ওমেরা পেট্রোলিয়ামের বিরুদ্ধে ৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ 

Slider জাতীয়

ওমেরা পেট্রোলিয়ামের বিরুদ্ধে ৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব  ফাঁকির অভিযোগ   
ওমেরা পেট্রোলিয়ামের বিরুদ্ধে ৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ  

গ্যাস সিলিন্ডার আমদানির বিপরীতে প্রযোজ্য অগ্রিম ট্রেড ভ্যাট (এটিভি) বাবদ ৩৬ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০১৪ সালের শুরু থেকে ৪০০ চালানের মাধ্যমে আনা খালি গ্যাস সিলিন্ডারে প্রতিষ্ঠানটি এ রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট খুলনার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। এ ব্যাপারে নির্দেশনা চেয়ে ৯ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠিও পাঠিয়েছে খুলনা কমিশনারেট।

খুলনা কমিশনারেট থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, খুলনা অঞ্চলের আওতাধীন এলপি গ্যাস উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিরীক্ষাকালে ওমেরা পেট্রোলিয়ামের বিরুদ্ধে সঠিকভাবে ভ্যাট পরিশোধ না করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মংলা কাস্টমসের মাধ্যমে ৭৩১১০০২০ এইচএস কোড ব্যবহার করে আমদানি করা পণ্য খালাসে ওমেরা সব এটিভি প্রদান করেছে। তবে একই এইচএস কোড ব্যবহার করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের মাধ্যমে বিভিন্ন নিবন্ধন নম্বর দিয়ে আমদানি করা গ্যাস সিলিন্ডারের বিপরীতে এটিভি প্রদান করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৪ সালের ১ মার্চ থেকে ৪০০টি চালানের মাধ্যমে আমদানিকৃত এসব খালি সিলিন্ডারে বকেয়া রাজস্বের পরিমাণ ৩৬ কোটি ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

যোগাযোগ করা হলে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট খুলনার কমিশনার কেএম অহিদুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ২০১২ সালে জারি করা এসআরওর আওতায় খালি গ্যাস সিলিন্ডার আমদানিতে ৪ শতাংশ হারে অগ্রিম ভ্যাট আদায়ের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী মংলা কাস্টমসের মাধ্যমে আমদানিকৃত সব সিলিন্ডারে সঠিকভাবে ভ্যাট আদায় হয়েছে। তবে ওমেরাসহ কয়েকটি কোম্পানি চট্টগ্রাম কাস্টমসের মাধ্যমে আমদানি বেশকিছু সিলিন্ডারে ভ্যাট পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে জানানো হলে তারা ভ্যাট আইনের কিছু জটিলতার কথা উপস্থাপন করেছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য এনবিআরের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এনবিআরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

এনবিআর সূত্র বলছে, খালি গ্যাস সিলিন্ডার আমদানিতে এটিভি প্রযোজ্য হবে কিনা, তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট থেকে ২০১৪ সালে চিঠি দেয়া হয়। ওই বছরের ২৮ জুলাই সব ধরনের খালি গ্যাস সিলিন্ডার আমদানিতে ৪ শতাংশ হারে এটিভি কর্তন করা হবে বলে জানিয়ে দেয় এনবিআর। তবে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে ২০১২ সালে আমদানি-সংক্রান্ত একটি এসআরওর কথা জানিয়ে ভ্যাট পরিশোধ না করেই পণ্য খালাস করা হয়েছে। ওই এসআরওতে স্থানীয় নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের উত্পাদন পর্যায়ে মূলধনি যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম ভ্যাট মওকুফের ঘোষণা থাকলেও পেট্রোলিয়াম পদার্থ বা খালি গ্যাস সিলিন্ডার আমদানিতে এ সুবিধা দেয়া হয়নি। তবে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভুল বুঝিয়ে চট্টগ্রাম দিয়ে বেশ কয়েকটি চালানে অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ভ্যাট বিভাগের অনুসন্ধানে বিষয়টি উঠে আসায় বকেয়া রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের নির্দেশনা চেয়ে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট থেকে চিঠি এসেছে। এরই মধ্যে বিষয়টি যাচাই শেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এনবিআরের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এনবিআরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে বিষয়টি ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে বলে ধারণা করছে এনবিআর। যদি সেটা হয়, তাহলে জরিমানাসহ বকেয়া রাজস্ব আদায় করা হবে। আর সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউজের অজ্ঞাতসারে হলে শুধু বকেয়া আদায়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সবকিছু নির্ভর করবে চূড়ান্ত যাচাইয়ের ওপর।

খালি গ্যাস সিলিন্ডার আমদানিতে ভ্যাট কম দেয়ার অভিযোগের বিষয়টি এখনো তাদের অবহিত করা হয়নি বলে জানান ওমেরা পেট্রোলিয়ামের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আক্তার হোসেন সান্নামাত। তিনি বলেন, সাধারণত কাস্টমস ও ভ্যাটের সব আইন মেনেই বন্দর থেকে পণ্য খালাস করা হয়। কোনো ভুল-ভ্রান্তির মাধ্যমে এমনটি হলে এনবিআরের আনুষ্ঠানিক চিঠির পর তা জানা যাবে। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে আইনবহির্ভূত কিছু করা হবে না।

ওমেরা পেট্রোলিয়াম দেশে বেসরকারি পর্যায়ে এলপিজি সরবরাহে শীর্ষ কোম্পানি এমজেএল বাংলাদেশের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুসারে, পূর্ববর্তী ১৮ মাসে ২৩৮ কোটি টাকার গ্যাস ও সিলিন্ডার বিক্রি করে ওমেরা পেট্রোলিয়াম। ওমেরা পেট্রোলিয়ামের মোট শেয়ারের মধ্যে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ আছে এমজেএল বাংলাদেশের কাছে। ২৫ শতাংশ বি বি এনার্জি (এশিয়া) লিমিটেডের ও বাকি ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক একটি কোম্পানির হাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *