আত্রাই নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন, ৩০ গ্রাম প্লাবিত

Slider গ্রাম বাংলা

Naogaon_Flood_Picture_14-08-2017_1

গত তিন দিনের একটানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নওগাঁর আত্রাই ও মান্দায় আত্রাই নদীর পানি হু-হু করে বাড়ছে। গত ২৬ ঘণ্টায় নদীর পানি বেড়ে এখন বিপদ সীমার ১০৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ইতোমধ্যে ৫টি বেড়ি বাঁধ ভেঙে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আর সাত শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

এদিকে, শিব নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মান্দার ঠাকুরমান্দা যাতায়াতের রাস্তা তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে মাঠের আমন ধানের ক্ষেত। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তিন নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব নদীর বাঁধের ভেতরে থাকা অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার।

টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে গত শুক্রবার রাত থেকে আত্রাই, ফকির্নি ও শিবনদের পানি বাড়তে শুরু থাকে। শনিবার দুপুরে এসব নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত এসব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সকালে আত্রাই নদীর বাইবুল্যা নামক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫০ পরিবার এবং পারনুরুল্লাবাদ উত্তরপাড়ায় আরেকটি বেড়িবাঁধ ভেঙে বেশ কয়েকটি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দুর্গত মানুষরা গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বেড়ি বাঁধ ভেঙে এসব এলাকার ফসলের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

এদিকে পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে আত্রাই নদীর শহরবাড়ী ভাংগীপাড়া, কয়লাবাড়ি, চকরামপুর, চকবালু, শামুকখোল হাতিয়ানদহ, প্রসাদপুর খেয়াঘাট, কামারকুড়ি, কালিকাপুর বাজার, কয়াপাড়া বেড়িবাঁধ, পারলক্ষ্মীরামপুর, মদনচক, নান্নুরঘাট ও আয়াপুর পাগলীতলা এবং ফকির্নি নদীর নুরুল্লাবাদ মন্ডলপাড়া, চকহরি নারায়ন, নিখিরাপাড়া, গোয়ালমান্দা ও করাতিপাড়া। এছাড়া শিবনদের বাদলঘাটা, কোঁচড়া, দুর্গাপুর, শগুনিয়া, ডেবরা, বলাক্ষেত্র, শিমলাদহ, বাঁকাপুর, শংকরপুর, রুয়াই, ভাতহন্ডা এলাকার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো টিকিয়ে রাখতে স্বেচ্ছাশ্রমে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছে গ্রাম পুলিশসহ স্থানীয়রা।

অন্যদি,কে ফকির্নি নদীর বামতীর নুরুল্লাবাদ মন্ডলপাড়া নামক স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয়রা বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বাঁধটি টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। বাঁধটি ভেঙে গেলে নুরুল্লাবাদ, কশব ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে।

মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম প্রামানিক জানান, বন্যায় ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির পরিসংখ্যান নিরূপনে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। তালিকা হাতে পেলেই ক্ষয়-ক্ষতির সঠিক তথ্য জানা যাবে।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুরুজ্জামান বলেন, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পানিবন্দী পরিবারগুলোর প্রাথমিক তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *