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি রিপোর্টে বলা হয়,  মিয়ানমারের সেনাবাহিনীতের শিশু সেনাদের প্রকৃত সংখ্যা বলা মুশকিল। তবে জোর করে শিশুদের সেনাবাহিনীতে নাম লেখানো যোদ্ধার সংখ্যা ৭০ হাজারেরও বেশি! এদের সবার বয়সই ১৮ বছরের নিচে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এই শিশুদের হাতে তুলে দিয়েছে মারণাস্ত্র। তারা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নামে, তাদের সে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তাদের মারামারিতে জড়িয়ে যাওয়ার জন্য সামরিক চাপও দেওয়া হয়— এমন অভিযোগ এসেছে শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে। মিয়ানমারের ইতিহাস বলছে, ১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সবসময় সংঘাত ও রক্তপাতে জড়িয়ে আছে মিয়ানমার। দেশের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। বার বার সামরিক বাহিনীর হাতে কেড়ে নিয়েছে ক্ষমতার চাবি। সেনা অভ্যুত্থান আর রক্তপাতের এই ইতিহাস তাদের নিষ্ঠুরতার কথা মনে করিয়ে দেয়। শিশুদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বরাবরই সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েছে মিয়ানমার। ২০১৫ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর অনেকেই আশা করেছিলেন, মিয়ানমার তার দেশের ভিতর সংখ্যালঘুদের নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞের কালো ইতিহাস হয়তো বদলানোর চেষ্টা করবে। সেটি হয়নি। বরং সাম্প্রতিক সময়ে তা আরও ঘৃণ্য রূপ নিয়েছে। মিয়ানমারের শিশুযোদ্ধাদেরও সংখ্যালঘু আদিবাসীদের ওপর হামলা, নির্যাতনে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। চাইল্ড সোলজার অর্গানাইজেশন সুস্পষ্টভাবে মিয়ানমারের ওপর শিশুদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া ও সেনাবাহিনীতে শিশুযোদ্ধাদের কাজে লাগানোর অভিযোগ করে আসছে। কিন্তু মিয়ানমার তা গায়েই লাগায়নি।

 

অস্ত্রভাণ্ডার

 

মিয়ানমারের হাতে যেসব মেইন বেটল ট্যাংক তার অধিকাংশই চীনের কাছ থেকে কেনা। এমটিবি-২০০০, টি-৭২এস, টাইপ-৬৯-টু উল্লেখযোগ্য। সাঁজোয়া যানের মধ্যে রয়েছে, টাইপ-৮৫, এমটি-এলবি, প্যানহার্ড এএমএল। ভারত থেকে তারা এনেছে মাইন প্রটেক্টেড এপিসি।

 

মিয়ানমারের এয়ার ফোর্সে যুদ্ধে কার্যকরী হেলিকপ্টার বিক্রি করেছে রাশিয়া, পোল্যান্ড ও ইউক্রেন। রাশিয়ার তৈরি মিলমি-২৪ মিয়ানমারের অন্যতম অ্যাটাক হেলিকপ্টার। এ ছাড়াও তাদের হাতে রয়েছে পোল্যান্ডের মিলমি-২, যুক্তরাষ্ট্রের বেল ইউএইচ-১, ফ্রান্সের অ্যালাউট-৩ মডেলে হেলিকপ্টার।

 

 

মাটি থেকে আকাশে ছোড়ার উপযুক্ত মাঝারি পাল্লার মিসাইল মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর উল্লেখযোগ্য যুদ্ধাস্ত্র। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মিসাইল রয়েছে তাদের কাছে। এ ছাড়া রাশিয়া বিভিন্ন মডেলের মিসাইল বিক্রি করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিক্রি করা ওয়াগাসন-৬ মিসাইলটির রেঞ্জ ৭০০ কিলোমিটার।

 

 

কায়ান সিথাহ, অং জিয়া, জিয়াংহু-টু ক্লাসের ফ্রিগেড দিয়ে সাঁজানো হয়েছে মিয়ানমারের নৌবাহিনী। সমুদ্রের আকাশে তাদের রয়েছে ইউরোকপ্টার ডফিন। স্টেলথ শিপ, হক্সিন ক্লাসের এফএসসি মিসাইল সিস্টেমবাহী রণতরীসহ বেশির ভাগ যুদ্ধজাহাজ মিয়ানমারের ডকইয়ার্ডেই তৈরি।

 

 

মিয়ানমারের এয়ার ফোর্সে রয়েছে আধুনিক মডেলের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার। রাশিয়ার মিগ-২৯, চীনের চেংদু চি-৭ যুদ্ধবিমানের শিরোমণি। তবে চীনের নানচাং কিউ-৫ মডেলের ২১ যুদ্ধবিমান সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের আকাশশক্তি বাড়িয়েছে। আরও আছে শেনইয়াং জি-৬ যা মিগ-১৯ এর আধুনিক রূপ।

 

 

কামান ও গোলাবারুদেও উন্নয়ন ঘটিয়েছে মিয়ানমার। ১০৫, ১০৭, ১২২ ও ১৩০, ১৪০ ও ১৫৫ মিলিমিটারের কামানের বিভিন্ন  মডেল তারা সামরিক বাহিনীতে যোগ করেছে। টাইপ-৬৩ মডেলের রকেট লাঞ্চার কেনা হয়েছে চীন থেকে। ১৫৫ মিলিমিটারে ৪৫ ক্যালিবার কামান কিনেছে ইসরায়েল থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *