লালমনিরহাটে বন্যার পানি ২৫ সে:মি: উপরে।

Slider গ্রাম বাংলা

received_720004358185475

এম এ কাহার বকুল;
লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলায় গত ৫ দিনের টানা ভারী বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ২৫ সেঃমিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে।
শনিবার (১২আগষ্ট) সকাল ১০টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে ৫২দশমিক ৬৫ সেঃমিঃ তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। যা স্বাভাবিকের (৫২দশমিক ৪০) চেয়ে ২৫ সেন্টিমিটার উপরে। ব্যারাজের সবগুলো দরজা খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে।
সেচ প্রকল্পের বন্যা পুর্ভাবাস কেন্দ্র জানান, কয়েক দিনের ভারি বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার দুপুরে পানি প্রবাহ বিপদ সীমা ছুই ছুই করলেও রাতে আরো বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমা অতিক্রম করে। শনিবার (১২আগষ্ট) সকাল ৬টায় এ পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার। ৩ ঘন্টা পর সকাল ১০ টায়ও একই পরিমান রেকর্ড করা হয়।
এ কারনে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার তিস্তার তীরবর্তি নিম্নাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৪০ হাজারের ও বেশি পরিবার। বৃষ্টি অব্যহত থাকলে বন্যা পরিস্থিত অবনতি ঘটতে পারে বলেও জানান তিস্তা ব্যারাজের উপ-সহকারী (পানি পরিমাপক) প্রকৌশলী আমিনুর রশীদ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ দিনের ভারি বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তার তীরবর্তি এলাকায় দেখা দিয়েছে বন্যা। নদী ভরে যাওয়ায় বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এরই মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ী, সিঙ্গীমারী, পাটিকাপাড়া, সিন্দুর্না, কালীগঞ্জের কাকিনা, তুষভান্ডার, চন্দ্রপুর, চাপারহাট আদিতমারীর মহিষখোচা, দুর্গাপুর, পলাশী, লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা, রাজপুর, মোঘলহাট কুলাঘাট ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন তিস্তা নদী বিধৌত হওয়ায় কিছু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
ফলে এসব এলাকার প্রায় ৪০ হাজারের ও বেশি পরিবারের জনজীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন লোকজন। পানি নিচে ডুবে গেছে সদ্য রোপন করা কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ক্ষেত, বিনষ্ট হয়েছে সবজি ও মরিচ ক্ষেত। পানির নিচে তলিয়ে গেছে পুকুর।
হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না এলাকার বাদল হোসেন ও মফিজ উদ্দিন জানান, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীর আশপাশের লোকজনের বাড়ীতে পানি ঢুকে বন্যা দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মজিত হোসেন জানান, অব্যহত ভারি বর্ষন ও উজানের ঢলে তার এলাকায় কয়েক শত পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি বন্দিদের জন্য শুকনো খাবার বিতরণের দাবি জানান তিনি।
গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমান জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য তিস্তা পাড়ের বসবাসরত লোকজনকে সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে খবর পাঠানো হয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসার ফেরদৌস আলম জানান, বন্যার্তদের জন্য মজুদ রাখা ১৫ মেঃ টন জিআর চাল পানিবন্দিদের মাঝে বিতরন শুরু হয়েছে।
আদিতমারী উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসার মফিজুল হক জানান, বর্নাত্যদের জন্য ২০মেঃ টন চাল মজুদ রয়েছে। সেখান থেকে বর্নাত্যদের মাঝে খুব শীঘ্রই বিতরন শুরু করা হবে।
লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনবাসন কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার সুজা উদ দৌলা জানান, বন্যা কবলিত উপজেলা গুলোতে আগাম মজুদ রয়েছে ত্রাণ। সেখান থেকে বিতরন করা হচ্ছে। এরপরও জেলায় মজুদ রয়েছে ২০২ মেঃ টন জিআর চাল ও সাড়ে ৪ লাখ টাকা। প্রয়োজন হলে আরও বরাদ্ধ নেয়া হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক বন্যার্তদের খোজ খবর নেয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান, বৃষ্টি অব্যহত থাকলে বন্যার উন্নতির সম্ভবনা নেই। বৃষ্টি থেমে গেলে বন্যা পরিস্থিতর উন্নতি ঘটতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *